শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

ফ্রিজ ছাড়া মাংস সংরক্ষণ করবেন যেভাবে



মাংস একটি প্রথম শ্রেণির ও উচ্চমানসম্পন্ন আমিষজাতীয় খাবার, যাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং জিংক, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম, ফসফরাস প্রভৃতির মতো মিনারেল আছে। যুগ যুগ ধরে মাংস খাদ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিন্তু রাসায়নিক ও এনজাইমেটিক গঠনগত কারণে বাইরের আর্দ্রতা, আলো, তাপ, জীবাণু, অক্সিজেন প্রভৃতির প্রভাবে পচনে সহায়তাকারী ব্যাকটেরিয়া, ইস্ট, মোল্ডের মতো মাইক্রো অর্গানিজমের সংক্রমণে মাংস খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়ে, যা থেকে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যবাহিত রোগ তৈরি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

এদিকে সামনে কোরবানি ঈদ। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে ঘরে ঘরে প্রচুর কাঁচা মাংস থাকবে। তাই প্রয়োজন সঠিক পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষণ করা, যাতে মাংস তাজা, স্বাস্থ্যকর ও ব্যাকটেরিয়ামুক্ত অবস্থায় খাওয়ার উপযোগী থাকে।

মাংস সংরক্ষণের মূল উদ্দেশ্য হলো-
• মাংসকে জীবাণুমুক্ত রাখা
• মাংসের স্বাদ ও গুণগত মান যতটা সম্ভব অক্ষুণ্ন রাখা
• মাংসের পচন রোধ করা
• মাংস দ্বারা খাদ্যবাহিত রোগ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করে আর্থিক ক্ষতি কমানো ।

মানুষ সেই প্রাচীনকাল থেকে দেশ-বিদেশে, ঘরে ও বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন উপায়ে মাংস সংরক্ষণ করার কৌশল ব্যবহার করে আসছে, যা এখন আরও উন্নত, সহজ ও যুগোপযোগী হয়েছে। তবে এখানে ফ্রিজ ছাড়া সেই প্রাচীন পদ্ধতির মাংস সংরক্ষণের কয়েকটি পদ্ধতি তুলে ধরা হলো।

চর্বিতে ডুবিয়ে

মাংস জ্বাল দিয়ে তারপর চর্বিতে ডুবিয়ে সংরক্ষণ করতে পারেন। এজন্য প্রথমে মাংস থেকে চর্বি ছাড়িয়ে মাঝারি সাইজে কেটে ধুয়ে সব পানি ঝরিয়ে নিন। একটি পাত্রে মাংস ও চর্বি নিন। মাংসের চেয়ে চর্বির পরিমাণ বেশি হবে। যাতে জ্বাল দিলে মাংস আধা ইঞ্চি চর্বির নিচে ডুবে থাকে। এবার মাংসের সঙ্গে পরিমাণমতো লবণ, গরম মসলা ও তেজপাতা দিয়ে বেশি আঁচে জ্বাল দিন। এবার দেখুন মাংসে পানি আছে কি না। পানি থাকলে জ্বাল দিয়ে শুকিয়ে ফেলুন। মাংস চর্বিতে ডুবে থাকলে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে ঢেকে রাখুন। পাত্রটি যাতে বেশি গরম জায়গায় না থাকে খেয়াল রাখুন। প্রথম সপ্তাহে দুবার এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে অন্তত একবার জ্বাল দিলেই হবে। এভাবে ১৫ দিন মাংস সংরক্ষণ করা যাবে। দেখা যায় ঈদের পর টানা মাংস খাওয়া হয়। তাই অনেকেই জ্বাল দিয়ে এই পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষণ করতে পারেন। এতে ফ্রিজের ওপর চাপ কমবে।

শুকিয়ে

মাংস থেকে চর্বি ছাড়িয়ে কেটে অল্প লবণ ও হলুদ দিয়ে জ্বাল দিন। তবে বেশি সিদ্ধ করা যাবে না। এরপর পানি শুকিয়ে ঠাণ্ডা করুন। জিআই তারে (গুণা) লম্বা মালার মতো করে গেঁথে ৬-৭ দিন রোদে শুকাতে দিন। বৃষ্টির দিনে অনেকে চুলার ওপরেও মাংস শুকাতে দেয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, মাংস যাতে বেশিক্ষণ ছায়ায় না থাকে। এতে মাংসে ফাঙ্গাস পরতে পারে। ভালোকরে শুকানোর পর এয়ারটাইট পাত্রে রেখে সংরক্ষণ করুন, যাতে বাতাস না ঢোকে। মাঝেমধ্যে মাংস বের করে রোদে শুকিয়ে নিতে পারেন। এভাবে ৬ মাস পর্যন্ত মাংস সংরক্ষণ করা যায়। রান্নার আগে মাংস ২-৩ ঘণ্টা ভিজিয়ে রান্না করুন।

জ্বাল দিয়ে

রান্না করা মাংস এক সপ্তাহ পর্যন্ত ফ্রিজের বাইরেই সংরক্ষণ করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে রান্নার পর মাংসে ঝোল থাকবে না, তেল থাকবে। আর রান্নার পর পাত্রটি ঠাণ্ডা জায়গায় রাখতে হবে। বেশি গরমে থাকলে মাংস নষ্ট হয়ে যাবে। চুলা বা রোদের তাপ থেকে দূরে রাখুন। চাইলে ফ্যানের বাতাসে রেখে দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে মাংস দিনে অন্তত একবার জ্বাল দিন। জ্বাল দেওয়ার সময় বেশি নড়াচড়া না করাই ভালো। খেয়াল রাখতে হবে, তলানিতে যেন না লেগে যায়। মাংসের টুকরা একটু বড় রাখবেন, নয়তো মাংস দ্রুত গলে যাবে। মনে রাখবেন মাংসে শুধু তেল থাকবে, পানি না।

মাংসের নোনা

মাংসে লবণ দিয়ে ৩ থেকে ৪ মাস সংরক্ষণ করা যায়। এর জন্য সাধারণ লবণ নয়, সুপার শপ থেকে কিউরিং সল্ট কিনে নিন। পুরো মাংসের টুকরা লবণ দিয়ে মেখে এয়ারটাইট ব্যাগে ৩-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এক মাসের জন্য রেখে দিন। ফ্রিজের নরমালে রাখতে পারেন। এটি সাধারণত শীতের দেশের জন্য বেশি উপযোগী।

ধোঁয়ায় সংরক্ষণ

ধোঁয়া দিয়ে মাংস সংরক্ষণ প্রাচীন পদ্ধতিগুলোর মধ্যে একটি। ধোঁয়ায় দেওয়ার আগে মাংস কিছুটা লবণ দিয়ে মাখিয়ে নিতে হয়। এরপর গ্রিলের মতো করে ধোঁয়ায় মাংস ঝলসে নিন। এ ক্ষেত্রে তাপমাত্রা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ১৪৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটে ৭ ঘণ্টা অথবা ১৫৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটে ৪ ঘণ্টা রেখে দিন। এর বেশি তাপমাত্রায় নয়। বাণিজ্যিকভাবে অনেকে গ্যাসের ব্যবহার করে, আপনি চাইলে কাঠ কিংবা কয়লা ব্যবহার করতে পারেন। ঝলসানো মাংস এয়ারটাইপ বক্সে রেখে দিন। এই মাংস ১ থেকে ২ মাস ভালো থাকবে।

প্রেসার ক্যানিং

পৃথিবীজুড়ে ফ্রিজ ছাড়া মাংস সংরক্ষণের সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে প্রেসার ক্যানিং। তবে এ জন্য আপনার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায় বা দেখা যায়—এমন প্রেসার কুকার থাকতে হবে। লাগবে পরিষ্কার শুকনা কাচের বয়াম। প্রথমে পরিষ্কার কাচের জারে মাংস কেটে রাখুন। জারে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি পানি দিন। এরপর মাংসের ওপরে এক চিমটি লবণ দিয়ে জার ভালো করে লাগিয়ে রাখুন। জারটি প্রেসার কুকারে দিয়ে নির্দিষ্ট তাপমাত্রার জন্য অপেক্ষা করুন। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ১০ থেকে ২০ মিনিট রেখে চুলা বন্ধ করে দিন। পুরোপুরি ঠাণ্ডা হলেই প্রেসার কুকার খুলে বয়াম বের করুন। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এই জার রাখলে এক বছরের বেশি সময় ধরে মাংস ভালো থাকবে। তবে বাড়িতে এই পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষণ করার আগে সতর্ক থাকুন, অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ নিন।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!