শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

আমার বাতিঘর মহিউদ্দিন শীরু স্মরণে কিছুকথা॥ মো. জিল্লুর রহমান জিলু



মহিউদ্দিন শীরু (২৫ জুলাই ১৯৫৫ – ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯), ছবি সংগ্রহ লেখক

‘আসলে জানে না কেউ/ কার হৃদয়ে কে তোলে ঢেউ/ কার জন্য কে দাঁড়ায় রাজপথে/ কার জীবনে কে আসে মাঝপথে।’

মহিউদ্দিন শীরু, বালাগঞ্জ তথা বৃহত্তর সিলেটের কৃতি সন্তান, সাংবাদিকতা জগতে ‘গুরুজন’ খ্যাত পরম শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। যার স্নেহ-ভালোবাসার কাছে আমি চিরঋণী। তাঁর ব্যক্তিত্ব, সততা এবং সাদাসিধে, অমায়িক জীবনযাপন আমার চলার পথের পাথেয়। আমি মনে-প্রাণে তাঁর একজন ভক্ত, গুণমুগ্ধ। আমার জীবনযাপনে, চলতি পথে অনেক সীমাবদ্ধতা, অযোগ্যতার মধ্যেও আমি তাঁকে অনুস্মরণ এবং অনুকরণ করে চলি। সুরমা মার্কেট থেকে বন্দরবাজার, আম্বরখানা, ধোপাদীঘির পার, সুবিদবাজার প্রভৃতি এলাকায় তাঁর সাথে ছুটে চলার অনেক স্মৃতি এখনও অমলিন। ২০০৯ সালের আগস্ট মাসে (সম্ভবপর ১৬আগস্ট) বালাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের নবীনবরণ অনুষ্ঠান শেষে এক সাথে ফিরে আসা, এটাই তাঁর সাথে শেষ ভ্রমণ। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা নানা মৌসুমের নানা স্মৃতি এখনও অমলিন। এসব আমার একান্ত সম্বল এবং গৌরবের অংশ বিশেষ।

আমার সাংবাদিকতা জীবনের প্রথম দিকে প্রায় এক যুগ আমি তাঁর সান্নিধ্য ও স্নেহ লাভ করেছি। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেও মোবাইল ফোনে কল দিয়ে তিনি আমার কুশল জানতে চেয়েছেন। আজ আমি অভিভাবকহীন, একলা পথিক। তবুও, তাঁর নীতি, আদর্শকে লালন করে সাংবাদিকতার মহান পেশাকে সমুন্নত রাখতে আমি আমরণ অঙ্গীকারবদ্ধ।

মহান আল্লাহপাকের নির্দেশেই জীবন এবং মৃত্যু। এ নিয়মের বাইরে আমাদের কারো বেঁচে থাকা বা মৃত্যুবরণ করার সুযোগ নেই। চিরন্তন নিয়মের নিয়ম মেনেই মহিউদ্দিন শীরু মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি আজ বেঁচে নেই। তবুও, মহিউদ্দিন শীরু তাঁর স্বল্পদীর্ঘ জীবন এবং কর্মের মাধ্যমে একজন অবিস্মরণীয় ব্যক্তি হিসেবে আমাদের কাছে বেঁচে থাকবেন অনন্তদিন, অনন্তকাল।

তিনি একাধারে কবি, গীতিকার, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, গবেষক, শিক্ষাবিদ এবং একজন আদর্শ রাজনীতিক ছিলেন। তিনি সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, সিলেট বেতারের গীতিকার, সাপ্তাহিক গ্রাম সুরমা, দৈনিক সুদিন পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ছিলেন। মহিউদ্দিন শীরু বালাগঞ্জ (সরকারি) ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ছিলেন। দেশ ও জাতির সেবায় নিবেদিত এসব অবদান কোনোদিন হারিয়ে যাবার নয়।

আজ তাঁর ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৯ সালের ২৫সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে তিনি আমাদের কাছ থেকে চির বিদায় নিয়েছেন। তাঁর জন্ম ২৫  জুলাই ১৯৫৫ সালে। তাঁর আদি নিবাস আমাদের বালাগঞ্জ উপজেলার দেওয়ান বাজার ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী জামালপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আজির উদ্দিন আহমদ, মায়ের নাম কমরুন্নেসা খাতুন। মহিউদ্দিন শীরু ১৯৭৩ সাল থেকে আমৃত্যু সংবাদপত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। সিলেটের প্রাচীনতম পত্রিকা সাপ্তাহিক যুগভেরীর মাধ্যমে তাঁর সাংবাদিকতার যাত্রা শুরু। তিনি ১৯৯১-৯২ এবং ১৯৯৩-৯৪ সালে দু’দফা সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮২ সাল থেকে তিনি দীর্ঘদিন দৈনিক বাংলার বাণীর সিলেট প্রতিনিধি ছিলেন। তাঁর সম্পাদিত দৈনিক সুদিন ও সাপ্তাহিক গ্রাম সুরমার কথা আগেই বলা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সুরমা, সাপ্তাহিক পূর্বদেশ, সাপ্তাহিক পত্রিকার সিলেট প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দৈনিক বাংলার বাণীর বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে ১৯৮৬, ১৯৯১ এবং ১৯৯৩ সালে যুক্তরাজ্য ভ্রমণ করেন।

মহিউদ্দিন শীরু ১৯৭০ সালে বালাগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী দেওয়ান আব্দুর রহিম হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ১৯৭৩ সালে মদন মোহন কলেজ থেকে এইচএসসি, ১৯৭৬ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে বিএ এবং ১৯৭৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি সাপ্তাহিক যুগভেরীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সিলেটের শতবর্ষের সাংবাদিকতা, প্রবাসে বালাগঞ্জবাসী, পাখির স্বজন নেই, ক্লান্ত রাতের ধ্রবতারা প্রভৃতি অমর গবেষণা গ্রন্থ ও কাব্যগ্রন্থ রয়েছে।

মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী হাসিনা বেগম চৌধুরী, মেয়ে মাশরুবা মালিহা অনি এবং পুত্র ওয়াজিহ আহমেদ অমুুসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

আজকের এই দিনে গভীর শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার সাথে তাঁকে স্মরণ করছি। আমি প্রাণভরে দোয়া করি মহান আল্লাহপাক তাঁকে জান্নাতের চিরশান্তিতে রাখুন, আমিন।

লেখক, সাংবাদিক

মো. জিল্লুর রহমান জিলু, লেখক

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!