শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

বরিশালের বানারীপাড়ায় একই পরিবারে তিন লাশ, পুলিশ বলছে হত্যাকাণ্ড



বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাপুর ইউনিয়নের সলিয়াবাকপুর গ্রামের হাওলাদার বাড়িতে একই রাতে ৩ জনকে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার (৭ ডিসেম্বর) ভোরে ওই বাড়ির কুয়েত প্রবাসী হাফেজ আব্দুর রবের বাসা থেকে তার বৃদ্ধা মা মরিয়ম বেগম (৭৫), স্বরূপকাঠি থেকে বেড়াতে আসা ভগ্নিপতি সাবেক শিক্ষক সফিকুল আলম (৬৫) ও বাড়ির পুকুর থেকে খালাতো ভাই ইউসুফের (২২) হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের রাতে ওই ঘরে সলিয়াবাপুর গ্রামের মৃত নাজির আহম্মেদ হাওলাদারের স্ত্রী মরিয়ম বেগম, তার কুয়েত প্রবাসী ছেলে হাফেজ রবের স্ত্রী মিশরাত জাহান মিশু, দুই শিশু নাতনি, ভায়রা ছেলে ইউসুফ হোসেন, অপর ছেলে হারুনের মেয়ে চাখার সরকারি ফজলুল হক কলেজের এইচএসসি প্রথমবর্ষের ছাত্রী আছিয়া আক্তার ও বেড়াতে আসা মেয়ে জামাতা সফিকুল আলম অবস্থান করছিলেন। এর মধ্য থেকে ৩ জনকে ভোরে মৃত্যু অবস্থায় পাওয়া যায়। তবে ঘরের সবদিকের দরজা-জানালা বন্ধ ছিলো। তবে চিলে কোঠার দরজা খোলা ছিল।

প্রবাসীর স্ত্রী মিশু জানান, তার কক্ষের স্টিলের আলমিরার ড্রয়ার থেকে বেশ কিছু স্বর্ণালঙ্কার ও তিনটি মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওই তিনটি মোবাইলের মধ্যে একটি তার ও অপর দুটি হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া শাশুড়ি ও ননদ জামাতার। স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইল ফোন নিয়ে গিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি ডাকাতি থেকে হয়েছে এটা প্রমাণের চেষ্টা করা হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

কলেজ ছাত্রী অছিয়া আক্তার জানান, রাতে বিল্ডিংয়ের সব দরজা বন্ধ করে ঘুমানো হলেও ভোরে মূল দরজা ও ছাদের চিলে কোঠার দরজা খোলা পাওয়া যায়। তার এ বক্তব্য থেকে ধারণা করা হচ্ছে শুক্রবার গভীর রাতে দরজা খুলে দিয়ে ঘাতকদের ভিতরে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়া হতে পারে।

ট্রিপল মার্ডারের কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে পারিবারিক বিরোধ ও পরকীয়া প্রেম সংক্রান্ত কোনো বিষয় থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ হত্যাকাণ্ডে প্রবাসীর স্ত্রী মিশরাত জাহান মিশু ও কলেজছাত্রী আছিয়া আক্তারের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এদিকে ওই বিল্ডিংয়ের নির্মাণ শ্রমিক ঝালকাঠির নলছিটির জাকির হোসেনকে সন্দেহজনকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।

অপর একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, হত্যার শিকার হওয়া ভ্যানচালক ইউসুবের প্রায় সপ্তাহ খানেক আগে একটি মোবাইলফোন হারিয়ে যায়। রাজমিস্ত্রী জাকির জ্বিন হাজির করে চুরি হওয়া মোবাইলের সন্ধান দেয়ার কথা বলে সম্প্রতি ওই বাড়িতে ধ্যানে বসে। ওই ধ্যানে বসেই সে প্রবাসী রবের স্ত্রী মিশুকে বলে আপনাকে কেউ যাদু-টোনা করেছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে ফিকির নিতে হবে তাতে ৬ হাজার টাকা খরচ হবে বলেও জানানো হয়। কীভাবে ফিকির দেয়া হবে জানতে চাইলে জাকির জানায়, রাতে ঘরের দরজা খোলা রাখতে হবে।

কলেজছাত্রী আছিয়া আরও জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাতের খাবার (রুটি ও ডিম) খেয়ে একতলা বসত বিল্ডিংয়ের নিজ নিজ কক্ষে তারা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিলো। ফজরের আজানের শব্দ শুনে সে নামাজ পড়ার জন্য ঘুম থেকে জেগে উঠে তার পাশে ঘুমানো দাদী মরিয়ম বেগমকে দেখতে না পেয়ে খুঁজতে গিয়ে সামনে পূর্ব পাশের বেলকনিতে অচেতন অবস্থায় পরে থাকতে দেখেন। এসময় তার ডাকচিৎকার শুনে পাশের কক্ষে থাকা মরিয়ম বেগমের পুত্রবধূ মিশু আসেন তারা দু’জন মিলে মরিয়ম বেগমের নিথর দেহ বেলকনি থেকে তার শয়নকক্ষের খাটের ওপর তোলেন।

আছিয়া আক্তার আরও জানান, দাদীর বিষয়টি ফুফা সফিকুল আলমকে জানাতে তার কক্ষে গেলে দেখতে পান তিনিও তার কক্ষে খাটের ওপর মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন। এরপর বাড়ির অন্যদের ডাকা হলে তারা খোঁজাখুঁজি করে বাড়ির পুকুর থেকে ইউসুফের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে।

খবর পেয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম, বরিশালের অতিরিক্ত ডিআইজি এহেসানউল্লাহ্, বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বিপিপিএম (বার), পুলিশ সুপারের পদোন্নতি পাওয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রকিব, বানারীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শিশির কুমার পাল ও ইনস্পেক্টর (তদন্ত) জাফর আহম্মেদ ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে বরিশাল থেকে র‌্যাব, পিবিআই ও সিআইডির কর্মকর্তারা এসে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বিপিএম (বার) জানান, তিনটি লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে তিনি তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তিনজনের মৃতদেহের নাক ও কান থেকে রক্তক্ষরণ হওয়ায় তাদের বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ কিংবা আঘাত করে হত্যা করা হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও মৃত্যু রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশসহ র‌্যাব, পিবিআই ও সিআইডি সম্মিলিতভাবে কাজ করছে।

বানারীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শিশির কুমার পাল জানান, এ ব্যাপারে থানায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি ও মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহগুলো বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ভোরের কাগজ

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!