বসন্ত আসেই যেন আমাদের হৃদয়ে অকারণ খুশির দোলা দিতে। যেদিকে চোখ যায়, যেন রঙের রায়ট। এদিকে চোখ গেল তো গোধূলিরঙা পলাশ, আরেক দিকে রক্তলাল শিমুল। দখিনের জানালা খুললেই মিষ্টি বাতাস আর সারাদিন নরম কুসুমের মতো রোদ। বাংলাদশের প্রকৃতি প্রেমী পর্যটকরা বসন্তে প্রকৃতির সাঁজের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে ঘুরে বেড়ান দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তাদের একটাই খুঁজা প্রাকৃতিক সাঁজময় চিত্তাকর্ষক একটি জায়গা। পর্যটকদের মন খুশি করার মতো চিত্তাকর্ষক এমন একটি জায়গা হচ্ছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের মানিগাঁও গ্রাম-সংলগ্ন যাদুকাটা নদীর তীর ঘেঁষা বিশাল শিমুল বাগান পরিবেষ্টিত মনোরম জায়গাটি।
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর নিকটবর্তী মানিগাঁও গ্রামে প্রায় ১০০ বিঘারও বেশি জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা এ শিমুল গাছের বাগান। নদীর ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড়, মাঝে মায়ার নদী যাদুকাটা আর এপারে রক্তিম ফুলের সমারোহ, অগুণতি পাখির কলকাকলি। সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে ১০০ বিঘার বেশি জায়গা জুড়ে যাদুকাটা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা এ শিমুল বাগান দেশের সবচেয়ে বড় শিমুল বাগান।
২০০২ সালে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মানিগাঁও গ্রামের যাদুকাটা নদী সংলগ্ন লাউয়ের গড়ে বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ধনাঢ্য ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন নিজের প্রায় ২ হাজার ৪০০ শতক জমিতে সৌখিনতার বসে শিমুল গাছ রোপণের উদ্যোগ নেন। তিনি প্রায় তিন হাজার শিমুল গাছ রোপণ করেন। দিনে দিনে বেড়ে ওঠা শিমুল গাছগুলো এখন হয়ে উঠেছে শিমুল বাগান।
বসন্ত এলে এই শিমুল গাছ ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। ফাগুনের অরুণ আলোয় ফোটে বাগানের শিমুল ফুলগুলো। চোখের তৃষ্ণা মেটাতে টাঙ্গুয়ার হাওর, মেঘলয় পাহাড়ের পাদদেশে ও রূপের নদী যাদুকাটার মধ্যস্থলের বিশাল শিমুল বাগানে ফুটে ওঠা টুকটুকে লাল শিমুল ফুলগুলো দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন শত শত পর্যটক। বসন্তের দুপুরে পাপড়ি মেলে থাকা শিমুলের রক্তিম আভা মন রাঙায় তো বটেই, ঘুম ভাঙায় সৌখিন হৃদয়ের। এ যেনো কল্পনার রঙে সাজানো এক শিমুলের প্রান্তর। ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড়, মাঝে যাদুকাটা নদী আর এপাড়ে শিমুল বন। সব মিলে মিশে গড়ে তুলেছে প্রকৃতির এক অনবদ্য কাব্য।
সিলেট থেকে আসা পর্যটকরা এই প্রতিবেদককে বলেন, আমরা শুধু এই শিমুল বাগানের ছবি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি , তবে বাস্তবে এসে দেখে মনে হচ্ছে দেশের কোথাও বোধহয় এত বড় লাল-রঙের বিশাল শিমুল বাগান আর নেই। এখানে এসে আমাদের অনেক ভালো লাগছে। সময় পেলে আবারো আসার চেষ্টা করব।