শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন



সদ্য প্রয়াত সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ছিলেন এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তুমুল জনপ্রিয় এই নেতাকে সিলেটের জনগণ বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। তিনি ছিলেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের দীর্ঘ সময়কার মেয়র। এর আগে ছিলেন ১৫ বছর পৌরসভার কমিশনার এবং ছিলেন পৌরসভার চেয়ারম্যান ও। ছাত্র রাজনীতি থেকে শহর, নগর ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন দীর্ঘদিন।

সদা হাস্যোজ্জ্বল কামরান মাথায় সাদা টুপি পরতেন, মুখে কালো গোঁফ। চোখে সাদা চশমা পড়া লোকটি ছিলেন সিলেটের মানুষের নয়নমণি। ধীরস্থির প্রকৃতির কামরান সর্বদা মানুষের পাশে ছিলেন। তিনি ছিলেন নগরবাসীর বিপদের আশ্রয়স্থল। এ কারণে ১/১১’র সময় জেলে থেকেও মেয়র নির্বাচিত হন।

বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান ১৯৫১ সালের ১ জানুয়ারি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। সিলেট পাইলট স্কুলে ছাত্ররাজনীতির হাতেখড়ি কামরানের। ছাত্রাবস্থায় ১৯৬৯- এর গণঅভ্যুত্থানের সময় আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথ কাঁপিয়েছেন। এরপর ৭৩-এ সিলেট পৌরসভা নির্বাচনে কমিশনার পদে বিপুল ভোটে জয়ী হন কামরান। তখন তিনি মাত্র উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র। সিসিকে আজ পর্যন্ত এত অল্প বয়সে জনপ্রতিনিধি হতে পারে নি।

সিলেট সিটি করপোরেশন গঠনের পর পৌরসভার চেয়ারম্যান থেকে ভারপ্রাপ্ত মেয়র, এরপর নির্বাচিত মেয়র হিসেবে তার নাম লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে।

১৯৮৯ সালে শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সিলেটের আওয়ামী রাজনীতির শীর্ষ নেতৃত্বে আসেন কামরান। ১৯৯২ সালে এবং ১৯৯৭ সালে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

মহানগর গঠিত হলে ২০০২ সালে প্রথমবারের মত সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ২০০৫ এ সম্মেলনের মাধ্যমে এবং ২০১১ সালে গঠিত কমিটিতে মহানগর আওয়ামী লীগের পুনরায় সভাপতির দায়িত্ব পান।

টানা তিন মেয়াদে দেড় যুগ মহানগর সভাপতির দায়িত্ব পালন করে তবে গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে সভাপতির পদ ছেড়ে দেন কামরান। প্রায় তিন দশক কামরানবিহীন পথচলা শুরু হয় সিলেট আওয়ামী লীগের। ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পদ পাওয়া কামরান বর্তমান কমিটিতেও একই পদে ছিলেন।

এদিকে রাজনীতিবিদ কামরান জনপ্রতিনিধি হিসেবেও ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। ১৯৭৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র থাকাবস্থায় সিলেট পৌরসভার সর্বকনিষ্ঠ কমিশনার হয়ে চমক দেখান জনতার কামরান। সেই থেকে সিলেট পৌরসভার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়েন তিনি।

আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। টানা ১৫ বছর ছিলেন পৌরসভার কমিশনার। মাঝপথে খানিকটা বিরতি ছিল প্রবাসে যাওয়ায়। সেবার নির্বাচন থেকে বিরত ছিলেন। প্রবাস থেকে ফিরেই ১৯৯৫ সালে পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয়। তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান। ২০০৩ সালে প্রথম সিটি নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থীকে হারিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়ে ইতিহাসে নাম লেখান তিনি।

১/১১’র সময়ে দুইবার কারাবরণ করেন কামরান। ২০০৮ সালে কারাগার থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। সর্বশেষ দুটি সিটি নিবার্চনে ক্ষমতাসীন দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন কামরান।

আর করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়ে সোমবার (১৫ জুন) রাত আড়াইটায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ)-এ চিকিৎসাধিন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।

প্রতিবেদন কৃতজ্ঞতা : যুগান্তর

 

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!