পাংথুমাই সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নে অবস্থিত একটি গ্রাম। গ্রামটি মেঘালয় পর্বত শ্রেণির পূর্ব খাসিয়া পাহাড়ের কোলে দাড়িয়ে আছে। পাংথুমাইকে বলা হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রামগুলোর একটি। ছবির মতো সুন্দর, ছিমছাম, নয়নাভিরাম, অনিন্দ্যসুন্দর গ্রামটির অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ‘বড়হিল’ ঝর্ণা। এই ঝর্ণাটি ভৌগলিকভাবে ভারতের অন্তর্গত হলেও পিয়াইন নদীর পাড়ে দাড়িয়ে থেকে খুব সহজে এর রুপ অবলোকন করা যায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিরাট সংখ্যক পর্যটক প্রতিদিন প্রকৃতির এই অপরুপ সৌর্ন্দয স্বচক্ষে অবলোকন করতে এখানে আসেন। উচুঁ পাহাড় থেকে বেয়ে আসা আগ্রাসী জলের ধারা কিংবা চারপাশের সবুজ প্রকৃতির দিকে আপনি শুধু তাকিয়ে থাকলেও নিরাশ হবেন না কোন মতেই। পাশেই ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফের ক্যাম্প। কুল গাছের সারি দ্বারা দুই দেশের সীমান্ত ভাগ করা। এখানে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কোন ক্যাম্প নেই, তাই নিরাপত্তার স্বার্থে সীমানার কাছাকাছি না যাওয়াই ভালো।
![](https://balaganjprotidin.com/files/uploads/2021/03/১২-15.jpg)
পাহাড়ের বুকে শৈল্পিক ঝর্ণা।
পাংথুমাই ভ্রমণের উপযুক্ত সময় : পাংথুমাইয়ের অপরুপ সৌর্ন্দয বিশেষত ঝর্ণা দেখতে যেকোন সময় যেতে পারেন। তবে এপ্রিল হতে অক্টোবর উপযুক্ত সময় হতে পারে কারণ এই সময় বৃষ্টির ছোঁয়ায় প্রকৃতি তার স্বমহিমায় আপনাকে স্বাগত জানাবে।
কিভাবে যাবেন: মূলত সিলেট নগরী হতে জাফলং রোড ধরে গোয়ানঘাট উপজেলা সদরে পৌছাতে হবে। তারপর গোয়াইনঘাটের সালুটিকর অথবা জৈন্তাপুরের সারিঘাট হয়ে আপনার কাক্ষিত গন্ত্যবে পৌঁছাতে পারবেন। গাড়ি থেকে নেমে হাতের বামে গেলেই দেখতে পারবেন অর্পূব সেই জলপ্রপাত।
![](https://balaganjprotidin.com/files/uploads/2021/03/১২-16.jpg)
সবুজের বুকে যেন এক টুকরো সাদা শাড়ি/ পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ ধারা মুগ্ধ করে যে কাউকেই।
কি দেখতে পাবেন : আগেই বলেছি ‘বড়হিল ঝর্ণা বা পাংতুমাই ঝর্ণা’ই এখানকার প্রধান আকর্ষণ। এছাড়াও আপনি পিয়াইন নদীর স্বচ্চ জলে গা ভেজানোর সুযোগ কখনোই হাতছাড়া করবেন না। পাহাড় ঘেঁষা ছোট ছোট আকাঁবাকাঁ রাস্তা এই গ্রামের বৈশিষ্ট্য। গ্রামের শেষে পাহাড়ি গুহা থেকে উচ্ছল ভঙ্গিমায় ছুটে চলেছে আগ্রাসী ঝর্ণার জলরাশি। এই দৃশ্য দেখলে মনে হবে সবুজের বুকে বিছিয়ে রাখা আয়না। মেঠো পথ, বাঁশ বাগান, হাটু জলের নদী পাড়ি দিতেই দেখা মিলবে প্রতাপপুরের তারপর মূল পাংথুমাই গ্রাম। এই গ্রামেই অবস্থিত প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম বিশাল একটি ফুটবল মাঠ। আরো কিছুটা সামনে অগ্রসর হলেই দেখা মিলবে ছোট খাট জঙ্গলের। তারপর ঝর্ণা পাড়ি দিতেই ওপারে ভারত সীমান্ত।
![](https://balaganjprotidin.com/files/uploads/2021/03/১২-38.png)
প্রকৃতি যেন দু’হাত ভরে সাজিয়েছে পাংতুৃমাইকে।
কোথায় খাবেন : এই এলাকায় খাবারের জন্য কিছু রেস্টুরেন্ট আছে। তবে সবচেয়ে ভালো হয় সিলেট শহরের মানসম্মত কোন রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার সঙ্গে নিয়ে গেলে।
কোথায় থাকবেন : পাংথুমাই একটি প্রত্যন্ত গ্রাম, তাই এখানে থাকার তেমন কোন ভালো যায়গা নেই। যেতে আসতে বেশি সময় না লাগার কারণে আপনাকে আর ওখানে থাকার চিন্তা করতে হবে না। তবে পাংথুমাই থেকে কিছুটা দূরে তামাবিল/ জৈন্তাপুরের দিকে বেশ কিছু ভালো মানের রির্সোট আছে। আপনার রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা যদি এইদিকে কোথাও না হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে গোয়ানঘাট উপজেলা সদর অথবা সিলেট শহরে ফিরতে হবে।
সর্তকতা : আপনাকে অবশ্যই পাংতুমাই ভ্রমণে কিছু সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। যেমন-
দলবেঁধে ঘুরা-ফেরা করা উচিত।
এপ্রিল-অক্টোবরে গেলে ছাতা অথবা রেইনকোট সঙ্গে রাখা।
ভারত সীমান্তের একেবারে কাছে না যাওয়া।
সর্বোপরি পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা এবং অনাকাংক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বদা সর্তকতা অবলম্বন করা ইত্যাদি।