/ প্রায় আড়াই শত বছর পূর্বে ল্যাটিন আমেরিকা থেকে আমাদের দেশে আগত পেয়ারা চাষের জন্য চারা রোপণের উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। দ্রুত বর্ধনশীল, সুস্বাদু ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এ ফল চাষের জন্য দেশের প্রায় সব এলাকার জমিই উপযুক্ত। গ্রামাঞ্চলে বাণিজ্যিক ভাবে চাষের পাশাপাশি ঘরের আশ-পাশ ও যত্রতত্র ছাড়াও শহরে বাসা-বাড়ীর আঙ্গিনায়, ছাদে হাফ ড্রামে ও টবে পেয়ারা চাষ করা সম্ভব। উল্লেখ্য, আমাদের দেশে পেয়ারার ভালো ও উল্লেখযোগ্য জাত হচ্ছে- কাজী পেয়ারা, সৈয়দ পেয়ারা, চীনা পেয়ারা, কাঞ্চন নগর ও স্বরূপ কাঠি প্রভৃতি।
/ হলুদ বাংলাদেশে একটি জনপ্রিয় মসলা। সুনিস্কাশিত দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি হলুদ চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় এর ফলন ভালো হয়। হলুদ রোপণের উপযুক্ত সময় হলো, মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। উল্লেখ্য, মসলা ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান, ঔষধ ও প্রসাধন সামগ্রীতে দীর্ঘদিন থেকে হলুদ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বলা বাহুল্য, দেশের মাটি ও আবহাওয়া হলুদ চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
/ সুপারীর বীজ এর জন্য ত্রিশ বছরের কাছাকাছি গাছ নির্বাচন করা ভালো। নির্বাচিত গাছের সুপারী ভালো করে পাকার জন্য ফাল্গুন-চৈত্র মাস পর্যন্ত গাছে রাখা উচিৎ। এ ছাড়া বীজ তলায় লাগানোর আগে তিন দিন খড় বা ঘাস দিয়ে পানিতে ডুবিয়ে রাখলে অঙ্কুরোদগম ভালো হয়।
/ শিকড় হতে পাতা পর্যন্ত উপকারী নারিকেল লোনা আবহাওয়া এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী লোনা মাটিতে (তবে অত্যধিক নয়) ভালো হয়। আমাদের দেশের প্রায় সর্বত্রই নারিকেল উৎপাদিত হয়। চারার জন্য সংগৃহীত নারিকেল বাছাইয়ের সময় গাছের বাৎসরিক ভালো ফলন, বড় আকৃতি এবং কম সময়ে ফলন হয় এমন বিষয়গুলো বিবেচনায় আনতে হবে। চারার জন্য নার্সারীতে বর্ষার আগে নারিকেল লাগাতে হয় এবং নারিকেলের চার ভাগের এক ভাগ মাটির উপরে অনাবৃত রাখতে হয়।
/ যে কোন প্রতিকূল অবস্থা সইতে পারা কুল গাছ যে কোনো মাটিতেই জন্মে এবং প্রতি বছরই ফলন দেয়। বলা বাহুল্য, কুলে যথেষ্ট পুষ্টি রয়েছে এবং বাজারে চাহিদাও প্রচুর। চীনে উৎপত্তি কুলের আমাদের দেশের প্রচুর জাত থাকলেও নারিকেলীকুল, আপেলকুল ও বাউকুল (থাইকুল) উন্নত মানের। এ গুলোর বাণিজ্যিক চাষ দেশে ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অন্যান্য গাছের মতো বর্ষাকালে কুলের চারা রোপণ করা ভালো। উল্লেখ্য ফল সংগ্রহের পর কুল গাছ ছাটাই করা জরুরী।
/ লটকন (সিলেট অঞ্চলে বুবি নামে অভিহিত) বাংলাদেশের একটি সুপরিচিত ফল হলেও অবহেলা-অযত্নে সাধারনতঃ বন জঙ্গলে বেড়ে ওঠে। যদিও বাণিজ্যিকভাবে লটকনের চাষাবাদের সম্ভাবনা প্রচুর। সারা দেশে চাষ হলেও সিলেট, নেত্রকোণা, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী ও গাজীপুরে বেশী হয়। সুনিষ্কাশিত সব ধরনের মাটিতে লটকন চাষ হলেও বেলে দো-আঁশ মাটিতে ভালো হয়। বষ্টির পর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে লটকনের গাছ রোপণের উপযুক্ত সময় হলেও আশ্বিন মাস পর্যন্ত রোপণ করা যায়।
/ গ্রামাঞ্চলে চাষাবাদের পাশাপাশি এখন শহরেও অনেক ফল-মূল, শাক-সবজি ও মসলা চাষাবাদ সম্ভব। বাসা-বাড়ীর ছাদে এবং বারান্দায় যেখানে পর্যাপ্ত আলো বাতাস লাগে সেখানে টবে বা ড্রামে বিলেতী ধনে পাতা, মরিচ, করমচা, পেয়ারা, লেবু, লাউ, সিম, বেগুন প্রভৃতি চাষাবাদের মাধ্যমে শহুরে জীবনে একটু অন্য রকম আনন্দের মাধ্যমে সবারই সময় কাটানো এবং টাকার সাশ্রয়ের পাশাপাশি টাটকা ও নির্ভেজাল ফল-মূল ও শাক সবজি খাওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে টবে বা ড্রামে চাষের জন্য মাটি ও সারের মিশ্রন ভালো ভাবে করতে হবে এবং শুষ্ক মওসুমে মাটি শুকিয়ে যাওয়ার আগেই পানির ব্যবস্থা করতে হবে।
/ সুস্বাদু, সুপাচ্য ও পুষ্টিকর আঙ্গুর ফল চাষাবাদের জন্য, সুনিষ্কাশিত উর্বর দোআঁশ মাটি উপযোগী। আঙ্গুরের কলম/চারা ফেব্রুয়ারী-এপ্রিলে রোপণের উপযুক্ত সময়। বাণিজ্যিক ভাবে চাষের জন্য সারি থেকে সারি দূরত্ব হবে ২.০ মিটার এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ১.৫ মিটার। উল্লেখ্য, স্যাত স্যাতে মাটিতে আঙ্গুর চারার বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এ জন্য গোড়ার মাটি যাতে স্যাত স্যাতে না হয়, সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। পাকার পরই গাছ থেকে আঙ্গুর ফল পাড়তে হয়। আগে-ভাগে পেড়ে নিলে ফল আর পাকে না। ফলে স্বাদ ভালো হয় না।
/ আমাদের দেশীয় একটি সুপরিচিত ফল বেলের চারা বর্ষাকালে রোপণ করতে হয়। তবে বেশী বৃষ্টির সময় রোপণ না করাই ভালো। বাণিজ্যিক চাষাবাদের ক্ষেত্রে বেলের চারা সারি থেকে সারি ৮ মিটার এবং একইভাবে চারা থেকে চারার দূরত্বও হবে ৮ মিটার। আমাদের দেশে প্রায় সব ধরণের মাটিতেই বেলের চাষাবাদ সম্ভব। বছরে একটি পূর্ণ বয়স্ক বেল গাছ থেকে ১৫০-২০০ টি ফল পাওয়া যেতে পারে। উল্লেখ্য, বেলের ফুল আসা থেকে ফল পাকতে প্রায় এক বছর সময় লেগে যায়।
লেখকঃ সম্পাদক- ‘আনোয়ারা’ (শিকড় সন্ধানী অনিয়মিত প্রকাশনা), সিলেট।