শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

আব্দুর রশীদ লুলু

চাষাবাদ বিষয়ক টুকিটাকি-৪



 শাক-সবজি চাষাবাদের জন্য দেশের মাটি ও জলবায়ু খুবই উপযোগী। চাষের ক্ষেত্রে একটু মনোযোগী হলেই দেশের যে কোনো প্রান্তে ফল-মুলের পাশাপাশি শাক-সবজি উৎপাদন সম্ভব। কৃষিবিদরা বলছেন- আমাদের দেশে প্রায় একশত ধরণের শাক-সবজি চাষাবাদ হয়। তবে ভালো ফলনের জন্য উন্নতমানের বীজের পাশাপাশি চাষাবাদে উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারও জরুরী। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সেকেলে পদ্ধতিতে শাক-সবজি চাষাবাদে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় না।

 শাক-সবজি চাষাবাদের জন্য উন্নতমানের চারা উৎপাদন একটি জরুরী বিষয়। ছায়াবিহীন এবং প্রচুর আলো-বাতাস খেলে যায় এমন জায়গা বীজ তলা হিসেবে নির্বাচন/ব্যবহার করা দরকার। অন্যথায় চারা দূর্বল ও লিকলিকে হবে এবং কাঙ্খিত ফলন পাওয়া যাবে না।

 আমাদের দেশে বর্ষাকালে যেখানে-সেখানে অবহেলা-অযত্নে কচু জন্মাতে দেখা যায়। কচুকে খুব অবহেলা করা হলেও পুষ্টিবিজ্ঞানী ও কৃষিবিদরা এটাকে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সবজি হিসেবে অভিহিত করেন। আমাদের দেশে বিভিন্ন জাতের কচু রয়েছে। যেমন- লতিরাজ বা পানি কচু, মান কচু, মুখী কচু, অনি কচু প্রভৃতি। ‘বিলাসী’ নামে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট একটি উচ্চ ফলনশীল মুখী কচুর জাত উদ্ভাবন করেছে। মুখী কচু বাণিজ্যিক ভাবে চাষের জন্য সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৭৫ সে.মি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ৪৫ সে.মি। দো-আঁশ মাটিতে মুখী কচুর ফলন ভালো হয়। লতিরাজ কচু সব মাটিতে হলেও সাধারণত: বেলে মাটিতে ভালো হয়। খনার কথায় আছে- “মানের (কচুর) গোড়ায় ফেল ছাই, তাতেই মান বাড়বে ভাই।”

 মাশরুম অনেক কারণে আমাদের দেশে ক্রমাগত জনপ্রিয় হচ্ছে। যদিও এক সময় এই ছত্রাককে ব্যাঙের ছাতা বলে উপেক্ষা করা হতো। মাশরুমের পাঁচ শতাধিক প্রজাতি থাকলেও গুটি কয়েক মাত্র খাওয়ার উপযোগী। এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো- স্ট্র মাশরুম, কান মাশরুম ও ওয়েস্টার মাশরুম। গ্রীষ্ম ও বর্ষা মওসুমে চাষাবাদের জন্য স্ট্র মাশরুম উপযোগী। উল্লেখ্য, আমাদের দেশে পথে- ঘাটে ও বনে-জঙ্গলে ছাতা আকৃতির যে ছত্রাক জন্মায়, তা বিষাক্ত ও খাওয়ার অনুপযোগী।

 জনপ্রিয় ও অত্যন্ত উপকারী সবজি টমেটো দেশের শীতকালীন আবহাওয়ায় চাষাবাদ অত্যন্ত উপযোগী হলেও এখন প্রায় সারা বছর চাষ সম্ভব। কেননা সারা বছরের চাষাবাদের উপযোগী জাত ইতিমধ্যে উদ্ভাবন করা হয়েছে। টমেটোর জন্য পর্যাপ্ত সূর্যালোক ছাড়াও অপেক্ষাকৃত শুষ্ক জলবায়ু প্রয়োজন। দো-আঁশ মাটিতে টমেটো ভালো হয়। বৃদ্ধির সাথে সাথে টমেটোর সযত্ন পরিচর্যা করতে হবে। মরা ডালপালা ও পাতা ছেঁটে ফেলতে হবে এবং কোন ডাল যাতে মাটিতে লুটিয়ে না পড়ে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। উল্লেখ্য, টমেটো একটু লাল রং ধারণ করলে সংগ্রহ করা ভালো। এতে টমেটোর পুষ্টিমান ও স্বাদ ভালো হয়।

 ভাদ্র মাস ছাড়া সারা বছরই কলা রোপণ করা গেলেও মাঘ মাসের মাঝামাঝি থেকে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি এবং আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি থেকে অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত রোপণের উপযুক্ত সময়। চাষাবাদের জন্য পাতা চিকন, গোড়ার দিক মোটা ও সবল এমন চারা নির্বাচন করা ভালো। আমাদের দেশে প্রায় সব ধরণের মাটিতে কলা হলেও দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি কলা চাষাবাদ ভালো হয়। বাণিজ্যিক ভাবে চাষের ক্ষেত্রে চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ২.০-২.৫ মিটার। উল্লেখ্য, প্রচুর খাদ্য শক্তি সম্পন্ন কলার ৪০-৫০ টি জাত আমাদের দেশে রয়েছে বলে কৃষি বিজ্ঞানীরা মনে করেন।

 আমাদের দেশে সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ফল বাতাবী লেবু (জাম্বুরা) প্রায় সব ধরণের মাটিতে চাষাবাদ সম্ভব হলেও সুনিষ্কাশিত পলি ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে ভালো হয়। বীজ ও কলমের মাধ্যমে বাতাবী লেবু চাষাবাদ করা যায়। বীজ থেকে উৎপাদিত গাছের প্রায়ই মাতৃগুণ বজায় থাকে না। তবে কলমের গাছে মাতৃগুণ বজায় থাকে এবং রোপণের পরবর্তী বছরেই ফল পাওয়া যায়। উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে বীজের গাছ থেকে ২ থেকে ৩ বছরের মাধ্যমে ফলন পাওয়া সম্ভব। সাধারণত: একটি পূর্ণ বয়স্ক গাছ থেকে বছরে ১৫০-৫০০টি ফল পাওয়া যায়।

 কম জায়গায় বেশী ফলন পাওয়া যায় এমন একটা সুপরিচিত সবজি হলো ঢেঁড়শ। ইংরেজীতে যাকে বলা হয়, লেডিস ফিঙ্গার (খধফরবং ঋরহমঁৎব)। ঢেঁড়শের অনেক গুলো জাত রয়েছে। প্রায় সারা বছরই ঢেঁড়শ চাষাবাদ করা যায়। বর্তমানে জনপ্রিয় হাইব্রিড ঢেঁড়শের বীজ রোপণের উপযুক্ত সময় হলো পৌষ মাসের মাঝামাঝি থেকে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত। প্রতি হেক্টরে হাইব্রিড ৩.৭৫ কেজি- ৫ কেজি এবং দেশীয় উন্নত জাতের ঢেঁড়শ বীজ ১০ কেজি-১৫ কেজি রোপণ করতে হয়। বীজ রোপণের সময় সারি থেকে সারির দূরত্ব যেন ৩০-৬০ সেঃ মিঃ এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৩০-৪৫ সেঃমিঃ হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। উল্লেখ্য, ঢেঁড়শের বীজ সরাসরি ক্ষেতে রোপণ করতে হয় এবং সারি করে চাষাবাদ করলে ফলন যেমন ভালো হয়, তেমনি আগাছা দমন ও সার প্রয়োগ তথা পরিচর্যারও সুবিধা হয়।

 এক সময় আমাদের দেশে ফুলের চাষাবাদের গুরুত্ব ছিল না কিন্তু বর্তমানে নানা প্রয়োজনে ফুলের চাষাবাদ ক্রমান্বয়ে গুরুত্ব পাছে। এখন সৌখিনতার পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবেও বিভিন্ন ধরণের ফুল চাষাবাদ হচ্ছে। আভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পাশপাশি ফুল এখন রপ্তানীও হচ্ছে। আমাদের দেশে উৎপাদিত উল্লেখযোগ্য ফুল হচ্ছে- রজনীগন্ধা, গাঁদা, জবা, গোলাপ, জুঁই, চামেলী, হাসনা হেনা প্রভৃতি। গ্রামাঞ্চলে চাষাবাদের পাশাপাশি শহরের সীমিত জায়গায় বাসা-বাড়ীর ছাদে ও বারান্দায় বিভিন্ন ভাবে ফুল চাষ সম্ভব। টবে/ড্রামে ফুল চাষের ক্ষেত্রে মাটি ও সারের মিশ্রণ ভালো ভাবে করতে হবে এবং পর্যাপ্ত আলো-বাতাস খেলে যায় এমন স্থানে টব/ড্রাম রাখতে হবে। বীজ এবং কলম থেকে ফুল চাষাবাদ করা যায়। বিভিন্ন ধরণের ফুল সারা বছরই চাষাবাদ সম্ভব। উল্লেখ্য, উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে বিদেশী অনেক দামী ও দূর্লভ ফুল দেশে সফল চাষাবাদের মাধ্যমে ইতিমধ্যে অনেকেই কৃতিত্ব অর্জন করে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে স্থান করে নিয়েছেন।

লেখকঃ সম্পাদক- ‘আনোয়ারা’ (শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা), সিলেট।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!