শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আব্দুর রশীদ লুলু

চাষাবাদ বিষয়ক টুকিটাকি-৭



 চাষাবাদের ক্ষেত্রে চারা রোপণ একটা জরুরী বিষয়। অনেকেই বিভিন্ন ফল-মূল, শাক-সবজি ও গাছ-পালার চারা পলি ব্যাগে উৎপাদন করেন। আবার অনেকে নার্সারী থেকে চারা কিনে আনেন। কিন্তু রোপণ কৌশল জানার অভাবে প্রায়ই শখের চারা মারা যায়। এ ক্ষেত্রে খুব সাবধানে চারা থেকে পলিব্যাগ অপসারণ করে প্রস্তুত করা নির্দিষ্ট জায়গায় (গর্তে ) চারার গোড়ায় যতটুকু পর্যন্ত মাটি থাকে, ঠিক ততটুকু পুঁতে দিতে হবে। বিশেষ করে পেঁপের চারার ক্ষেত্রে এ বিষয় খুব সাবধান হতে হবে।

 সুস্বাদু, রোগ প্রতিরোধক, সহজপ্রাচ্য ও জনপ্রিয় সবজি লাউয়ের চাষাবাদে উৎপাদন খরচ নেই বললেই চলে। বাড়ি-ঘরের আনাচে-কানাচে, জমির আইলে, পুকুর ও রাস্তার ধারে এমনকি শহরের বাসা-বাড়ির ছাদে অনায়াসে লাউ চাষাবাদ করা যায়। লাভজনক এই সবজি চাষের জন্য দেশের মাটি ও জলবায়ু খবই উপযোগি। আকার-আকৃতি ও বর্ণ ভেদে দেশে বিভিন্ন জাতের লাউ রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি লাউ-১ উন্নতমানের। লাউ যে কোনো মাটিতেই চাষাবাদ হলেও দো-আঁশ মাটিতে ভালো হয়। বীজ রোপণের উপযুক্ত সময় সেপ্টেম্বর মাস হলেও অক্টোবর পর্যন্ত রোপণ করা যেতে পারে। সাধারণত: বীজ থেকে চারা গজানোর ১০-১৫ দিনের মধ্যে মাচা বা বাউনির ব্যবস্থা করে দিতে হয়। উল্লেখ্য, লাউয়ের চেয়ে তার পাতা ও ডগা অনেক বেশি পুষ্টিকর। এতে ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘সি’ প্রচুর।

 ধারণা করা হয়, অতি প্রাচীনকাল থেকে এ দেশে বিশেষ করে সিলেটে পানের ব্যবহার হয়ে আসছে। সুপারি সহযোগে পান খাওয়া ছাড়াও কবিরাজী/ভেষজ ওষুধে এর ব্যবহার রয়েছে। চাষাবাদে অত্যধিক পরিশ্রম ও ব্যয় সাপেক্ষ পানের ইংরেজী নাম বিট্ল লীফ। বৃষ্টির পানি জমে না এবং বর্ষাকালে পানি ওঠে না এমন উঁচু জমিতে পান চাষ করতে হয়। দো-আঁশ এবং বেলে দো-আঁশ মাটি পান চাষাবাদে উত্তম। দেশে অনেক জাতের পান থাকলেও ভোক্তাদের কাছে মিটা পান ও বাংলা পানের চাহিদা প্রচুর। পান চাষের সুনির্দিষ্ট কোন সময় না থাকলেও অনেকে মনে করেন আশ্বিন-কার্তিক মাস পান চাষের উপযুক্ত সময়। রোপণের জন্য পান গাছের কাটিং ব্যবহার করা হয়। উপযুক্ত ভাবে জমি তৈরীর পর সারি করে তা রোপণ করতে হয়। উল্লেখ্য, পুষ্টি বিজ্ঞানীরা বলছেন, পানের উপযোগিতা ও পুষ্টিগুণ অনেক।

 ডাঁটা একাধারে শাক ও সবজি হিসেবে পরিচিত। ভিটামিন, খনিজ ও আঁশ বহুল ডাঁটার চাষাবাদ খরচ অত্যন্ত কম। এ ছাড়া স্বল্প সময়ে উৎপাদন করা যায়। সারা বছর চাষাবাদ করা গেলেও দেশে শীতের শেষ দিক থেকে ভরা বর্ষার পূর্ব পর্যন্ত কয়েক দফায় চাষাবাদ করা হয়। এ সময় উৎপাদনও ভালো হয়। দেশে সাধারণ মানের অনেকগুলো জাত রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি ডাঁটা-১ একটি উচ্চ ফলনশীল জাত। এ জাতটি বারো মাসই চাষাবাদ করা যায়। বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের জন্য হেক্টর প্রতি ১.০-১.৫ কেজি বীজ লাগে। শুষ্ক মওসুমে ঘন ঘন পানি সেচের মাধ্যমে ডাঁটার উৎকৃষ্ট মানের শাক-সবজি ও অধিক ফলনে অত্যন্ত সহায়ক। উল্লেখ্য, ডাঁটার কান্ড থেকে পাতার পুষ্টিমান অনেক বেশী।

 চাষাবাদে বীজকে বলা হয় প্রথম ও প্রধান উপকরণ। যদিও মাটি, জলবায়ু ও সূর্য্য কিরণ সমান ভাবে দরকারী। তবে এ গুলো আমরা প্রাকৃতিক ভাবে পেয়ে থাকি। কিন্তু বীজকে যত্নে বাছাই, সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বপন করতে হয়। চাষাবাদে উন্নত ও আধুনিক জাতের বীজ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে নিঃসন্দেহে অধিক ফলন পাওয়া যাবে। যা কৃষি ও কৃষকের জন্য সর্বাবস্থায় লাভজনক।

 বিদেশী ফল আঙ্গুর ১৯৯১ সাল থেকে দেশে বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ হচ্ছে। লাল মাটি ছাড়া প্রায় সব ধরণের মাটিতে আঙ্গুরের চাষাবাদ করা যেতে পারে। তবে দো-আঁশ মাটিতে উৎপাদন ভালো হয়। চারা রোপণের উপযুক্ত সময় মার্চ-মে হলেও আগষ্ট পর্যন্ত রোপণ করা যেতে পারে। পৃথিবীতে ১২০০০-১৫০০০ জাত থাকলেও সাধারণত: দেশে তিনটি জাতের আঙ্গুর চাষাবাদ হয়। এগুলো হলো- ব্লাকরুবি, ব্লাকপার্ল ও জ্যাককাউ। আঙ্গুর গাছে বছরে দু’বার (মার্চ ও জুলাই মাসে) ফুল আসে এবং তা ফলে রূপান্তরিত হয়। উল্লেখ্য, দেশে বাণিজ্যিক ভাবে আঙ্গুর চাষাবাদ সফল হওয়ায় এক সময়ের অগ্নিমূল্যের এ ফল এখন সাধারণের ক্রয় ক্ষমতায় এসেছে।

লেখক: সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা), সিলেট।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!