‘মরিতে চাহি না আমি এ সুন্দর ভূবনে।’ আসলেও আমরা সুস্থ সবল অবস্থায় এ পৃথিবীতে দীর্ঘ দিন বাঁচতে চাই। আমরা একে অন্যের জন্য সুস্থ শতায়ু কামনা করি। কিন্তু এমনি এমনি সুস্থ শতায়ু লাভ সম্ভব না। এ জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ে আমাদের অবশ্যই সচেতন হতে হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দূষণমুক্ত পরিবেশে বসবাসের চেষ্টা করতে হবে। শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হবে। ধর্মীয় জীবন যাপন করতে হবে। দুঃশ্চিন্তামুক্ত থাকতে হবে। নির্ভেজাল খাদ্য খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে এবং ক্ষোভ-রাগ অন্তরে পোষে রাখা যাবে না।
পলিথিন স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই স্বাস্থ্য ও পরিবেশের স্বার্থে এ গুলো বর্জন করা আমাদের উচিৎ। পলিথিন পচে না। ফলে এটা মাটির উর্বরতা কমায় (যা কৃষি উৎপাদন হ্রাস করে) ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে পরিবেশ দূষিত করে। অনেকে পলিথিনে করে মাছ, শাক-সবজি ও ফলমূল বহন করেন, এটা ঠিক না। এতে পরিবহনকৃত মাছ, শাক-সবজি ও ফলমূলের গুণগত মান ক্রমান্বয়ে খারাপ হয়। অনেকে ঘরে পলিথিন ব্যাগে ফলমূল ও শাক-সবজি সংরক্ষণ করেন (তুলে রাখেন)। এটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে ফলমূল ও শাক-সবজির গুণগত মানতো কমেই, বরং ক্ষেত্রবিশেষে বিষক্রিয়াও সৃষ্টি করতে পারে। নিতান্ত প্রয়োজনে হলে, শুষ্ক বিস্কুট বা এ জাতীয় কিছু পলিথিন ব্যাগে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
ধুলি, ধোঁয়া ও গ্যাস স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সচেতন ব্যক্তি মাত্রেই এ থেকে দূর থাকা উচিৎ। একই সাথে নিজেদের দ্বারা এসবের মাধ্যমে পরিবেশ যাতে যত কম দূষিত হয়, সে দিকে নজর রাখতে হবে। জনৈক গুণী বলেছেন- “পৃথিবীতে ধুলি, ধোঁয়া ও গ্যাস না থাকলে, মানুষ হাজার বছর বাঁচতো।”
মাছের খামারে (পুকুরে) কৃত্রিম খাদ্য তৈরীর জন্য ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা হয়। গরু মোটা তাজা করণের জন্য খড়-কুটোর সাথে ইউরিয়া সার দেয়া হয়। এ ছাড়া মুড়ি ভাজতেও নাকী ইউরিয়া সার ব্যবহার করা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউরিয়া সার ব্যবহৃত এসব খাওয়া মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অতএব সুস্বাস্থ্যের জন্য খাবার গলাধ:করণের আগে আমাদের একটু ভাবা দরকার।
বাজার- সওদা করতে গিয়ে আমরা অনেক সময় প্রচন্ড রোদে রাখা শাক-সবজি এবং ফলমূল কিনে থাকি। আবার রোদে রাখা চিপস, বিস্কুট, আচার ও বিভিন্ন ধরণের পানীয় বাচ্ছাদের কিনে খেতে দিই কিংবা লোভনীয় এ সব বাচ্ছারা নিজেরাই কিনে খায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোদে পোড়া এসব জিনিসের গুণগত মান যে শুধু কমছে তা নয়, বরং এ গুলো খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বলা দরকার, স্বাস্থ্য সম্মত রাখার জন্য এ গুলোকে অবশ্যই সূর্যালোক থেকে দূরে শুষ্ক ও ঠান্ডা স্থানে রাখতে হবে।
অনেকেই পারিবারিক ভাবে ব্যবহৃত প্লাষ্টিক ও ইলেকট্রনিক দ্রব্যদির বর্জ্য যেখানে-সেখানে ফেলেন, যা স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। অথচ স্বাস্থ্য ও পরিবেশের স্বার্থে এগুলো যেখানে-সেখানে না ফেলে নিজের দায়িত্বে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় জমিয়ে রাখা ভালো। তারপর যাতে পরিবেশের ক্ষতির কারণ না হয় এমন ভাবে তা অপসারণ করা দরকার।
দেশের গ্রামাঞ্চল ও বস্তিতে ব্যবহৃত প্রচলিত চুলায় রান্না স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। অথচ এখনো দেশের জনগোষ্ঠীর শতকরা প্রায় নব্বই ভাগ পরিবার এ ধরণের চুলায় রান্না করেন। প্রচলিত চুলায় রান্নার কাজে সাধারণত: জ্বালানী হিসেবে ডাল-পালা, কাঠ, ঘুটে, খড়-নাড়া, পাতা- লতা ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এ ধরণের অনিরাপদ চুলার বিষাক্ত ধোঁয়ায় পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়। তাপে ও ধোঁয়ায় সরাসরি আক্রান্ত হন রাঁধুনী (তবে পুরুষদেরও রান্না করতে দোষ নেই)। এছাড়া এতে অগ্নিকান্ড সংঘটনেরও আশংকা থাকে। উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ ছাড়াও প্রচলিত চুলায় রান্না ব্যয় সাপেক্ষ। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এ ধরণের চুলায় জ্বালানী পুড়িয়ে যে তাপ শক্তি পাওয়া যায় তার ৫-১৫ শতাংশ মাত্র কাজে লাগে এবং অবশিষ্ট ৮৫-৯৫ শতাংশ অপচয় হয়।
অতএব স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও ব্যয়ের কথা চিন্তা করে আমাদের প্রচলিত চুলার পরিবর্তে উন্নতমানের চুলার বিষয় ভাবতে হবে। আমাদের রাঁধুনী (গৃহিনী)দের সুস্বাস্থ্য প্রদান করতে হবে। উল্লেখ্য, দেশে বিভিন্ন সংস্থা উন্নতমানের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বান্ধব চুলা তৈরীর কলা-কৌশল শেখানোর পাশাপাশি তা সরবরাহও করছে।
রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। একই সাথে তা প্রাকৃতিক জীব বৈচিত্রের জন্যও হুমকী স্বরূপ। অতএব যতদূর সম্ভব রাসায়নিক কীটনাশক পরিহার করা উচিৎ। বছর কয়েক আগে, আমেরিকার হনলুলু প্রদেশে অবস্থিত Research System Institute -এর গবেষকরা এক সেমিনারে জানিয়েছেন পৃথিবী জুড়ে রাসায়নিক কীটনাশকের প্রতিক্রিয়ায় প্রতি বছর দশ লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন এবং এর মারাত্মক প্রতিক্রিয়ায় এ থেকে দশ বারো হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন। অথচ আমাদের বৈজ্ঞানিকরা বলছেন, দেশে উৎপাদিত ভেষজ উদ্ভিদজাত কীটনাশকের বহুল ব্যবহার সম্ভব। যা স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্মত। উল্লেখ্য, রাসায়নিক কীটনাশক আমদানী করতে গিয়ে প্রতি বছর আমাদের প্রচুর অর্থও গুনতে হয়।
লেখক: সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা), সিলেট।