মিষ্টার রিজ ইফতারে নিমন্ত্রণ করলেন ‘শায়খ’কে। অভ্যাগত ‘শায়খ’ তখন তাঁর ফ্যামিলির পাঁচ জনের বহর নিয়ে,আহ্বায়ক মিষ্টার রিজের চার সদস্য পরিবারের ইফতার আয়োজনে অংশ নিলেন। আত্মীয়তার সম্বন্ধ ছাড়াও, শ্রদ্ধা-স্নেহের যথেষ্ট বন্ধন আছে এই দুই স্মার্ট পরিবারের মধ্যে। মিষ্টার রিজের ছেলে জিশ এবং মেয়ে মাারী ‘শায়খ’কে ফুফ ডাকে।
ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসছে। বাহারি ইফতার সাজানোতে জিশের আম্মা তখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাড়াহুড়ো আরো বেশি তিনি এ জন্য করছেন যে,তাঁর পরিকল্পনা ইফতারের অগ্রে, দু’আ-যিকিরের জন্য কিছু সময় আবিষ্কার করা।
সাথে তাঁর মেয়ে ‘মাারী’ও ইফতার তৈরিতে ব্যস্ত।সে, gourmet বার্গার দিয়ে বেশ কয়েক লেয়ার বসিয়ে টাওয়ার বানিয়ে ডেকোরেট করছে।সুরুচিসম্পন্নরা মুখ গহ্বর দিয়েই শুধু খান না বরং তাঁরা সাথে যুগল চোখ দিয়েও খান।সেহেতু সেরকম অনুশীলনও চলে তাঁদের মাঝে।যাতে করে মেনুর পদ,জিহ্বার তীব্র স্বাদের সাথে সাথে যেন চোখ জুড়িয়ে যাওয়া দৃষ্টিনন্দন,নয়নাভিরাম হয়।চোখ জোড়া যেন মুখ ও জিহ্বার আগেই খাবারের স্বাদ অনুভব করে।
ইয়াংলেডি ‘মাারী’ তা’ই চর্চা করছে।’মাশ’ও তাদের সহযোগিতায় যুক্ত হলেন যাতে আড়ম্বর ফুড পরিবেশনা করা ত্বরান্বিত হয়।
শেষতক তেরো মিনিটের মত সময় পরিশিষ্ট পাওয়া গেল।তখন মিষ্টার রিজের নিমন্ত্রণে ‘শায়খ’ সবাইকে নিয়ে উদার টেবিলে বসে পড়লেন।সবাই মোটামুটি মনোযোগী যে, শায়খের কাছ হতে ভাল কিছু একটা শুনবে বা তাদেরকে আদিষ্ট করা হবে কিছু একটা দুরুদ বা সালাত-আলান-নাবী পড়তে।
‘শায়খ’ কিন্তু তখন, আপাতত কোন বক্তব্য শুরু না করে বরং প্রথমেই একটি প্রশ্ন ছুড়ে বল্লেন :
‘টেবিলে সাজানো এসব খাদ্য কি হালাল?
প্রশ্নটি শুনার জন্য মুসলিম এই পরিবারের কেউই যেন প্রস্তুত ছিলেন না।অযথা এ প্রশ্নটি এ সময়ে অতিশয় বিরক্তিকরও বটে।
সমস্বরে মাারী ও জিশ বলে উঠলো, “অফকোর্স ফুফ”।এখানে সবই হালাল।হারাম আবার কোথায় দেখলেন।
শায়খ বল্লেন, ‘হ্যাঁ,এসব শতভাগ হালাল।আমার শতভাগ বিশ্বাস তা’ই’।
তবে,এখানে আমার আরেকটি জিজ্ঞাসা।আর তা হল, ‘মাগরিবের এক মূহুর্ত আগেও কি,সামনে রাখা এতসব হালাল ফুড থেকে তুচ্ছ ও অণু পরিমাণ কিছু মুখে পুরে খাওয়া যাবে? এ সময়ে এই অল্প খাওয়া কি হালাল হবে? নাকি হারাম?
এবার সবাই একটু রিলাক্স হলেন।তিন, চারজন সমস্বরে বলতে লাগলেন, “হারাম” ‘শায়খ’ বল্লেন, ‘ইয়েস,তার মানে এখনই এগুলো খাওয়া যাবে না।খাবার সময় হয়নি তাই হারাম।এ মুহূর্তে এত কিছু হালাল থেকে কিন্তু কিছুই খেতে পারবো না কারণ এখনই এসব খেতে হারাম।
শায়খের কথায় এবার তাঁরা মনোযোগী হলেন।
‘শায়খ আরো যোগ করে বল্লেন, এখানেই একটি চিন্তার বিষয় অনুধাবন করার প্রয়োজন আছে।আর তা হল: যদি আমরা, সিয়াম-দিনে, রোযার সময়ে,আল্লাহর নির্দেশে,হালাল জিনিষ থেকে দূরে সরে আসার কারণে সায়িম বা রোযাদার গ্রাহ্য হই, তাহলে তো আমরা,আল্লাহর ভয়ে যখন,মহান আল্লাহ কতৃক ধার্য করা মৌলিক হারাম থেকে দূরে পালাবো তখনই তো আমরা মুত্তাক্বী বলে গণ্য হব।
‘শায়খ’ আরো অগ্রসর হয়ে বল্লেন, ‘মাথার জন্য যা চিন্তা করা হারাম,চোখের জন্য যা দেখা হারাম,কানের জন্য যা শুনা হারাম,মুখের জন্য যা বলা হারাম,ঠোঁটের জন্য যা স্পর্শ করা হারাম,দিলের ভিতরে যা পোষা হারাম,হাতের জন্য যা ধরা হারাম,আঙ্গুল দিয়ে যা ইশারা করা হারাম,পেটে যা ঢুকানো হারাম,পায়ের জন্য যে দিকে চলা বা যাওয়া হারাম,এই সব হারাম থেকে বাঁচা হল তাক্বওয়া।আর যখন কেউ,স্রষ্টার শাস্তির ভয়ে,স্রষ্টার নির্দেশনা মেনে, ইত্যাদি এসব হারাম থেকে বাঁচতে পারবে এবং বেঁচে থাকায় অভ্যস্ত হবে তখন তাঁকে মুত্তাক্বী বলা যেতে পারে।এমনি করে করে মানুষ যখন হারাম ছাড়তে থাকবে তখন হালালের দিকেই মানুষ ধাবিত হবে।অসত্য ও অসুন্দর ছেড়ে সত্য ও সুন্দরে আশ্রয়ী হবে।সেজন্যই সিয়াম পালনের নির্দশনা,যাতে তাক্বওয়া অর্জনের সাধনা ও মহড়া করা যায়।এবং যাতে এই সুন্দর পৃথিবীতে,মানুষ যেন সুন্দর ও সুশৃঙ্খল হয়ে চলা ফেরা করা শিখতে পারে বা আরো সুশৃঙ্খল হয়ে উঠতে পারে।বস্তুত,সেই সুন্দর আনয়নের জন্যই রোযার এই কসরত।’
‘শায়খ’ আরো এড করলেন, “ওয়াল্লাহি,এই তাক্বওয়াই,আল্লাহ মহানের কাছে মানুষের মূল্য ও সম্মান নির্ধারণী মানদন্ড।আর রোযা এই সুযোগ সৃষ্টি করে।”
‘শায়খ ক্ষান্ত হলেন।অল্পক্ষণ দু’আ করলেন।
মাঘরিবের সময় চলে এল।একটু আগে যে হালাল-ভক্ষণ হারাম ছিল তা এখন আবার হালাল হল।