বৃহদাকৃতির পাতা ঝরা বৃক্ষ অর্জুনের অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। এর চাষাবাদে পরিপক্ক ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হয়। বীজ ভালো করে রোদে শুকিয়ে ৬-১২ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যেতে পারে। চারা উৎপাদনের জন্য বীজ বপণের পূর্বে ঠান্ডা পানিতে কমপক্ষে ৪৮ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হয়। চারা গজানোর ৮-৯ মাস পর পূর্ব নির্ধারিত ও পূর্ব প্রস্তুতকৃত মূল জমিতে অর্জুনের গাছ লাগানোর উপযোগি হয়। উল্লেখ্য, অর্জুনের ছালের চাহিদা দেশ-বিদেশে প্রচুর। এর ছাল থেকে রক্তক্ষরণের ঔষধ তৈরী করা হয়। এ ছাড়া এর ছাল হৃদ রোগ ও এজমায় এবং কাঁচা পাতার রস আমাশয় নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। অর্জুনের ছাল কেজি দরে বিক্রি হয়। অর্জুনের কাঠও মূল্যবান। সব মিলিয়ে অর্জুনের চাষাবাদ লাভজনক।
উৎকৃষ্ট তেল ফসল সূর্যমুখী। এক সময় দেশে শুধু ফুল হিসেবে হেলা-ফেলায় চাষাবাদ হলেও এখন এর বাণিজ্যিক গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। অনেকে মনে করেন ১৯৭৫ সাল থেকে সূর্যমুখী তেল ফসল হিসেবে দেশে চাষাবাদ হচ্ছে। সব ধরণের মাটিতেই চাষাবাদ সম্ভব হলেও সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য দো-আঁশ মাটি উত্তম। বছরের যে কোনো সময় চাষাবাদ সম্ভব হলেও অভিজ্ঞ চাষীদের অভিমত বর্ষাকালে বীজ বুনলে অতিবৃষ্টিতে বীজ পচে যায়। এ ছাড়া ঝড়-বৃষ্টিতে এ ফসলের ক্ষয়-ক্ষতির সম্ভাবনা প্রচুর। সব মিলিয়ে বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত সূর্যমুখীর চাষাবাদ না করা উত্তম। বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদের জন্য সূর্যমুখীর বীজ সারিতে বুনতে হয়। এ ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৫০ সে.মি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২৫ সে.মি।
কৃষি পণ্য উৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা বলছেন, চাষাবাদে মৌমাছির গুরুত্ব অনেক। মৌমাছি হ্রাসে বিশ্বজুড়ে খাদ্য নিরাপত্তা বড় ধরণের হুমকীতে পড়তে পারে। প্রযুক্তি বিপ্লবের বর্তমান বিশ্বে মৌমাছিকে যত্নে ও সুকৌশলে মধু উৎপাদনের সাথে সাথে কৃষি পণ্য উৎপাদনেও ব্যবহার কতে হবে। চাষাবাদের সাথে মৌমাছি পালনের কথাও ভাবতে হবে। কোনোভাবেই মৌমাছি বিনষ্ট কিংবা বিতাড়ন করা তো যাবেই না, বরং প্রাকৃতিকভাবে মৌমাছি আকৃষ্ট করার চেষ্টা করতে হবে। উল্লেখ্য, ফুলে ফুলে বিচরণের মাধ্যমে ফল-ফসলের পরাগায়ণে মৌমাছি বিশেষ অবদান রাখে। যা চাষাবাদে খুবই লাভজনক।
চাষাবাদে লাভজনক ওলকচু ফাল্গুন মাসে বীজ লাগিয়ে আশ্বিন মাসে উঠানো যায়। দেশের প্রায় সব এলাকাতেই কম-বেশী চাষাবাদ হলেও ইশ্বরদী, খুলনা, যশোহর, কুমিল্লা, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কুষ্টিয়া অঞ্চলে সাধারণত: বাণিজ্যিকভাবে বেশি চাষাবাদ হয়ে থাকে। চাষাবাদে এর প্রধান কন্দ বীজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তিন বছরের বীজ (কন্দ) ভালো বীজ হিসেবে বিবেচিত হয়। ছায়াযুক্ত নয় এবং পানি জমে না এমন উঁচু জমি ওলকচু চাষাবাদের জন্য উপযোগি। ফাল্গুন থেকে বৈশাখ পর্যন্ত ওলকচু লাগানোর উপযুক্ত সময়। এ ছাড়া ওলকচু চাষাবাদের জন্য বেলে দো-আঁশ মাটি খুবই উপযোগি। উল্লেখ্য, পুষ্টিকর সবজি ছাড়াও ওলকচুর অনেক রোগ প্রতিরোধক ও ঔষধি গুণ রয়েছে। কবিরাজরা বলেন, দাদ-ছুলি, কফ্-বাত, অর্শ ইত্যাদিতে এর ব্যবহার রয়েছে। মৌমাছি, বোলতা, ভিমরুলের কামড়ে এর ডাটা কর্তন করে এর কষ ঘষে দিলে নাকি যন্ত্রণা সহজেই সেরে যায়।
আখ চাষাবাদে একটা বড় সমস্যা শিয়ালের উৎপাত। শিয়ালের উৎপাত থেকে আখের ক্ষেত রক্ষায় অনেক চাষী রাসায়নিক বিষ (যেমন- হেপ্টাফ্লোর) ব্যবহার করেন। এতে আখ খেতে এসে বিষের প্রতিক্রিয়ায় শিয়াল মারা যায়। কিন্তু আখের ক্ষেতে বিষ প্রয়োগ করতে গিয়ে এর পরোক্ষ ক্ষতির শিকার হন সংশ্লিষ্ট চাষী। আখ ক্ষেতে বিচরণ তথা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বাজারজাত করতে গিয়ে আখ ক্ষেতে প্রয়োগকৃত বিষের পরোক্ষ শিকার হন চাষী এবং চাষীর পরিবারবর্গ। এছাড়া কৃষি ও কৃষক নিয়ে কর্মরত বিশেষজ্ঞরা বলেন, চাষাবাদ সংশ্লিষ্টরা ছাড়াও গাঁটের টাকা দিয়ে আখ খাওয়া বা চিনি খাওয়ার মধ্য দিয়ে ভোক্তারাও বিষের শিকার হন। শিয়ালের মতো ভোক্তারা তাৎক্ষণিক মারা না গেলেও ক্রমে ক্রমে মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে। তাই সচেতন চাষী মাত্রেই উচিৎ আখ ক্ষেতে (এবং অন্যান্য ক্ষেতে) বিষ প্রয়োগে বিরত থাকা, বিকল্প উপায়ে শিয়াল তাড়ানো তথা আখ ক্ষেত রক্ষা করা এবং যতদুর সম্ভব রাসায়নিক কীটনাশক পরিহার করা। উল্লেখ্য, আমাদের প্রচুর কৃষি উৎপাদনের সাথে দরকার, সুস্থ-সবল কৃষক-কৃষাণী তথা নিরাপদ চাষাবাদ।
শোখিনতার পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভাবে গোলাপ চাষাবাদ এখন লাভজনক কৃষি পণ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পেশাদার চাষী ছাড়াও আগ্রহী যে কেউ গোলাপ চাষাবাদ করতে পারেন। সারাদিন রোদ লাগে এমন উঁচু ও সমতল ভূমি এর চাষাবাদের জন্য উপযোগি। চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় হচ্ছে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে বর্ষাকালে চারা লাগালে সাধারণত: সব চারা বাঁচে না। সব ধরণের মাটিতে গোলাপ চাষাবাদ সম্ভব হলেও বেলে দো-আঁশ মাটিতে গোলাপ ভালো হয়। পরিচর্যার ক্ষেত্রে সময় সময় গাছের গোড়া থেকে আগাছা তুলে ফেলতে হবে। এ ছাড়া, শীতকালে/খরার সময় ভোরে অথবা বিকালে গাছে পানি দিতে হবে। গোলাপের অনেক গুলো জাত রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো- পিকাডেলি, দীপিকা, চারুগন্ধা, কুইন ফেবিওলা, ডন জুয়ান প্রভৃতি। গবেষকদের ধারণা, প্রাচীন ভারতে গোলাপ ছিল না। পারস্য থেকে ভারতে গোলাপের আগমণ ঘটে। ১৬ বৈশাখ ১৪১৮, ২৯ এপ্রিল ২০১১
লেখক: সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী অনিয়মিত প্রকাশনা)।