মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব- আশরাফুল মাখলুকাত। মানুষ ও পশুর মধ্যে মৌলিক তফাৎ হল- পশু পশু হয়েই জন্মগ্রহণ করে, জীবন কাটায় ও মৃত্যুবরণ করে। মানুষ মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করলেও মনুষ্যত্ব তাকে অর্জন করতে হয়। পশুকে পশুত্ব অর্জন করতে হয় না। তাই মানবজীবনে অনেক কাজ করতে হয়। তা হল মানুষসহ স্রষ্টার সকল জীবকে ভালবাসা। কিন্তু কম সংখ্যক মানুষই মনুষ্যত্ব অর্জন করে। আমরা সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। পরের জন্য কাজ করার আমাদের সময় ও মানসিকতা অধিকাংশ জনের থাকে না। যারা পরিহিতব্রতে কাজ করেন তাঁরাই প্রকৃত মানুষ।
একজন মানুষ ছিলেন আনোয়ারা বেগম। বিগত শতকের ষাটের দশকে মাত্র ছয় মাস বয়সের এক পুত্র সন্তান রেখে তিনি অকালে ইন্তেকাল করেন। কিন্তু তিনি যে সন্তানকে রেখে যান তিনি মানুষ-মানুষের মতো মানুষ। তাঁর নাম আব্দুর রশীদ লুলু। তিনি মায়ের স্মৃতি রক্ষা এবং মানব ও প্রকৃতি কল্যাণকর্মী। ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি তিনি মায়ের স্মৃতি রক্ষার্থে প্রতিষ্ঠা করেন আনোয়ারা ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশনের পরিচালিত তিনটি প্রতিষ্ঠান এখন কাজ করে যাচ্ছে। আব্দুর রশীদ লুলু যা করছেন তা নিজের চেষ্টায়, নিজের অর্থায়নে। কারো কাছে হাত পেতে তিনি কিছু করেননি।
আনোয়ারা ফাউন্ডেশনের মানব ও প্রকৃতিকল্যাণ কার্যক্রম প্রশংসনীয়। এই ফাউন্ডেশন গৃহ পালিত পশুপাখির কল্যাণে কাজ করছে। শহরে ও গ্রামে ছাদ কৃষিতে অনুপ্রাণিত করছে। ফলদ বৃক্ষ রোপণ, গ্রন্থ ও পত্রিকা প্রকাশ, ধূমপান বিরোধী কার্যক্রম, খাদ্য সংকট মোকাবেলায় বাসা বাড়িতে কৃষি উৎপাদনে প্রচারণা চালানো, ফুল, ফল ও ভেষজ চারা বিতরণ, পাখি শিকারে বিরত রাখা, নির্বিচারে মাছ ধরা বন্ধ করা, আগ্রহী পাঠকদের কাছে গ্রন্থ বিতরণ, নদী রক্ষা ও পানি দূষণ রোধে আহবান জানানো প্রভৃতি কাজ করছে এই ফাউন্ডেশন। আনোয়ার ফাউন্ডেশন পরিচালিত তিনটি প্রতিষ্ঠান সক্রিয় রয়েছে।
আনোয়ারা হোমিও হল গ্রন্থাগার ও আর্কাইভ মানবকল্যাণে নিবেদিত। ২০০৭ সালের ১১ মে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রাজীব স্মৃতি গ্রন্থাগার। এই গ্রন্থাগারের গ্রন্থসংখ্যা বর্তমানে পাঁচ সহস্রাধিক। এই গ্রন্থাগারে আছে ইসলামিক কর্নার, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কর্নার, রবীন্দ্র কর্নার, কৃষি কর্নার, শিশু কর্নার এবং ম্যাগাজিন কর্নার। সুধীজন বইপত্র দান করে এই গ্রন্থাগারকে মুক্ত হস্তে সাহায্য করে যাচ্ছেন। মরহুম আব্দুল মালিক হোমিও দাতব্য চিকিৎসালয় নিয়মিত গরিব, দুঃখী ও অসহায়দের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
আনোয়ারা ফাউন্ডেশন থেকে ‘আনোয়ারা’ নামে আব্দুর রশীদ লুলুর সম্পাদিত একটি ছোট সাহিত্য পত্রিকা বাহান্ন সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া প্রকাশিত হয়েছে আমার সঙ্কলিত ও সম্পাদিত ‘সুবর্ণলিপি’, আনিসুল আলম নাহিদ সম্পাদিত ‘আনোয়ারায় উদ্ধৃত প্রাজ্ঞবচন’, কৃষি বিষয়ক ছোটকাগজ, আনিসুল আলম নাহিদ সম্পাদিত ‘চাষাবাদ’ তিন সংখ্যা। এই ফাউন্ডেশন থেকে আরো গ্রন্থাদি প্রকাশের প্রকল্প গৃহীত হয়েছে।
সদিচ্ছা থাকলে পারিবারিক উদ্যোগে যে বড় কাজ করা যায়, আনোয়ারা ফাউন্ডেশন তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে। আশা করা যায় ভবিষ্যতে এ প্রতিষ্ঠান মানব কল্যাণে বিশেষ অবদান রাখবে।
লেখক: গবেষক ও বহুগ্রন্থ প্রণেতা