বালাগঞ্জে প্রায় ২সপ্তাহ পানি বৃদ্ধির পর অবশেষে চলতি বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু হয়েছে। চলতি মাসের ১৮ জুন থেকে ভারিবৃষ্টি ও উজান থেকে আসা ঢলে বন্যার তান্ডব শুরু হয়। এই ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয়েছে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের প্রায় সর্বত্র। ঘর ছাড়া হয়েছেন হাজার হাজার পরিবার। অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন শতশত পরিবার। আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়াও পানিবন্ধি অধিকাংশ পরিবার জীবনবাজি রেখে নিজ বাড়ীতে উঁচু চৌকিতে কোনোমতে আহার নিদ্রা ত্যাগ করে চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। কেহ কেহ আত্মীয় স্বজনের বাড়িতেও আশ্রয় নিয়েছেন। বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে প্রায় পুরো উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। তলিয়ে গেছে অধিকাংশ হাটবাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এতে নানামূখী সমস্যায় বানভাসি মানুষেরা দিশেহারা । তাদের যেন দুর্ভোগের শেষ নেই! পাশাপাশি বানভাসি মানুষ গৃহপালিত পশু ও গরু-ছাগল নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।
বিগত কয়েকদিনে বিভিন্ন এলাকায় পরিদর্শকালে দেখা গেছে, প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রে সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রান বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। তবে, অভিযোগ রয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় সরকারি ত্রাণ সহায়তা অনেক সামান্য। আর বেসরকারি উদ্যোগে যেসব সহযোগীতা করা হচ্ছে তা প্রায় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। যার জন্য বন্যাকবলিত পানিবন্ধী গ্রামগঞ্জে মানুষের মধ্যে হাহাকার চলছে। অর্ধাহারে অনাহারে চলছে অনেকের সংসার।
বিগত ৫-৭ দিনের সরেজমিনে পরিদর্শনকালে- সুলতান পুর গ্রামের আফজল আলী বলেন, গ্রামের অধিকাংশ মানুষ পানি বন্দি হয়েও নিজের বসতবাড়িতে রয়ে গেছেন। আপনারা দয়া করে এদের উপর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। যারা বিভিন্ন স্কুল কলেজ আশ্রয় নিয়েছেন তারা পর্যাপ্ত পরিমান ত্রান পেয়েছে। তারা অনেকদিন এই ত্রান দিয়ে চলতে পারবে। অথচ গ্রামের অনেক নিম্নবিত্ত মধ্যেবিত্ত পরিবার কিছুই পাচ্ছে না। এদেরকে আপনারা খেয়াল করুন। এই বন্যায় সবাইকে সহযোগিতা করা আপনার আমাদের একান্ত কর্তব্য।
বরকতপুর গ্রামের নানু মিয়া বলেন, আমাদের গ্রামের প্রায় সবাই পানি বন্ধি। কাজকর্ম নাই। মানুষ খুব কষ্টে আছেন। এখন পর্যন্ত কোন ধরনের ত্রাণ আমাদের গ্রামে এসেছে বলে আমার জানা নেই।
হাজিপুর গ্রামের আনহার মিয়াসহ বেশ কয়েকজন বানভাসি অসহায় মানুষজন জানান, আমাদের বাড়ি ঘরে পানি। খুব কষ্টে আছি। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনধরনের সহায়তা আসেনি।
দেওয়ানবাজার ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার হাজী মুহাম্মদ আলী গুলসের ও সাবেক মেম্বার, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নেছাওর আলী জানান, প্রয়োজনের তুলনায় ত্রাণ খুবই কম। মানুষজন চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। ওয়ার্ডের প্রায় ১৫শ পরিবার বন্যাকবলিত।
চলতি বন্যাপরিস্তিতে ২৭ জুন পর্যন্ত ৩ দফায় ১০ কেজি করে যথাক্রমে ৩৩, ৩০ ও ৮৮ পরিবারসহ মাত্র ১শ ৫১টি পরিবারকে সরকারি চাল ত্রান প্রদান করা হয়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষে নিকট পর্যাপ্ত পরিমাণ বরাদ্দসহ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সার্বিক সহায়তার দাবি জানান।
স্থানীয় সিলেট- ৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব বন্যার্তদের মাঝে সরকারি, তাঁর ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে এবং বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে ধারাবাহিক ত্রাণ বিতরণ করে যাচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে ২৬ জুন বালাগঞ্জ উপজেলার দেওয়ান ও পশ্চিম গৌরীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে ত্রান বিতরন করেছেন। ত্রাণ বিতরণকালে তাঁর সাথে ছিলেন বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোজিনা আক্তার।
এ সময় এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, বিশ্বাস করি এই আধাঁর অচিরেই কেটে যাবে। ইতিমধ্যে বন্যার পানি কমতে শুরু হয়েছে। আমাদের সেনাবাহিনীর সদস্যরা একটি ক্যাম্প করেছেন। যতদিন বন্যার পানি থাকবে তাঁরা সহযোগিতা করে যাবেন। বালাগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৯০ ভাগ মানুষের বাড়িতে বন্যার পানি। এতগুলা বাড়িতে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া একটু ডিফিকাল হচ্ছে। কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি। সবার কাছে পৌঁছে দিতে।
এ দিকে সর্বশেষ পরিস্থিতিনুযায়ি ২৫ জুন থেকে ২৭ জুন (সোমবার) পর্যন্ত পানি কিছুটা কমেছে।পাশাপাশি সময় সময় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। শেয়ালসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী মরে পচে পানিতে ভেসে চলছে এবং দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।