বিভিন্ন উৎস থেকে প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর মিথেন গ্যাস নির্গমন হলেও বৈজ্ঞানিকরা বলছেন ধান ক্ষেতে ব্যবহৃত জৈব সার থেকে মিথেন গ্যাসের নির্গমনের মাত্রাও কম নয়। এ ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিকরা বলছেন, জৈব সার হিসেবে ধান ক্ষেতে হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা ও কেঁচো সারের ব্যবহারের মাধ্যমে মিথেন গ্যাসের মাত্রা অন্যান্য জৈব সারের তুলনায় ২০-৩৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা ও কোঁচো সার ব্যবহারে ধানের উৎপাদনের পরিমাণও অন্যান্য জৈব সারের তুলনায় ভালো হয়। উল্লেখ্য, মিথেন গ্যাস বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে তরান্বিত করে। এ মিথেন গ্যাস গ্রিণ হাউস গ্যাস নামেও পরিচিত। যা পরিবেশ ও কৃষির জন্য হুমকী স্বরূপ। এতদসত্ত্বেও খাদ্য নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির প্রচেষ্টা পৃথিবী জুড়ে অব্যাহত রাখতে হবে। একই সাথে ধান চাষাবাদে মিথেন গ্যাসের নির্গমণের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এও মনে রাখা দরকার, চাষাবাদে জৈব সারের তুলনা হয় না।
দেশি ফল লটকনের চাহিদা এখন বিদেশেও বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বছরই লটকন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। উপযুক্ত বাজার মূল্য প্রাপ্তি ও চাহিদার প্রেক্ষাপটে এখন লটকনের চাষাবাদও গুরুত্ব পাচ্ছে। বাড়ির আশে-পাশে কিংবা বড় বড় গাছের ফাঁকে ও নীচে সহজেই লটকনের চাষাবাদ করা যায়। সাধারণত: লাগানোর ৪-৬ বছরের মধ্যে ফল ধরতে শুরু করে। সাধারণ মানের একটি গাছে বছরে ১২০-১৩০ কেজি ফলন পাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া, এক একটা লটকন গাছ এক নাগাড়ে ১৮-২০ বছর ফলন দিয়ে থাকে।
অনেকেই নিজের সংগৃহীত সংরক্ষিত কিংবা বাজার থেকে কিনে আনা বীজ সরাসরি রোপণ/বপণ করে থাকেন। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এতে করে বীজের অঙ্কোরোদগম ক্ষমতা ভালো হয় না। চাষাবাদে বিজ্ঞরা বলেন, বীজ রোপণ/বপণের আগে কমপক্ষে একদিন ভালো করে রোদে শুকিয়ে নেয়া উচিৎ। এতে অঙ্কোরোদগম ক্ষমতা ভালো হয় এবং বীজে থাকা রোগ-জীবাণুও দূরীভূত হয়। আশার কথা, গ্রামাঞ্চলে প্রায় মহিলাই আজকাল এ পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকেন।
চাষাবাদে প্রায়ই চারা বীজ তলা থেকে তুলে এনে পূর্ব প্রস্তুতকৃত মূল জমিতে রোপণ করা হয়। উপযুক্ত পরিচর্যার অভাবে অনেক সময় এসব চারা মরে যেতে দেখা যায়। যা চাষাবাদের জন্য ক্ষতিকর। এ ক্ষেত্রে চারা অবশ্যই পড়ন্ত বেলায় এবং সম্ভব হলে মেঘলা দিনে রোপণ করতে হবে। এ ছাড়া রোপণের পর প্রত্যেকটা চারাকে কমপক্ষে ৩/৪ দিন রোদের তেজ থেকে সযতেœ রক্ষা করতে হবে। এই ৩/৪ দিনে চারা গাছ মাটির সাথে শিকড় বিস্তারের সুযোগ পাবে। ফলে ক্রমান্বয়ে প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান সংগ্রহ করতে সক্ষম পাবে। এতে চারা মরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
গোল মরিচ দেশে মরিচের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হলেও সারা বিশ্বে মূলত: ফল হিসেবেই পরিচিত। এটি একটি স্বাস্থ্য সম্মত মসলা হিসেবেও খ্যাত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর চাষাবাদ সহজসাধ্য এবং দেশের সর্বত্রই এর চাষাবাদ সম্ভব। আমাদের পার্শ্ববর্তী আসাম ও মিয়ানমারে প্রচুর পরিমাণে গোল মরিচের চাষাবাদ হয়। বিশ্বজুড়ে এর চাহিদাও প্রচুর। ধারণা করা হয়, এর আদি আবাস মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশ। গোল মরিচ মোটা ধরণের কাষ্টল লতার গাছ। বাহন পেলে পাঁচ মিটারের মতো লম্বা হতে পারে। এর পাতা দেখতে অনেকটা পানের মতো। ইংরেজি নাম ইষধপশ চবঢ়ঢ়বৎ.
উৎসাহমূলক প্রচার-প্রচারণার প্রেক্ষিতে দেশে ক্রমান্বয়ে পাম চাষাবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতীতে পাম চাষ বা পাম অয়েল দেশের মানুষের কাছে প্রায় অপরিচিত ছিল। পাম চাষাবাদের অনেক সুবিধা রয়েছে। পাম গাছ একটি দীর্ঘজীবি উদ্ভিদ। উপযুক্ত পরিচর্যায় রোপণের মাত্র ৩-৪ বছরের মধ্যে পাম গাছ ফলন দিতে শুরু করে। এ ছাড়া এক একটি পাম গাছ একটানা ২৫-৩০ বছর পর্যন্ত ফলন দিয়ে থাকে। এর চাষাবাদ বিভিন্ন দিক থেকে অত্যন্ত লাভজনক। সাধারণত: পাহাড়, চরাঞ্চল, সমতল ভূমি এবং বাড়ির আশে এর চাষাবাদ করা যায়। আশার কথা, বন্যার পানিতেও পাম গাছের তেমন ক্ষতি হয় না।
চাষাবাদে পিঁপড়ের উপদ্রব একটা বড় সমস্যা। অনেক সময় পিঁপড়ে রোপিত বীজের সারাংশ খেয়ে ফেলে কিংবা বহন করে নিয়ে যায়। এর প্রতিকারে বীজ রোপণ/বপণের আগে/পরে জমিতে (বীজ রোপণকৃত জায়গায়) কেরোসিন মিশ্রিত পানি ছিটানো যেতে পারে। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, কেরোসিন মিশ্রিত পানি ছিটালে পিঁপড়ে সাময়িকভাবে সরে যায়। (কয়েক দিন পর পর একাধিক বার ছিটালে পিঁপড়ে স্থায়ীভাবেও সরে যেতে পারে)।
দেশের একটি জনপ্রিয় শীতকালীন সবজি ফুলকপি। শীতকালীন চাষাবাদের জন্য সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে বীজতলায় এর বীজ বপণ করতে হয়। চারা গজানোর ৮-১০ দিন পর তুলনামূলক বড় চারাগুলো রেখে ছোট চারাগুলো যত্মে তুলে অন্য বীজ তলায় লাগালে চারা সবল ও সতেজ হয়। ফুল কপির আগাম চাষাবাদের জন্য কার্তিকা, পাটনাই, পুশা, দিপালী, ট্রপিক্যাল, পাঞ্জাব কানওয়ারি, ম্যাজিক বল ইত্যাদি জাত রয়েছে। উল্লেখ্য, বেলে দোআঁশ ও এঁটেল দোআঁশ মাটিতে ফুলকপি ভালো জন্মে। ০৫ নভেম্বর ২০১২।
লেখক: সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী অনিয়মিত প্রকাশনা)।