* ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ব্রি-৫২ আমন ধান বন্যা সহিষ্ণু। এ ধানের চাষাবাদ অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকায় করা যায়। এ ধানের চারা ১৫-২০ দিন পানিতে তলিয়ে থাকলেও তেমন কোনো ক্ষতি হয়না। অন্য ধানের তুলনায়-এ ধানের আলাদা কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। উপকূলের জোয়ারে প্লাবিত এলাকায় ব্রি-৫২ ধান চাষাবাদ খুবই উপযোগি। এ ছাড়া এ ধান চাষাবাদে পোকা মাকড়ের আক্রমণ কম হয় এবং তুলনামূলকভাবে উৎপাদন খরচ কম। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে বণ্যা কবলিত এলাকা ভোলাসহ দক্ষিনাঞ্চলে ব্রি-৫২ ধান চাষাবাদ করে সফলতা পাওয়া গেছে।
* প্রচুর ভিটামিন সমৃদ্ধ লাল শাক দেশের প্রায় সব অঞ্চলে চাষাবাদ হয়ে থাকে। এটি দেশের একটি জনপ্রিয় শাকও। দেশের শীতের শুরুতে এর ফলন বেশি হয়ে থাকে, যদিও গরমকালে উঁচু জমিতেও এর চাষাবাদ হয়ে থাকে। প্রায় সব ধরণের মাটিতে লাল শাকের চাষাবাদ সম্ভব হলেও দোঁআশ ও বেলে-দোঁআশ মাটিতে উৎপাদন ভালো হয়। এর অনেক গুলো জাত থাকলেও উন্নত দু’টি জাত হলো- বারি লালশাক-১ এবং আলতাপাটি। লালশাকের বীজ খুব ছোট এবং এটি স্বল্পকালীন ফসল। সাধারণত প্রতি শতকে ১০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়। বীজ বপনের ২০-২৫ দিনের মধ্যে লালশাক সংগ্রহ/উত্তোলন করা যায়, সংগ্রহ/উত্তোলনের সময় অবশ্যই বড় গাছ গুলো তুলতে হবে। এতে ছোট গাছ গুলো পর্যাপ্ত আলো-বাতাস পেয়ে বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। ২/৩ দিন পর পর শাক তোলা ভালো। উল্লেখ্য, কান্ড শক্ত হয়ে গেলে এটা শাক হিসেবে খাওয়ার উপযোগী থাকে না। তাই কান্ড শক্ত হওয়ার আগেই সংগ্রহ/উত্তোলন শেষ করতে হয়। চাষাবাদ সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত, উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদে প্রতি শতক জমিতে ৪৫-৫৫ কেজি পর্যন্ত লাল শাক উৎপাদন সম্ভব।
* মরিচ দেশের একটি জনপ্রিয় মসলা ফসল। দেশে চাষাবাদের উপযোগি মরিচের অনেকগুলো জাত রয়েছে। বাংলা লঙ্কা বা বারি মরিচ-১ জাতটি সারা বছরই চাষাবাদ যোগ্য। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোআঁশ এবং পলি দোআঁশ মাটি মরিচ চাষাবাদের জন্য ভালো তবে মরিচ গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। রবি ও খরিপ মৌসুমে সাধারনত দেশে মরিচ চাষাবাদ হয়। রবি মৌসুমে চাষাবাদের জন্য সেপ্টেম্বর-অক্টোবর এবং খরিপ মৌসুমে চাষাবাদের জন্য ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বীজ বপণের উপযুক্ত সময়। চারায় ৪/৫টি পাতা গজালে পূর্ব প্রস্তুতকৃত মূল জমিতে রোপণের উপযুক্ত হয়। সরাসরি মূল জমিতেও বীজ বপণ করা যায়। অন্যান্য পরিচর্যার পাশাপাশি ভালো ফলনের জন্য জমি সব সময় আগাছামুক্ত রাখতে হয়। জমির অবস্থা বুঝে শীত ও খরার সময় জমিতে সেচ দিতে হয়। সেচের কয়েক দিন পর মাটিতে চটা দেখা দিলে চটা ভেঙ্গে দিতে হয়। উপযুক্ত পরিচর্যায় সাধারণত চারা রোপণের ৩০-৪০ দিন পর মরিচ গাছে ফুল-ফসল আসতে শুরু করে এবং মরিচ পরিপক্ষ হতে ২৫-৩০ দিন সময় লাগে। তবে মরিচ পাকতে ৫০-৬০ দিন সময় প্রয়োজন হয়। কাঁচা মরিচ সপ্তাহে ২/৩ বার এবং পাকা মরিচ ১৫ দিন অন্তর সাধারণত সংগ্রহ করতে হয়। উল্লেখ্য ঝালের জন্য মরিচ কাঁচা এবং পাকা অবস্থায় ব্যবহার করা হয়। কাঁচা মরিচে ভিটামিন সি-এর পরিমাণ বেশি থাকে।
* আফ্রিকান আলু জাতীয় ফসল কাসাভার চাষাবাদ দেশের বনাঞ্চলে ক্রমশ: জনপ্রিয় হচ্ছে। কাসাভা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত, যেমন- পাহাড়ি আলু, বুনো আলু, শিমুল আলু প্রভৃতি। গবেষকদের ধারণা, ১৯৪০ সালে খ্রিস্টান মিশনারিদের মাধ্যমে কাসাভা বাংলাদেশে আসে এবং চাষাবাদের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। কাসাভা সাধারণত দেশের পাহাড়ি এলাকা; যেমন- মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, টাঙ্গাইল, মধুপুর, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহের গারো পাহাড়, পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রভৃতি অঞ্চলে চাষাবাদ হচ্ছে। পাহাড়-টিলায় লেবু, আনারস ইত্যাদির পাশাপাশি ফাঁকা জায়গায় আদিবাসিরা কাসাভা চাষাবাদ করে থাকেন। এতে পাহাড়-টিলার মাটির যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত হতে পারে। যা চাষীর জন্য অবশ্যই লাভজনক। কাসাভা পাহাড়-টিলা ছাড়াও পতিত জমি, ক্ষেতের আইল ও অনুর্বর জমিতে অনায়াসে চাষাবাদ করা যায়। উল্লেখ্য, রোপণের সাত মাসের মাথায় কাসাভার ফলন পাওয়া যায়। এ ছাড়া, বর্তমানে বাজারে এর চাহিদা প্রচুর এবং ভবিষ্যতেও এর চাহিদা আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা পটেটো চিপস কোম্পানী গুলো কাঁচামাল হিসেবে কাসাভা কিনছে এবং দেশে ক্রমশ: পটেটো চিপসের জনপ্রিয়তা/চাহিদা বেড়েই চলছে। এছাড়া কাসাভা অন্য উপাদানের সাথে মিশিয়ে রুটি, কেক, বিস্কুট, স্যুপ, রসগোল্লা ইত্রাদিসহ কাগজ ও বিভিন্ন ধরণের ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ দেশে-বিদেশে কাসাভার চাহিদা প্রচুর। কাসাভার অনেকগুলো জাত রয়েছে। নানাভাবে খাওয়া গেলেও সব জাতের কাসাভা খাওয়ার উপযোগি নয়। উল্লেখ্য কাসাভা পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম শর্করা উৎপাদনকারী ফসল এবং আফ্রিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় পঞ্চাশ কোটি মানুষের প্রধান খাদ্য কাসাভা চাষাবাদ ও উৎপাদনের দিক থেকে পৃথিবীতে প্রথম স্থানে রয়েছে নাইজেরিয়া। এটা বহুবর্ষজীবি গুল্ম জাতীয় গাছ। গাছের শিকড় জাত এক ধরণের এ আলু মাটির নিচে জন্মায়।
* টমেটো মূলত শীতকালীন সবজি হলেও বর্তমানে দেশে গ্রীষ্মকালেও চাষাবাদ হচ্ছে। উর্বর দোআঁশ মাটি টমেটো চাষাবাদের জন্য সবচেয়ে ভালো হলেও উপযুক্ত পরিচর্যায় বেলে-দোআঁশ ও এঁটেল-দোআঁশ মাটিতেও ভালো জন্মে। দেশে টমেটোর অনেক জাত রয়েছে। শীতকালীন চাষাবাদের জন্য কয়েকটি ভালো জাত হলো- বিনা টমেটো-৩, বারি টমেটো-২ (রতন), বারি টমেটো-৯ (লালিমা) এবং বারি টমেটো-১০ (অনুপমা)। গ্রীষ্মকালীন ভালো জাতের মধ্যে রয়েছে- বারি হইব্রিড টমেটো-৩, বারি হাইব্রিড টমেটো-৪, বারি টমেটো-৪, বারি টমেটো-৫, বারি টমেটো-১১ (ঝুমকা) প্রভৃতি। টমেটো শীতকালীন চাষাবাদের জন্য বীজ বপণের উপযুক্ত সময় সেপ্টেম্বর-অক্টোবর। ভালো ফসলের জন্য অন্যান্য পরিচর্যার পাশাপাশি ক্ষেত আগাছামুক্ত রাখা জরুরী। সাধারণত চারা রোপণের ৬০ দিন পর থেকে ফসল সংগ্রহ করা যায়। টমেটো লালচে রং ধারণ করলে বোঁটা থেকে কেটে ফল সংগ্রহ করতে হয়।
* এখন অনেকেই শহরে এবং গ্রামে টবে চাষাবাদ করছেন। টবে চাষাবাদ অনেক দিক থেকেই লাভজনক। মরিচের মতো ফসল টবে চাষাবাদের জন্য ৬-১০ ইঞ্চি ব্যাসের প্লা পস্টিক বা মাটির টব ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ধরণের টবের মাটি তৈরির জন্য দোঁআশ মাটি এক ভাগ, বেলে মাটি এক ভাগ এবং গোবর সার একভাগ নিয়ে ভালোভাবে মেশালো ভালো হয়। তবে টবে মিশ্রিত মাটি ভরার আগে অবশ্যই টবের নীচে ছিদ্রের উপর ইট অথবা হাড়ি-কলসের টুকরো দিতে হবে। যাতে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশিত হতে হবে। রোপণকৃত চারায় যাতে দিনে কমপক্ষে ৬-৭ ঘন্টা সূর্যের আলো পড়ে সেদিকে লক্ষ্য করে টব রাখতে হবে। তবে চারা লাগানোর পর প্রথম কয়েক দিন চারাকে প্রখর সূর্যতাপ থেকে দূরে রাখতে হবে। পানি সেচের ফলে প্রায়ই টবের মাটি জমাট বেঁধে যায়। এ অবস্থায় নিড়ানি দিয়ে টবের মাটি মাঝে মাঝে আলগা করে দেয়া উচিৎ।
লেখক: সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা)।