শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

আব্দুর রশীদ লুলু

চাষাবাদ বিষয়ক টুকিটাকি – ২৭



 কেঁচোকে বলা হয় প্রকৃতির লাঙল। চাষাবাদে এটি প্রকৃতির আশীর্বাদ। জমির উর্বরতা বাড়াতে কেঁচোর অবদান অনেক। চাষাবাদে রাসায়নিক সারের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এক সময় এই প্রকৃতির লাঙলের চাহিদা কমে গেলেও বর্তমানে আবার পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। চাষাবাদে রাসায়নিক সারের অপরিমিত ব্যবহার নানাভাবে ক্ষতিকর প্রমাণিত হওয়ায় অনেকেই আবার প্রকৃতির লাঙলের দিকে মনোযোগী হচ্ছেন। তৈরী হচ্ছে পরিকল্পিত ভাবে কেঁচো সার। কেঁচো সার বাণিজ্যিক ভাবে তৈরী করে অনেকেই লাভমানও স্বাবলম্বী হচ্ছেন এমন খবরও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আসছে। পাশাপাশি এই জৈব সার চাষাবাদে প্রয়োগ করে সংশ্লিষ্টরা লাভমান ও হচ্ছেন। উল্লেখ্য, প্রতি শতক জমিতে সাধারণত ৫-৬ কেজি কেঁচো সার ব্যবহারেই জমির উর্বরতা বাড়ে এবং ফলনও ভালো হয় বলে এর ব্যবহারকারীরা জানান।

 বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাাবিত স্বল্পজীবনকাল সম্পন্ন ধানের একটি জাত ব্রিধান ৩৩। মঙ্গা সমস্যা সমাধানে এ ধানের চাষাবাদ নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে বলে সংশ্লিষ্ট মহল থেকে দাবী করা হচ্ছে। ব্রি উদ্ভাবিত দু’টি উফশী ধান ব্রি ধান ২৮ ও ব্রিধান ২৯ বোরো মৌসুমে এবং বিআর ১১ আমন মৌসুমে সফলতার সাথে চাষাবাদ হচ্ছে। এ ধান গুলো চাষাবাদে সারা দেশের পরিবেশ অনুকূল বলে ব্রি’র বৈজ্ঞানিকরা বলে থাকেন। এ ছাড়া ব্রি’র লবণাক্ততা পরিবেশ উপযোগী ধানের জাত ব্রি ধান ৪০, ব্রি ধান ৪১ এবং ব্রি ধান ৪৭ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক চাষাবাদ হচ্ছে। উল্লেখ্য ব্রি উদ্ভাবিত উফশী ধানের সফল চাষাবাদ দেশের খাদ্য নিরাপত্তা তথা ক্ষুধা ও দারিদ্রতা নিরসনে বিরাট ভূমিকা রাখছে।

 চাষাবাদে প্রায়ই ইউরিয়া সারের ব্যবহারে প্রয়োজন হয়। এক সময় অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় অনেকেই ফসলে বিশেষ করে ধান চাষাবাদে এর ব্যবহার করতেন। এখন বৈজ্ঞানিকরা বলছেন পরিমিত মাত্রায় নিয়মানুযায়ী ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে। এ ছাড়া গুটি ইউরিয়া সারের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এতে চাষাবাদে ব্যয় সাশ্রয় হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গুটি ইউরিয়া সার ও লিফ কালার চার্ট (এলসিসি) ব্যবহারের ফলে ইউরিয়ার ব্যবহার প্রায় ৩০% কমে থাকে। অথচ এতে ফলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না অর্থাৎ ফলন কমে না।

 আম চাষাবাদে দেশে বহুকাল থেকে আঁটি বা বীজ থেকে চারা উৎপাদন করে আসা হচ্ছে। এতে বেশ কিছু সুবিধাও রয়েছে, যেমন- সময়, শ্রম ও দক্ষতার তেমন একটা প্রয়োজন হয় না। গাছও সুদৃঢ় হয়। কিন্তু আঁটি/বীজের গাছের ক্ষেত্রে প্রায়ই আমের জাত বৈশিষ্ট্য ঠিক থাকে না। তবে কলমের মাধ্যমে বংশ বিস্তারের ক্ষেত্রে আমের গুণ/জাত বৈশিষ্ট্য ঠিক থাকে বলে বৈজ্ঞানিক/গবেষকরা বলছেন। আম গাছে বিভিন্ন পদ্ধতিতে কলম করা হয়ে থাকে; যেমন- জোড় কলম, ভিনিয়ার কলম, চিপ কলম প্রভৃতি। দেশে জোড় কলম পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। এই পদ্ধতির কলা-কৌশল অভিজ্ঞ ব্যক্তি বা কৃষিবিদদের কাছ থেকে জেনে নেয়া যেতে পারে।

 পেঁপে চাষাবাদে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ফল পাতলাকরণ। পেঁপে গাছে প্রথম অবস্থায় প্রায় এক সাথে অনেক ফল ধরে। ফলগুলো ঘন অর্থাৎ কাছাকাছি থাকায় ঠিক মতো বাড়তে পারে না। এ জন্য মাঝে মাঝে ছোট আকৃতির ফল গুলো তুলে ফেলে পাতলা করে দিতে হয়। এতে অন্য ফল গুলো পর্যাপ্ত জায়গা ও আলো-বাতাস পেয়ে দ্রুত বেড়ে ওঠে। সাধারণত: একটি পেঁপে গাছ অনেক বছর ফল দিয়ে থাকে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেন, তিন বছরের বেশি পেঁপে গাছ রাখা লাভজনক নয়। তিন বছরের পর পেঁপের আকার ও উৎপাদন তুলনামূলক ভাবে কমে যেতে থাকে। উল্লেখ্য, রোপণের পর সাধারণত ৫/৬ মাসের মধ্যে পেঁপে গাছে ফুল আসে এবং ৯/১০ মাসের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়।

 গবেষকদের ধারণা, লিচুর আদি জন্মস্থান দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায়। যদিও পৃথিবীর অনেক দেশেই এখন লিচুর সফল চাষাবাদ হচ্ছে। দেশের যশোর, কুষ্টিয়া ও রংপুরে লিচুর ভালো চাষাবাদ হয়। লিচুর ফলন/উৎপাদন নির্ভর করে জলবায়ুর ওপর। শীতকালে তুষারপাত না হওয়া এবং গ্রীষ্মকালে গরম ও শুষ্ক বায়ু প্রবাহিত না হওয়া লিচু চাষাবাদের জন্য উপকারী। এছাড়া, পানি সুনিষ্কাশন সম্বলিত বেলে দোআঁশ ও দোআঁশ মাটি লিচু চাষাবাদের জন্য উপযোগী। অনেকের ধারণা, ক্ষার মাটিতে লিচু ভালো জন্মে। সে অনুযায়ী অনেকে লিচু গাছে/বাগানে চুন প্রয়োগ করে থাকেন। কিন্তু বৈজ্ঞানিকরা এ ধারণা ভিত্তিহীন বলে মনে করেন।

 নারিকেল চাষাবাদে বীজ সংগ্রহে যতœবান হওয়া উচিৎ। অনেকে এ বিষয়ে যতœবান না হওয়ায় পরবর্তীতে ভালো ফলন পান না। চাষাবাদে বিশেষ করে নারকেলের ক্ষেত্রে ভালো জাতের বীজ লাগলে ভালো গাছ হয় এবং তা থেকে পরবর্তীতে ভালো ফলন পাওয়া যায়। গরমের সময় পাকা নারকেল বীজের জন্য নির্বাচন করতে হবে। এছাড়া সাবধানে গাছ থেকে পাড়তে হবে, যাতে নারকেলের আঘাত না লাগে। সংগৃহিত নারকেল এক সপ্তাহ রোদে ভালো করে শুকানোর পর নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ম মাফিক লাগাতে হবে। ১৫ মার্চ ২০১৩

লেখক: সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা)।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!