রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আব্দুর রশীদ লুলু

চাষাবাদ বিষয়ক টুকিটাকি – ৩২



 দেশের জনপ্রিয় ও ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ ফল পেয়ারা প্রায় সারা দেশেই চাষাবাদ হয়ে থাকে। তবে ব্যাপকভাবে বরিশাল, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, পিরোজপুর, ঝালকাটি প্রভৃতি অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হয়ে থাকে। দেশে অনেক ধরণের পেয়ারা রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ভালো জাত হলো- কাজী পেয়ারা, বারি পেয়ারা-২, বারি পেয়ারা-৩, কাঞ্চন নগর, মুকুন্দপুরী, স্বরূপকাঠি প্রভৃতি। পেয়ারা উর্বর ও গভীর দো-আঁশ মাটিতে ভালো হলেও প্রায় সব ধরণের মাটিতেই চাষাবাদ করা যায়। পেয়ারা কিছুটা লবণাক্ততাও সহ্য করতে পারে। এছাড়া পেয়ারা গাছ খরা সহিষ্ণুও। বীজ থেকে ও গুটি কলমের মাধ্যমে পেয়ারা চারা উৎপাদন করা হয়। উল্লেখ্য, কাজী পেয়ারা ও বারি পেয়ারা বছরে দুইবার ফল দিয়ে থাকে। পরিকল্পিতভাবে পেয়ারা চাষাবাদ নি:সন্দেহে লাভজনক।

 দেশের আবহাওয়ায় চাষাবাদ উপযোগি স্ট্রবেরির একটি ভালো জাত হলো রাবি-৩। উপযুক্ত পরিচর্যায় এ জাতের স্ট্রবেরির প্রতিটি ফলের ওজন সাধারণত ২০-২৫ গ্রাম হয়ে থাকে। বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের পাশাপাশি এখন দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় সরাসরি জমিতে চাষাবাদ ছাড়াও সৌখিনভাবে পারিবারিক চাহিদা মেটাতে টবেও চাষাবাদ হচ্ছে। চাষাবাদ পদ্ধতিও সহজ। অনেকটা অন্যান্য ফলমূল ও শাক-সবজি চাষাবাদের মতোই। কার্তিক মাসের শুরু থেকেই জমিতে চারা লাগানো শুরু করা যায়। সাধারণত চারা লাগানোর ৩০-৪৫ দিনের মধ্যে ফুল ও ফল আসতে শুরু করে। ফাল্গুন-জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা যায়। তবে ফলের ভরা মৌসুম বলা যায় চৈত্র-বৈশাখ মাস। এর চাষাবাদের জন্য সুনিষ্কাশিত উর্বর দোআঁশ মাটিতে প্রয়োজন। পেঁপে ও কাঁঠালের মতো এ গাছ মোটেই জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। গ্রীষ্মকালেও অধিক বৃষ্টিপাত হলেও অনেক সময় গাছ মারা যায়। স্ট্রবেরির চাষাবাদে গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেদিকে তাই সযত্নে দৃষ্টি রাখতে হয়। শুষ্ক মৌসুমে হাল্কা পানিসেচেরও প্রয়োজন হয়। এছাড়া ফলকে মাটির সংস্পর্শ থেকে রক্ষা করার জন্য খড় বিছিয়ে দিয়ে তার ওপর গাছ তুলে দিতে পারলে ভালো হয়। উল্লেখ্য, একবার লাগানো গাছ থেকে একটানা ৪-৫ বছর ফল পাওয়া সম্ভব।

 পেঁপে সারা বছর চাষাবাদ সম্ভব হলেও বিশেষজ্ঞরা বলেন বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের জন্য আশ্বিন-কার্তিক অথবা ফাল্গুন-চৈত্র মাস উপযুক্ত সময়। নির্বাচিত সময়ের মাস দু’য়েক আগে চারা তৈরির জন্য বীজ বপণ করতে হয়। বীজের জন্য অবশ্যই আকারে বড়, ভালো ও মিষ্টি পেঁপে নির্বাচন করতে হবে। বীজের উপরের সাদা আবরণ সরিয়ে (এজন্য ছাই ব্যবহারা করা যেতে পারে) টাটকা অবস্থায় বীজ পলি ব্যাগ অথবা পূর্ব প্রস্তুতকৃত বীজতলায় বপণ করতে হয়। বীজ বপণের ১৫-২০ দিনের মধ্যে সাধারণত পেঁপের চারা গজায়। দেড় থেকে দু’মাস বয়সের চারা যত্ন পূর্বক পূর্ব প্রস্তুতকৃত মাদায় লাগাতে হয়। দুই মিটার দূরে দূরে মাদার আকার হবে ৬০ দ্ধ ৬০ দ্ধ৬০ সে.মি। উল্লেখ্য পেঁপে সবজি ও ফল এ দু’ভাবে ব্যবহৃত হয়। পেঁপের ত্বক হাল্কা হলদে বর্ণ ধারণ করলে ফল হিসেবে এবং কষ জলীয়ভাব ধারণ করলে সবজি হিসেবে সংগ্রহ করা যায়।

 অবস্থার প্রেক্ষিতে এখন দেশিয় ছোট মাছের চাষের কথা ভাবতে হচ্ছে। মলা-চেলা ও পুটি মাছের মতো দেশিয় ছোট মাছ পরিকল্পিতভাবে চাষের একটা বিশেষ সুবিধা হচ্ছে, প্রতি বছর পোনা ছাড়তে হয় না। স্বাভাবিকভাবে প্রাকৃতিক জলজ পরিবেশে এ ধরণের মাছ বংশবিস্তার করতে পারে। ক্ষুদ্রায়তনের পুকুরেও এ ধরনের মাছ চাষ করা যায। স্থানীয়ভাবে এ ধরণের মাছের পোনা সংগ্রহ করে চাষকৃত পুকুরে মজুদ ও সংরক্ষণ করা যায়। ছোট মাছের প্রধান প্রজনন মৌসুম বৈশাখ-আষাঢ় মাস। এ সময়ে চাষকৃত পুকুরে ছোট ফাঁসের জালটানা থেকে বিরত থাকতে হবে। উল্লেখ্য, মনুষ্য সৃষ্ট নানা কারণে এখন দেশিয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিলুপ্তের পথে। যদিও এসব ছোট মাছে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। তাই পুষ্টিমানের দিক থেকে খাদ্য হিসেবেও এ ধরণের মাছের অবদান উল্লেখযোগ্য। বাজারে চাহিদাও প্রচুর।

 কলার চাষাবাদে একটা প্রধান সমস্যা হলো কলায় দাগ পড়া। ফলে বাজারজাত করণে সমস্যার সৃষ্টি হয়। দাগ পড়া কলা ক্রেতা আগ্রহ সহকারে কিনতে চান না। ফলে প্রায়ই কৃষক/কৃষাণী উপযুক্ত মূল্য পান না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, পোকার কারণে কলায় দাগ পড়ে। এ পোকা কলার নতুন বের হওয়া কচি পাতার সবুজাংশ কুরে কুরে খায়। কলার মোচা বের হওয়ার সাথে সাথে পোকা পাতা ছেড়ে মোচায় আক্রমণ করে। এতে করে কচি কলার গায়ে দাগ পড়ে। কলা ছোট অবস্থায় এই দাগ বেশি দেখা যায় না, বড় হওয়ার সাথে এ দাগ বড় হয় এবং স্পষ্টভাবে ভেসে ওঠে। এর প্রতিকারের জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ। উল্লেখ্য, এ ধরণের পোকার আক্রমণে আক্রান্ত পাতা নিস্তেজ হয়ে পড়ে, গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং ফল আকারে ছোট হয়, সাথে সাথে কাঁদিতে পুষ্ট কলার সংখ্যা কমে যায়। যা চাষাবাদে ক্ষতিকর।

 দেশের বিভিন্ন এলাকায় এখন বিনাচাষে রসুন চাষাবাদ হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সাধারণত কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে নরম মাটিতে বিনা চাষে রসুনের বীজ (কোয়া) লাগানো হয়ে থাকে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, এ পদ্ধতিতে আগাছা যেমন কম জমে, তেমনি সারের ব্যবহারও কম করতে হয়। পরিশ্রম ও ব্যয় সাশ্রয়ী এ পদ্ধতিতে রসুনের ফলনও ভালো হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, দোঁআশ ও এঁটেল দোআঁশ মাটি রসুনের চাষাবাদের জন্য উত্তম। বলা বাহুল্য, বিনা চাষের এ পদ্ধতিটা সৃজনশীল কৃষকদের নিজস্ব উদ্ভাবিত।

লেখক: সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা)।

 

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!