রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আব্দুর রশীদ লুলু

চাষাবাদ বিষয়ক টুকিটাকি – ৩৬



 পেঁয়াজ চাষাবাদের জন্য বেলে-দোআঁশ মাটি উত্তম। তবে সে মাটি বার বার চাষ ও মই দিয়ে বেশ ঝুরঝুরে করে নিতে হয়। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সুনিষ্কাশিত ও উত্তম জৈব পদার্থযুক্ত মাটিতে পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়। চাষাবাদের জন্য দেশিসহ পেঁয়াজের অনেকগুলো জাত রয়েছে। এর মধ্যে ভালো কয়েকটি জাত হলো: বারি পেঁয়াজ-১ (তাহেরপুরী), বারি পেঁয়াজ-২ (রবি মৌসুম) এবং বারি পেঁয়াজ-৩ (খরিপ মৌসুম)। দেশে সাধারণত: তিনটি পদ্ধতিতে পেঁয়াজ চাষাবাদ করা হয়; ০১. জমিতে সরাসরি বীজ ছিটিয়ে, ০২. বাল্প রোপণ করে এবং ০৩. বীজ তলায় বীজ বপণ করে পরে মূল জমিতে পরিকল্পিতভাবে রোপণ করে। অভিজ্ঞরা বলেন, শেষোক্ত পদ্ধতিতে পেঁয়াজের চাষাবাদ ভালো হয়।

 জনপ্রিয় সবজি ফুলকপি চাষাবাদের জন্য বীজ বপণের উপযুক্ত সময় আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাস। তবে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত লেট চাষাবাদরে জন্য বীজ বপণ করা যেতে পারে। প্রতি শতকে সাধারণত: দুই গ্রাম বীজই যথেষ্ট। ফুলকপির চাষাবাদে ভালো ফলনের জন্য কতকগুলো বিষয়ে সযত্ন দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। সেগুলো হলো – চাষাবাদের জন্য পানি নিষ্কাশনের সুবিধা সম্বলিত উঁচু জমি নির্বাচন করা, আগাছা দমণ, মাটির জো বুঝে সময় মতো পানি সেচ প্রদান, রোগ-বালাই ও ক্ষতিকর পোকা দমণে উপযুক্ত ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, সঠিক বয়সের ও সুস্থ-সবল চারা মূল জমিতে যত্নে রোপণ, সময়মতো ও পরিমিত সার প্রদান এবং অন্যান্য অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা সঠিক সময়ে ও নিয়মে অব্যাহত রাখা।

 প্রচুর সূর্য্যকিরণ পড়ে এবং পানি জমে না এমন জমি বাঁধাকপি চাষাবাদের জন্য নির্বাচন করা উচিৎ। সেপ্টেম্বরে চারা লাগিয়ে কোন কোন কৃষক/কৃষাণী একই চারা থেকে একাধিক বাঁধাকপি উৎপাদন করছেন এমন খবর সংবাদ মাধ্যম থেকে পাওয়া যাচ্ছে। বাঁধাকপির চারা লাগানোর নব্বই দিনের মাথায় সাধারণত প্রথম মূল বাঁধাকপি সংগ্রহ/উত্তোলন করা হয়। একই গাছ থেকে একাধিক বাঁধাকপি পেতে মূল ফলন কাটার সময় কপির নীচের দিকে ৩/৪ টি পাতা রেখে কাটতে হবে। এতে গাছের সাথে থাকা পাতাগুলোর সংযোগস্থল থেকে নতুন কপির জন্ম হয়। উপযুক্ত পরিচর্যায় ৫০-৬০ দিন পর ওই নতুন কপি সংগ্রহ/উত্তোলন করা সম্ভব। একই গাছ থেকে একাধিক বাঁধাকপি উৎপাদনের এর পদ্ধতি নিঃসন্দেহে চাষাবাদে লাভজনক।

 লাউ চাষাবাদের জন্য ভাদ্র থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত উপযুক্ত সময়। এর চাষাবাদের জন্য প্রধানত উর্বর দোআঁশ ও এঁটেল দোআঁশ মাটি উত্তম। লাউয়ের ভালো জাতের মধ্যে আছে; বারি লাউ-১ এবং বারি লাউ-২। হাইব্রিড জাতের মধ্যে ডায়না এবং মার্টিনা উল্লেখযোগ্য। লাউকে বলা হয় পানিপ্রিয় সবজি। এর চাষাবাদে তাই নিয়মিত পানি সেচ দিতে হয়। এতে গাছ দ্রুত বাড়ে (ডালপালা মেলে) এবং ফলনও ভালো হয়। এ ছাড়া বাড়-বাড়ন্ত ও ফলন বৃদ্ধির জন্য আগাছা দমণ করতে হয়। উল্লেখ্য, লাউ এর গাছ লতা জাতীয় হওয়ায় ২০-২৫ সে.মি. লম্বা হলেই বাউনী/মাচার ব্যবস্থা করতে হয়। মৌমাছি বা এ জাতীয় কীট-প্রত্যঙ্গের অভাবে পরাগায়ণের ঘাটতিতে ফলন আশানুরূপ না হলে কৃত্রিম পরাগায়ণের ব্যবস্থা নিতে হবে।

 দেশের আবহাওয়া জলপাই চাষাবাদের জন্য অত্যন্ত উপযোগি। দেশের প্রত্যেক অঞ্চলে সহজেই জলপাই চাষাবাদ সম্ভব। পুষ্টি সমৃদ্ধ এ ফল সাধারণত: বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার/চাষাবাদ করা হয়। তবে চোখ কলম, গুটি কলম ও শাখা কলমের মাধ্যমেও এর বংশবিস্তার সম্ভব। বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের জন্য ৮-১০ মিটার দূরত্বে গাছ রোপণ করতে হয়। ভালো ফলনের জন্য উপযুক্ত পরিচর্যা ও নিয়ম মতো সার প্রয়োগ করা উচিৎ। উল্লেখ্য, জলপাই গাছে বর্ষার প্রারম্ভে ফুল আসে এবং শীতের আগেই ফল পেকে থাকে। উপযুক্ত পরিচর্যায় একটি পূর্ণ বয়স্ক গাছে বছরে ২০০-২৫০ কেজি ফল পাওয়া যায়। জলপাই চাষাবাদে একটি ভালো দিক হলো, এ গাছে তেমন কোনো পোকা মাকড় এবং রোগ বালাইয়ের আক্রমণ হয় না।

 এঁটেল মাটি ছাড়া যে কোনো মাটিতেই শিম চাষাবাদ করা যায়। আগাম শিম চাষাবাদের জন্য বীজ বপণের উপযুক্ত সময় আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাস। আগাম চাষাবাদের একটি দেশিয় শিম হচ্ছে কার্তিকা। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উদ্ভাবিত বারি-১, বারি-২, বারি-৫ এবং বারি-৬ জাতের শিমও আগাম চাষাবাদ করা যায়। উল্লেখ্য, দেশে অনেকেই আগাম শিম চাষাবাদের মাধ্যমে সফলতা ও সচ্ছলতা পেয়েছেন। বলা হয়, ‘আগাম শিম চাষ করলে, পুষ্টি ও অর্থ দুই-ই মেলে।’ সঠিক যত্ন ও পরিচর্যায় আগাম শিম চাষাবাদে বিঘাপ্রতি সাধারণত ৪০-৫০ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যেতে পারে। ২৮ নভেম্বর ২০১৩

লেখক: সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা)।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!