পর্যটনে গেলে আমরা আনন্দিত হই। স্বচক্ষে দেখার আনন্দই আলাদা। কিন্তু যদি তেমন সুযোগ না ঘটে তবে ভ্রমণ সাহিত্য পাঠে আমরা সে আনন্দ লাভ করতে পারি। আর সে ভ্রমণ সাহিত্য যদি হয় রসালো তাহলে তো সোনায় সোহাগা। ‘মালয়েশিয়া ভ্রমণ’ বইটা হাতে পেয়েছি— সে এক অন্যরকম উষ্ণতা। পড়ছি আর মনে হচ্ছে স্বয়ং মালয়েশিয়াতে ভ্রমণ করছি। আর দুই দেশের ফারাক বোঝার চেষ্টা করছি। এটা এমন একটা আনন্দপাঠ— যার বর্ণনার ফাঁকে রয়েছে নিজ দেশকে এরূপ একটা ঔজ্জ্বল্যে দেখার বাসনা। কারণ নানা অসংগতিতে ভরা আমাদের দেশ।
‘মালয়েশিয়া ভ্রমণ’ (২০২৩) লিখেছেন বহুমাত্রিক লেখক ও গবেষক, কবি স্বপন নাথ। প্রকাশক : হাওলাদার প্রকাশনী। যাত্রার শুরুর দিকে লেখক জানাচ্ছেন, “বেশ কিছু সময় বিমান বন্দরে অপেক্ষা। আমাদের দলের সদস্যদের ইমিগ্রেশন শুরু হলো। খুব ধীরে ধীরে কাজ হচ্ছে দেখে সবাই খুব বিরক্ত। কারণ অনেক ভীড় ও লম্বা লাইন। অনেকক্ষণ দাঁড়াতে দাঁড়াতে মেঝেতে অনেকে বসেই পড়েছিলেন। এখানে প্রমাণ পাওয়া গেল— আমরা এ কাজে কত অপরিপক্ব। (পৃ.১০) তারপর বাঙালির আচরণ, লংকাউই বিমান বন্দরের অভিজ্ঞতা। “মালয়েশিয়ার মাটিতে পা রেখেই এর বাস্তবতা অনুভূত হয়েছে, কেন, কী কারণে এখানে আসে লোকজন। আকর্ষণই বা কীসে। শুধু দেশের আর্থ—সামাজিক উন্নয়ন নয়, পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন, তা মালয়েশিয়ার সরকার করেছে। ফলে, মালয়েশিয়া পর্যটনশিল্পে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে, লাভবান হচ্ছে।” (পৃ. ১৪)
ওই দেশের পরিষ্কার—পরিচ্ছন্নতা, নীরবতা, সৌন্দর্য প্রভৃতির বিবরণ পড়া শুরু করলে আর থামতে হবে না। পাঠ করতে করতে মনে হতে পারে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মালয়েশিয়া থেকে কম কিসে! কিন্তু মালয়েশিয়া পারে; আমরা পারি না কেন? তখন বিষয়টি কেবল ভ্রমণ সাহিত্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এটা হয়ে উঠে একটি স্বপ্নপাঠ। স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে একটা তুলনা চলে আসে। আর বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের অনগ্রসরতা ও সীমাবদ্ধতার কথাও ভাবায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এখন ভাবনার একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওরিয়েন্টাল ভিলেজের একটি রেস্টুরেন্টে দায়িত্বপালনরত তিন তরুণীর ফেসবুক আসক্তি দেখে লেখক জানান, “সারা পৃথিবীর যেন একই অসুখ— ইন্টারনেট আসক্তি। তারা কোনোভাবেই আমলে নিচ্ছে না যে, সময় বুঝে এসব করতে হয়। এটা শুধু সেখানে নয়, সর্বত্রই চোখে পড়ে; আমাদের দেশেও।” (পৃ. ১৯)
পর্যটককে আকৃষ্ট করার জন্য মালয়েশিয়ার সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে তার বিবরণ তো আছেই। এখানে ‘কাচঘেরা জলজ জীবন’ অধ্যায় থেকে একটুখানি উদ্ধৃতি দিই, “জাদুঘর আকৃতির অ্যাকুরিয়াম তৈরি করে সামুদ্রিক দুনিয়াকে উপস্থাপনের এক অনন্য কৌশল। সমুদ্রের বিশাল অদেখা জগতকে উপলব্ধির সুযোগ করে দেওয়া। আন্ডার ওয়াটার—ওয়ার্লড এমন একটি অ্যাকুরিয়াম; যেখানে কৃত্রিমভাবে সামুদ্রিক ইকোসিস্টেমে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে।” (পৃ. ২২) আরও আছে অনেক কিছু। সেদেশের লোক অযথা হাল্লা—চিৎকার করে না। এমনকি শব্দ দূষণ বা অন্যের বিরক্তির কারণ হবে বলে গাড়ির হর্ন পর্যন্ত বাজায় না। লেখক জানাচ্ছেন, “পরে জেনেছি হর্ন বাজানোর ক্রিয়াকে তারা অসভ্যতা মনে করে।” (পৃ. ২৭) ওখানকার ভালো বৈশিষ্ট্যগুলো কী? আমাদের দেশের প্রকৃতি ও সামুদ্রিক এলাকা সুন্দর থাকা সত্ত্বেও আমরা সাজাতে পারি না কেন? লংকাউইয়ে হনুমান মন্দির কেন? ইত্যাদি হরেক রকম প্রশ্ন জাগবে মনে। ওই দেশের একটা সাধারণ পাখি ঈগল, তার ঐতিহ্যকে কাজে লাগিয়েছে মালয়েশিয়ানরা। আকৃষ্ট করছে পর্যটককে। কিন্তু কীভাবে? পর্যটনের বিকাশে মালয়েশিয়ার সরকার অর্থকেন্দ্রিক চিন্তা যেমন করেছে তেমনি নজর রেখেছে ইকো—ফরেস্টের দিকে। এসব বিবরণ যেমন উপভোগ্য তেমনি ভাবনার বিষয়। মানুষের চরিত্র সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায় এখানে। হোপিং দ্বীপে ভ্রমণ সঙ্গীর ব্যাগ—পাসপোর্ট হারিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে বিদেশের মাটিতে যে টেনশনের সূত্রপাত হয়— তার সমাধান হয় স্পিডবোর্ডের ড্রাইভার মোহাম্মদ সোয়ামির মহত্ত্বে। এখানেও বাঙালির চরিত্রের সাথে একজন মালয়েশিয়ানের পার্থক্য করা যায়। ভ্রমণে গিয়ে কত লোকের মূল্যবান জিনিসপত্র হারায়। কিন্তু তা বাঙালির হাতে পড়লে ফেরত দেওয়া তো দূরের কথা আত্মসাতের চিন্তাটাই আগে আসে মাথায়।
‘লংকাউই থেকে টঙ্গি’র বর্ণনায় বন—বনানি, জঙ্গল, ঝরনার মনোরম বিবরণ পড়তে পড়তে পাঠক উপলব্ধি করবেন আমাদের দেশের বন উজাড়ের করুণার্তি। উপলব্ধি করবেন এই ভারতীয় সভ্যতায় বন—জঙ্গলের মাহাত্ম্য। ডরিন জলপ্রপাতকে সে দেশের লোকেরা কেন এত প্রাধান্য দেয়? আমাদের মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের সাথে ডরিন জলপ্রপাতের একটি তুলনামূলক আলোচনাও আছে। “সমস্ত পরিবেশ দেখে বোঝা যায়, মালয়েশিয়াতে সংরক্ষিত এলাকা থেকে কেউ গাছ চুরি করে নিয়ে যায় না। প্রকৃতি তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়েই বিদ্যমান। মালয়েশিয়ার জনগণের প্রকৃতি সচেতনতা দেখে মুগ্ধ হই। মূলত, তারা টেকসই বন ও উন্নয়নের ধারায় প্রকৃতির স্থিতি বজায় রেখেছে।” (পৃ. ৫৩) তখন দুইদেশের পর্যটন শিল্পের পরিকল্পনাবিদদের পার্থক্যটা স্পষ্ট হয়ে যায়। লেখক আফসোস করে বলেন, আমাদের মাধবকুণ্ড নেই, আছে কৃত্রিম পর্যটন। নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মার উদ্ধৃতি দিয়ে লেখক পাঠকের কাছে বিষয়টা খোলাসা করেছেন। “যেখানে স্বাভাবিক অরণ্যের পুনর্জন্ম প্রয়োজন সেখানে চির—খুঁড়ে গাছের আবাদ বানানো পাহাড়ের স্থিতি ও পরিবেশের জন্য বিপর্যয়ী হবে তা বলাই বাহুল্য। বিশাল এলাকা এখন বনশূন্য হলে বন্যপ্রাণী ও পাখিরা যাবে কোথায়? আমরা প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা নিয়ে কথা বলি, কিন্তু কার্যত চলি উল্টো পথে। কেন এমনটি ঘটে? এই অসংগতির উৎস কোথায়?” (পৃ. ৫৩) ডরিন জলপ্রপাতে লেখক মালয়েশিয়া সরকারের পরিবেশবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ্য করেছেন— যা মনোমুগ্ধকর।
বাইরে নীতিবাদী; ভিতরে সুবিধাবাদী— এমন বাঙালির অভাব নেই। সেরকমই একটা দৃষ্টান্ত আছে ‘আলোছায়ার দৃশ্যমান ভূমিপুত্র’ অংশে। আবার ভিতরে ভিতরে কষ্ট পাচ্ছেন; কিন্তু বাইরে হাসিমুখে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছেন— এমন দৃষ্টান্তও রয়েছে। ভ্রমণে গিয়ে লেখক সবদিকেই দৃষ্টি ছড়িয়ে দিয়েছেন।
ড. মাহাথির মোহাম্মদ এর সৃজনশীল পরিকল্পনায় নির্মিত পুত্রাজায়া সিটির বর্ণনায় আপ্লুত হবেন পাঠক। কারণ তখন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের চিত্র মাথায় ঘুরঘুর করবে— আর মনে হবে আমাদের দেশে এত বড় বড় ব্যক্তিত্ব, ক্ষমতা, ধন—সম্পদ থাকা সত্ত্বেও একটা সুপরিকল্পিত রাজধানী করতে পারি না কেন? পুত্রাজায়ার সৌন্দর্য দেখতে দেখতে লেখক যখন কুয়ালালামপুরের ব্যস্ততম এলাকা বুকিত বিনতাং—এ আসেন তখন কিছু বাঙালির স্বভাব চরিত্র দেখার সুযোগ ঘটে। ‘রসনা বিলাস’ নামক হোটেলের বাঙালি মালিক ও তার ছোট ভাই যেন কুরুচিপূর্ণ প্রবাসী বাঙালির এক জলজ্যান্ত দৃষ্টান্ত। এই অংশে আছে মালয়েশিয়ার সৌন্দর্যের বুকে এক টুকরো নোংরা বাংলাদেশ। উন্নত মালয়েশিয়া গঠনের পূর্বে মাহাথির তার দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় কীভাবে বিপ্লব ঘটালেন তারও বিবরণ আছে। “মাহাথির লক্ষ করলেন, শুধু ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মেলানো যাবে না। ওখান থেকে লিডারশিপ তৈরি হওয়া সম্ভব নয়। কারণ, রাজনীতি, অর্থনীতি আর বাস্তব জীবন এক জটিল দুনিয়া। ফলে জাগতিক কোনো সমস্যার সমাধান প্রচলিত শিক্ষা থেকে আশা করা যায় না। যা থেকে শুধুই ইসলামি স্কলার তৈরি হচ্ছে, কিন্তু সমকালীন বিশ্বের জ্ঞানচর্চা না থাকায় পুরো মুসলিমবিশ্ব পিছিয়ে গেছে গবেষণা ও নতুন জ্ঞান সৃষ্টির ক্ষেত্রে। এছাড়াও সমাজে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে প্রচলিত নানামুখি শিক্ষার কারণে।” (পৃ. ৭৯) সঙ্গত কারণেই মাহাথির সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনা গ্রহণ করে সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন মালয়েশিয়ায়। তার ফলাফল দুনিয়া দেখছে। ‘আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, মালয়েশিয়া’ পরিদর্শনে গিয়ে লেখক সেখানে পর্যবেক্ষণ করেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরি করা এক বাঙালিকে— যার চরিত্রে আছে বাঙালিসুলভ অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য। তিনি সহযোগিতা করলে হয়তো মালয়েশিয়ার শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য পাওয়া যেত।
মালয়েশিয়ার কোনো নাগরিক নাকি ‘অমুক ভাই’, ‘অমুক আপা’ সম্বোধন পছন্দ করেন না। লেখকের ‘ব্রাদার হাসান’ সম্বোধনে কী ঘটেছিল তা জানলে পাঠক মালয়েশিয়া ভ্রমণে অন্তত সতর্ক থাকতে পারবেন। ভ্রমণ কাহিনির মাঝে মালয়েশিয়ার পরিষ্কার—পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি বার বার এসেছে— যাতে মালয়েশিয়ানদের রুচিবোধের পরিচয় পাওয়া যায়। “কোথায় পড়ে আছি আমরা আর কোথায় পৌঁছে গেছে তারা, তা কী আর বলতে হয়।” (পৃ. ৮৬) ‘জেনটিক হাইল্যান্ড’ ভ্রমণের এক পর্যায়ে সিনথির সাথে দেখা— স্মরণীয়, বিস্ময়ভরা এক মধুর বিবরণ।
‘প্রাগৈতিহাসিক নন্দন ও ঐতিহ্য’ (পৃ. ৯৫) তথ্য সমৃদ্ধ একটি অধ্যায়। এখানে মালয়েশিয়ার আদি অধিবাসী ওরাংগোষ্ঠীর উত্তরাধিকারী তেমুয়ান আদিবাসী সম্পর্কে জানা যায়। প্রায় ৪০ কোটি বছর আগে গঠিত একটি গুহার বিবরণ— যেখানে আশ্রয় নিয়েছিল আদিবাসীরা, গমবাক জেলার বাতুকেভ গুহা—মন্দির ইত্যাদি প্রাগৈতিহাসিক চিহ্ন সহ রামায়ণ, মহাভারতের ঐতিহ্যকে মালয়েশিয়ার সরকার কত যত্নে রক্ষা করেছে— তা ভাবলেই বিস্ময় জাগে। ‘ন্যাশনাল মিউজিয়াম’ ভ্রমণ বৃত্তান্ত থেকে জানা যায়, মালয় জাতির উৎস ওরাংআসিল আদিবাসী। আরও জানা যায় মালয়েশিয়ায় হিন্দু—বৌদ্ধ—মুসলিম—পতুর্গিজ—ডাচ—ব্রিটিশ—জাপানিদের শাসন, কমিউনিস্টদের রাজনীতির উত্থান—পতন সম্পর্কে।
এটা শুধু একটা ভ্রমণ কাহিনি নয়— বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার অনেক বিষয়ের তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের অসংগতিগুলোর প্রতি পাঠকের মনোযোগ আকৃষ্ট হয় স্বাভাবিকভাবেই। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে মালয়েশিয়া কাজে লাগিয়ে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটিয়েছে এবং তা সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব উপায়ে। আর আমাদের দেশের পর্যটন ও ইকোপার্কের নামে বনজঙ্গল, পাহাড়, টিলা কেটে ফেলা হচ্ছে। সামাজিক বনায়নের নামে এদেশের মাটি—জল—আবহাওয়া বিবেচনায় না নিয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করা হচ্ছে। দুই দেশের পরিকল্পনাবিদদের মধ্যে কত প্রভেদ!
ভ্রমণে শুধু যে মালয়েশিয়ার ভালো দিকগুলো লেখকের চোখে পড়েছে তা নয়, অনেক নেগেটিভ দিকও নজর এড়ায়নি। যেমন: ভালো একটি বইয়ের দোকানের অভাব, অবাধ তথ্যসরবরাহের অভাব, কোনো কোনো মালয়েশিয়ানের চারিত্রিক দুর্বলতা ইত্যাদি ত্রুটিগুলোও বর্ণনায় এসেছে।
ভ্রমণ কাহিনির শেষ দিকে আছে ‘মালাক্কা : ইতিহাসের শহর’ শিরোনামের একটি অধ্যায়। নানা কারণেই মালাক্কায় ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। ইউনেস্কো মালাক্কাকে বিশ্বঐতিহ্যের শহর হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। কৌতূহলী পাঠক ইতিহাসের নগরী মালাক্কার অনেক অজানা তথ্যের সন্ধান পাবেন। চতুর্দশ শতকে প্রতিষ্ঠিত এ নগরীর নামকরণ নিয়েও আছে চমৎকার একটি গল্প। এই নগরে আছে ডাচ কলোনি, আমাদের আছে পানাম নগরী। তবে লেখকের সাথে পাঠকেরও আফসোস জাগবে যে, ওখানে ইতিহাসকে রক্ষা করা হয়েছে আর আমাদের এখানে ইতিহাস—ঐতিহ্যকে অবহেলা করা হচ্ছে। বিভিন্ন প্রাচীন স্থাপনা, জাদুঘর, মালাক্কা নদী ও নদী তীরবর্তী আবাসিক এলাকা, ভারতি রেস্তোরাঁ, কলাপাতায় খাবার পরিবেশন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এসবের মনকাড়া বিবরণ এবং মুগ্ধতা। মালাক্কা শহরে একই স্ট্রিটে পাশাপাশি তিনটি ধর্মের উপাসনালয় অবস্থান করে কীভাবে সম্প্রীতির মেলবন্ধন তৈরি করেছে তার এক অনন্য দৃষ্টান্ত আছে ‘মালাক্কা : সম্প্রীতির ঠিকানা’ (পৃ. ১৭৬) অংশে। লেখক যদিও বলেছেন, “মালয়েশিয়ার ভিতরের দুনিয়াতে কি আছে জানি না, কিন্তু বহির্জগতে ভালো লাগার সবই আছে।” (পৃ. ১৯০) পুরো বই পড়ে দেখা যায়, লেখক শুধু বাহ্যিকভাবেই মালয়েশিয়া ভ্রমণ করেননি; বরং অন্তদৃর্ষ্টি দিয়ে ভিতরের অনেক কথাই সূক্ষ্মভাবে তুলে এনেছেন। এমনকি মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিক সম্পর্কেও তথ্য দিয়েছেন।
বর্ণনার মাঝে মাঝে প্রাসঙ্গিক ছবি, কবিতা, গল্প ইত্যাদি থাকায় ভ্রমণ কাহিনি হয়েছে আকর্ষণীয়। এখানে শুধু সাহিত্যের রসই নয়, বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে তার গাইডলাইনও পাওয়া যাবে।
মালয়েশিয়া ভ্রমণ
লেখক: স্বপন নাথ।
প্রকাশক : হাওলাদার প্রকাশনী, ঢাকা
প্রকাশকাল : ২০২৩
প্রচ্ছদ : এম এ আরিফ
মূল্য : ৩৫০.০০ টাকা
লেখক: দীপংকর শীল, প্রভাষক, বাংলা বিভাগ, কমলগঞ্জ সরকারি গণমহাবিদ্যালয়, কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার।