সিয়াম পালন নিশ্চয় পূণ্যের, সাওয়াবের ও নেকীর। সবদিক বিবেচনায় সিয়াম সাধনায় রয়েছে শুধু কল্যাণ আর মঙ্গল। উপকার ও লাভ। ভাল ও শ্রেয়। শুভ ও হিত। সমৃদ্ধি ও উন্নতি। নাফা ও ফায়দা। সিয়ামে রয়েছে ই’বাদতের অন্যতম সুন্দর উপাদান ও সমৃদ্ধ উপকরণ। সাওমের প্রতিটি মুহূর্ত হয়ত সাওয়াব মুক্ত নয়। এমনকি ঘুমিয়েও রোযাদার রোযার সাওয়াব অর্জন করতে থাকে।
রোযার সাওয়াব আবার এমন বিস্ময়কর সাওয়াব যা স্বয়ং মা’বূদ তাঁর বিশেষ ট্রেজার থেকে নিজ দায়িত্বে প্রদান করেন। এটি সাওয়াবের ক্ষেত্রে অসাধারণ।অন্যান্য ই’বাদাতের সাওয়াবের তুলনায় এটি অদ্ভুত। এটি বিচিত্র। এটি অপূর্ব। সাওয়াব প্রত্যাশী একজন সায়িম বা রোযাদারের জন্য এটি বিরল প্রাপ্তি।দুর্লভ অর্জন। অস্বভাবিক অত্যুত্তম উপার্জন। অসামান্য পাওয়া।
সাওম বা রোযা দ্বারা স্বাতন্ত্র্য পূণ্য ও দুষ্প্রাপ্য নেকী সঞ্চয় করেন একজন সাওম পালনকারী মুসলিম।শুধু সাওয়াবেই থেমে থাকে না তাঁর অর্জন।তিনি অকল্পনীয় সম্মান। অননুমেয় মান।অভাবনীয় কদর।ধারণাতীত মর্যাদা। অচিন্তনীয় আদর। অবিশ্বাস্য ইযযাত। এ সবকিছুই একজন রোযাদার লাভ করেন রোযা রেখে। সাওম আরাধনা করে। সিয়াম সাধনা করে।
সাওয়াব হয়ত একটি জান্নাতী মুদ্রা। আখিরাতের কারেন্সি। আর এই জান্নাতী মুদ্রা,আখিরাতের প্রয়োজনের জন্য ‘আমলনামা’ খ্যাত সঞ্চয়ী একাউন্টে জমা হতে থাকে। যদিও রাহিম ও রাহমান আল্লাহর রাহমাতের অনুকম্পায় জান্নাত ও জান্নাতের সুখ ইত্যাদি নির্ধারিত হবে তবুও কিন্তু মুসলিমের অর্জিত সাওয়াবও হয়ত ওজন করা হবে। সব পূণ্য হয়ত মাপা হবে। যদি পূণ্যে ঘাটতি হয়,তখন হয়ত জান্নাতি প্রাচুর্য লাভে কমতি হবে। আর যদি পাপ,পূণ্যকে ছাপিয়ে যায়,তবে তো সর্বনাশা দুর্গতির চাপ শুরু হয়ে যাবে। তাইতো প্রতিটি মুসলিমকে সেদিনের আগেই সেদিনের জন্য এখনই নিরলস ভাবে সাওয়াব সংগ্রহ করতে হবে।
রামাদ্বান, সাওয়াব উপার্জনের ভরা মৌসুম। রামাদ্বানের ই’বাদাতে বাড়তি সাওয়াবের আশ্বাস আছে। সাথে আছে মাঘফিরাতের আধিক্য। বারাকাতের বাহুল্য। রাহমাতের আতিশয্য। সব মিলিয়ে রামাদ্বান মুসলিম জীবনে অনন্য এক সাওয়াব আহরণের মাস।
রামাদ্বানে সিয়াম আরাধনা যাদের জন্য অপরিহার্য, তাদের জন্য সাওম বা রোযা রাখা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। এটি মহান রাব্বের সিদ্ধান্ত। বান্দার কোন ইচ্ছা, কোন অভিলাষ এখানে প্রযোজ্য নয়। বান্দা তা অমান্য করলে মালিকের জঘন্য অবাধ্যতা হবে,যা চরম গর্হিত কাজ এবং যা রব্বানী বিধিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সেহেতু রামাদ্বানের প্রতিদিন সাওম পালন একটি দায়িত্ব।
আবার যেমন অনেক সময় অর্পিত একটি দায়িত্ব আদায় করতে যেয়ে সাথে অনেকগুলো কর্তব্যও পালন করতে হয় যাতে করে প্রদত্ত মূল দায়িত্ব পালন যেন যথাযথ হয়।
যেমন সালাত আদায় করতে যেয়ে নিষ্ঠা, একাগ্রতা এবং খুশু’ অবলম্বন করলে নামায বা সালাহকে যথার্থ অর্থবহ করে তুলবে। তখন পূর্ণাঙ্গ সাওয়াবও অবধারিত হবে। তেমনি সাওম পালনে নিশ্চিত সাওয়াব অর্জন করতে এবং সাওমের অন্তর্নিহিত প্রায়োগিক অনুশাসন বাস্তবায়ন করতে এবং সাওমের মৌলিক শিক্ষাকে কার্যে রূপান্তর করতে হলে,সাওম পালনকালীন সময়ে সায়িমকে অর্থাৎ যিনি রোযা রাখবেন তাকে অনেকগুলো কর্ম ও গুণ যেমন আয়ত্ত ও করায়ত্ত করতে হবে তেমনি অনেকগুলো মন্দ-স্বভাব ও বদ-অভ্যাসকে বর্জন ও বিসর্জন অথবা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।আর তা না করতে পারলে সিয়াম বা রোযার কাম্য সাফল্য হাসিল কখনো সম্ভব হবে না।
কিছু হাদীসে এমন কিছু নিষিদ্ধ কাজের বিবরণ বর্ণনা করা হয়েছে যেগুলো সাওম পালনকারীকে বিশেষ ভাবে পরিত্যাগ করার তাগিদ করা হয়েছে। এ গুলো ছাঁটাই করতে না পারলে সাওম ধারণকে তাৎপর্যপূর্ণ,ফলপ্রসূ এবং সাফল্যমন্ডিত করে তুলা যাবে না। এসব নিষ্ঠুর,ক্ষতিকর গর্হিত অভ্যাসকে ছাড়তে না পারলে এবং এসব ন্যক্কারজনক, নোংরা কর্ম থেকে নিজেকে মুক্ত করতে না পারলে সাওম পালনে দায়িত্ব পালন হবে বটে কিন্তু দায়িত্বের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ও কর্তব্য পালন হবে না। এবং এরকম সাওম দ্বারা মুসলিম-সুলভ গুণ অবমুক্ত ও জাগ্রত হবে না। এরকম রোযা বা সাওম পূণ্যের পূর্ণতা লাভে ধন্য হবে না। আর সেজন্য এরকম রোযা বা সাওম পূণ্য-শূন্যে পর্যবসিত ও নির্ণীত হয়ে যাবে।এসব রোযা দ্বারা প্রকৃত সাওয়াব ও কাঙ্খিত উপকার অর্জন হয় না।
এ কারণে,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা দিয়ে বলেছেন: “কত রোযা বা সাওম পালনকারী এমন যে তাদের সাওম পালনের বিনিময় ক্ষুধা ছাড়া আর কিছুই হয় না।এবং কত রাতে-ক্বিয়ামকারী এমনও যে,এ ক্বিয়ামের বিনিময় রাত জাগরণ ব্যতিত অন্য কিছুই (অর্জন) হয় না।”
এই অর্থপূর্ণ হাদীসটি,প্রচারিত ও প্রসারিত হয়েছে সাহাবী আবু হুরাইরাহ রাদ্বি আল্লাহু আনহু থেকে।
এবং এই সাহীহ হাদীসটি সুনানু ইবনি মাজাহ’র ১৬৯০ নাম্বার হাদীস।এ ছাড়াও এ হাদীস অন্যান্য হাদীস গ্রন্থেও রয়েছে।যেমন মুসনাদু আহমাদ(৮৬৩৯,৯৩৯২),
দারেমী(২৭২০), বায়হাক্বী(৪/২৭০),ইত্যাদিতে পাওয়া যাবে।এবং এ হাদীসটির আরেকটি বর্ণনা,বাক্যের সামান্য ব্যতিক্রম সহ মুসনাদু আহমাদে(৯৬৮৩)রয়েছে।
উল্লিখিত হাদীস রোযা পালনকারীর জন্য যেন কঠোর একটি সতর্কবাণী।
উপরে অনুবাদ কৃত হাদীসটির মূল আরবি হাদীস নিম্নে যোগ করছি:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم رُبَّ صَائِمٍ لَيْسَ لَهُ مِنْ صِيَامِهِ إِلَّا الْجُوعُ وَرُبَّ قَائِمٍ لَيْسَ لَهُ مِنْ
قِيَامِهِ إِلَّا السَّهَرُ
এবং উল্লিখিত হাদীসটির অপর এক ভার্সন নিচে দেওয়া হল:
رُبَّ صائمٍ حظُّهُ مِن صيامِهِ الجوعُ والعطَشُ، وربَّ قائمٍ حظُّهُ من قيامِهِ السَّهرُ .
লেখক: মুফতি