রাবিনা খান পূর্ব লণ্ডনের বাঙালি কমিউনিটিতে এক পরিচিত নাম, পরিচিত মুখ। সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণকারী রাবিনা মাত্র তিন বছর বয়সে ইংল্যাণ্ড চলে আসেন এবং রচেস্টার শহরে বেড়ে উঠেন। দীর্ঘ ৩০ বছরেরও অধিক সময় ধরে তিনি পরিবারসহ বেথনালগ্রীন ও স্টেপনী এলাকায় পরিবারসহ বসবাস করছেন। তিনি স্টেপনীর স্মিথি স্ট্রিট প্রাইমারি স্কুল এবং শ্যাডওয়েলের মালবেরি গার্লস স্কুলের গভর্নর হিসাবে কাজ করেছেন। এলাকায় সহজলভ্যতার জন্য তাঁর খ্যাতি আছে। তিনি একজন ফ্রিল্যান্স লেখক, কলামিস্ট ও উপন্যাসিক। রাজনীতিতেও তাঁর নানান পরিচয়। ছিলেন লেবার কাউন্সিলর। পরবর্তী সময়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট মেয়র ক্যান্ডিডেট। রাবিনা খানের রয়েছে জনসেবা এবং কমিউনিটি অ্যাডভোকেসির অসাধারণ সব রেকর্ড। তিনি দীর্ঘ ১২ বছর অন্যতম সক্রিয় কাউন্সিলর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সবচেয়ে বেশি কেসওয়ার্ক করেছেন। প্রাক্তন হাউজিং ক্যাবিনেট সদস্য হিসাবে তিনি হোয়াইটচ্যাপেল ভিশনকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, অসংখ্য ঘর নির্মাণে কাজ করেছেন এবং ওশান এস্টেট ও ব্ল্যাকওয়াল রিজেনারেশন মত প্রধান প্রকল্পগুলো তিনি পরিচালনা করেছেন। তিনি টেনেন্ট, লিজহোল্ডার এবং বাড়ির মালিকদের অধিকারের জন্য কাজ করেছেন, নাইফ ক্রাইমের বিরুদ্ধেও অনেক প্রচারণা করেছেন। আগামী ৪ জুলাই, বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনে বেথনালগ্রীন ও স্টেপনী আসনে এবার তিনি লিবারেল ডেমোক্রেট (লিবডেম) পার্টির এমপি প্রার্থী হয়েছেন। লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা বেথনাল গ্রীন এবং স্টেপনীর জন্য রাবিনা খানকে তাদের এমপি প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করেছেন। তিনি চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকেই বেথনাল গ্রীন ও স্টেপনীর ৮টি ওয়ার্ডে তাঁর নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। এবারের নির্বাচনে তিনি ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রার্থীদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে আছেন। ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়, উচ্চ ইউটিলিটি বিল, পুলিশিং, হাউজিং ও লিজহোল্ড সংক্রান্ত সকল সমস্যাসহ গাজায় যুদ্ধ বিরতি ইস্যুতে সম্প্রতি তিনি সাপ্তাহিক সুরমার সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাংবাদিক মুহাম্মাদ শরীফুজ্জামান। বালাগঞ্জ প্রতিদিনের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।
মুহা. শরীফুজ্জামান: আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন?
রাবিনা খান: ওয়ালাইকুমুস সালাম। আমি ভালো আছি। ধন্যবাদ।
মুহা. শরীফুজ্জামান: আপনি এমপি প্রার্থী হয়েছেন। এর আগে আপনি কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অভিজ্ঞতা কেমন?
রাবিনা খান: আমি ১৯৯২ সালে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে তরুণদের জন্য কাজের অভিজ্ঞতার স্থান নির্ধারণ করার মাধ্যমে আমার পেশাগত যাত্রা শুরু করি। পরবর্তীতে, আমি ন্যাশনাল ফ্রন্ট এবং কমব্যাট ১৮ উত্থানের চ্যালেঞ্জিং সময়ে আইল অফ ডগস সেফটি প্রজেক্টে জাতিগত নির্যাতনের শিকার মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সমর্থন ও সমন্বয়ের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। বেথনাল গ্রীন সিটি চ্যালেঞ্জ উদ্যোগের অধীনে বেথনাল গ্রীন এলাকায় মহিলাদের প্রকল্পগুলি পরিচালনা, স্থানান্তর এবং বারাতে কমিউনিটি প্রকল্পগুলির জন্য আমি সব সময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থেকেছি।
আমি ১২ বছর কাউন্সিলর হিসাবে কাজ করেছি। আমি স্টেপনীর স্মিথি স্ট্রিট প্রাইমারি স্কুল এবং শ্যাডওয়েলের মালবেরি গার্লস স্কুলে স্কুল গভর্নর হিসাবে কাজ করেছি। বর্তমানে আমি একটি চ্যারিটি অর্গানাইজেশনের হয়ে কাজ করছি এবং একজন ফ্রিল্যান্স এনসিটিজে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড সাংবাদিক হিসাবে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, দ্য গার্ডিয়ান, ইয়াহু নিউজ, দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট, ওয়াশিংটন পোস্টসহ অন্যান্য জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমে লেখালিখি করছি। আমি একজন লেখক এবং আমি বর্তমানে বার্কবেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়েটিভ রাইটিং-এ এমএ পড়ছি। একজন কাউন্সিলর হিসাবে আমার রেকর্ড নিজেই কথা বলে। কাউন্সিলর হিসাবে আমি সবচেয়ে বেশি সার্জারি পরিচালনা করেছি। আমি কখনোই দায়িত্ব ছেড়ে যাইনি, কোথাও অনুপস্থিত থাকিনি। কখনো ভেঙে পড়িনি। বারার বাসিন্দাদের জন্য আমি সবসময় ওকালতি করেছি, ওকালতিতে অবিচল থেকেছি। আমাদের জনগণ এবং কমিউনিটি সবসময় আমার কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলো এবং আছে। একজন নির্বাচনী এমপি হওয়া শুধুমাত্র একটি দায়িত্ব নেয়া নয়; এটি একটি অঙ্গীকার।
মুহা. শরীফুজ্জামান: মেয়র নির্বাচনে ব্যর্থ হয়েও এমপি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত কীভাবে নিলেন? আপনার মিশন বা লক্ষ্য কী?
রাবিনা খান: রাজনীতিকে প্রায়শই একটি রোলারকোস্টার রাইড হিসাবে বর্ণনা করা হয়, যা বিজয় এবং বিপর্যয় উভয়ে ভরা। আমরা ইতিহাসে অনেক রাজনীতিবিদদের উদাহরণ দেখতে পাই, যারা পরাজয়ের মুখোমুখি হয়েছেন কিন্তু আগের চেয়ে শক্তিশালী এবং আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে ফিরে এসেছেন। আমার দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটের বর্তমান নেতা স্যার এড ডেভি যিনি ২০১৫ সালে তাঁর আসন হারান এবং ২০১৯ সালে তা পুনরুদ্ধার করেন এবং নেতৃত্বে আরোহণ করেন। আপনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিঙ্কনের অসাধারণ যাত্রার কথা বিবেচনা করুন, যিনি শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হিসাবে দাস ব্যবসা বাতিল করার আগে আটটি নির্বাচনে পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছিলেন।
অ্যাঞ্জেলা মার্কেল এবং মার্গারেট থ্যাচার উভয়ই তাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের শুরুতে প্রাথমিক নির্বাচনে পরাজয়ের মুখোমুখি হন। এইসব বাধা সত্ত্বেও, তাঁরা তাদের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রতি অধ্যবসায়ী এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। মার্কেল, পূর্ব জার্মানিতে প্রথম অবাধ নির্বাচনে ব্যর্থ হওয়ার পরও রাজনীতিতে তাঁর যাত্রা অব্যাহত রেখেছিলেন এবং অবশেষে ১৯৯০ সালে জার্মান পার্লামেন্টে একটি আসন জিতেছিলেন। শুধু তাই না, তিনি ২০০৫ সালে জার্মানির চ্যান্সেলর হয়েছিলেন এবং ১৬ বছর তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন।
একইভাবে মার্গারেট থ্যাচার, যিনি একটি সংসদীয় আসন জেতার জন্য দুটি ব্যর্থ প্রচেষ্টার পরে তাঁর রাজনৈতিক যাত্রা চালিয়ে যেতে নিরুৎসাহিত ছিলেন। সেই তিনি ১৯৫৯ সালে পার্লামেন্টে একটি আসন জিতেছিলেন এবং ১৯৭৯ সালে যুক্তরাজ্যের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। তাদের প্রাথমিক পরাজয় সত্ত্বেও, মার্কেল এবং থ্যাচার উভয়েই পরবর্তীতে নিজ নিজ দেশে এবং বিশ্ব মঞ্চে একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেছিলেন।
এই গল্পগুলি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, রাস্তায় চলতে গেলে বাঁধা বিপত্তি আসবে। বিপত্তিগুলি রাস্তার শেষ নয়, বরং যাত্রার অংশ। সাফল্য প্রায়শই প্রতিকূলতা অতিক্রম করার পরে আসে। প্রতিকূলতা আমাদের স্থিতি, অধ্যবসায় এবং জীবনের অমূল্য পাঠ শেখায়। রাজনীতির জগতে নির্বাচনে দাঁড়ানো মানে শুধু জয়-পরাজয় নয়; এটা সাহসের সাথে আমরা যা বিশ্বাস করি তার পক্ষে সমর্থন করা; তা নিয়ে কাজ করা।
মুহা. শরীফুজ্জামান: আপনার পরিকল্পনার অগ্রাধিকার কী? নির্বাচিত হলে কোন কাজগুলো আপনি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করবেন?
রাবিনা খান: আমার দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটের একটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রয়েছে। ফিলিস্তিনকে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসেবে অবিলম্বে স্বীকৃতি দান, আবাসন সংকট ও অপরাধ কমানো, নতুন কাউন্সিল হোম তৈরি, লিজহোল্ড বাতিল, প্রাইভেট ভাড়াটিয়াদের অধিকার রক্ষা, নো-ফল্ট উচ্ছেদ নিষিদ্ধকরন, কমিউনিটি পুলিশিং বৃদ্ধি, এনএইচএস ও সোশ্যাল কেয়ার উন্নতকরণ, ইংল্যাণ্ডে বিনামূল্যে ব্যক্তিগত সেবা প্রদান, আরও ৮,০০০ জিপি তৈরি, প্রাথমিক বছরগুলির জন্য পিউপিল প্রিমিয়াম তিনগুণ করা, কেয়ারার্স অ্যালাওয়েন্স বৃদ্ধিকরণ, দুই-সন্তান সীমা বাতিলকরণ, ইউনিভার্সাল ক্রেডিট নিষেধাজ্ঞা বাতিলকরণ, ২০৪৫ সালের মধ্যে নিট জিরো অর্জন, সিঙ্গেল মার্কেটে পুনরায় যোগদান, বিজনেস রেটের অবসান ও রুয়ান্ডা স্কিম বাতিলকরণ। এই কাজগুলো করার পাশাপাশি আমি আমার নির্বাচনী এলাকার প্রত্যেক মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করব৷
আমি আমার পরিবারের সাথে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বেথনাল গ্রীন এবং স্টেপনী নির্বাচনী এলাকায় বসবাস করছি। নির্বাচিত হলে একজন সাংসদ হিসাবে, আমি আমাদের সকল সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে সহজে অ্যাক্সেসযোগ্য হবো এবং ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়, উচ্চ ইউটিলিটি বিল এবং ইজারা সংক্রান্ত সমস্যাসহ আবাসন সংক্রান্ত সমস্যাগুলি মোকাবেলা করব। আমি এ এলাকার মানুষের ভালো-মন্দ, আশা-আকাঙ্খা ও সকল সমস্যা সম্পর্কে সম্যক অবগত আছি। আমি স্থানীয় যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী করে দিবো। শিক্ষামূলক পরিষেবাগুলোতে প্রবেশের জন্য তরুণদের এবং তাদের পরিবারকে সহায়তা ও উদ্বুদ্ধ করবো। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য এবং একটি নিরাপদ নির্বাচনী এলাকা গড়ার জন্য আমি কাজ করবো। আমি জিপি অ্যাপয়েন্টমেন্টে বিলম্ব ঠেকাবো, ডেন্টিস্ট, অ্যাম্বুলেন্স ও ভেঙে পড়া স্কুলগুলি নতুন করে গড়ে তুলবো। বেথনাল গ্রীণ এবং স্টেপনীর লোকেরা আরও ভাল কিছু ডিজার্ভ করে, এই লক্ষ্য নিয়ে সবসময় কাজ করবো।
মুহা. শরীফুজ্জামান: এই আসনে আরেক বাঙালি প্রার্থী লেবার পার্টির রোশনারা আলীর বিপক্ষে আপনাকে লড়তে হচ্ছে। এটাকে কীভাবে দেখছেন?
রাবিনা খান: আমি আমার নির্বাচনী আসনে ৩০ বছরেরও অধিক সময় ধরে বাস করছি। আমার সন্তানরা লণ্ডনের হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেছে এবং স্থানীয় স্কুলে গিয়েছে। আমি তৃণমূল থেকে শুরু করে দীর্ঘ ১২ বছর কাউন্সিলর হিসাবে কাজ করেছি। এখানকার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। আমি একজন স্কুল গভর্নর, একজন বিশেষ উপদেষ্টা। আমি ফিন্যান্সিয়াল টাইমস এবং গার্ডিয়ানের মতো বিখ্যাত প্রকাশনায় সাংবাদিকতা করছি। আমার ট্র্যাক রেকর্ড নিজেই কথা বলছে যে, আমাদের জনগণ এবং আমাদের কমিউনিটি সবসময় আমার কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলো। আমি সবসময় লোকেদের চাওয়াটাকে প্রথম রেখেছি। আমাকে নির্বাচিত করলে আমাদের ভোটাররা এমন একজন জনপ্রতিনিধি পাবেন, যিনি কার্যকর পরিবর্তন আনতে পারবেন। তাছাড়া, আমি নির্বাচিত হলে এলাকার মানুষ এমন একজন এমপি পাবেন যিনি বেথনাল গ্রীন এবং স্টেপনী নির্বাচনী এলাকার কেন্দ্রস্থলে বসবাস করেন। আমাকে এমপি নির্বাচিত করা মানে এমন একজন থাকা যিনি কমিউনিটির মানুষের চাহিদা বোঝেন এবং তা সমাধানের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।
লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা দুইবার যুদ্ধবিরতির পক্ষে এবং অবিলম্বে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ভোট দিয়েছে। ২০০৩ সালে, প্রয়াত লিবারেল ডেমোক্র্যাট নেতা চার্লস কেনেডি ইরাক যুদ্ধের বিরুদ্ধে নীতিগত অবস্থান নিয়েছিলেন যখন তৎকালীন লেবার প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। লিবারেল ডেমোক্র্যাট নেতা চার্লস কেনেডি র এই সাহসী অবস্থান সামরিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে শান্তি ও কূটনীতির প্রতি লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে। আমরা ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতা, ঐক্য এবং পারস্পরিক সম্মানের সুবিধাগুলিতে বিশ্বাস করি।
আমরা লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা মানবাধিকার সমুন্নত রাখার গুরুত্ব অনুধাবন করে রুয়ান্ডা বিলের বিরোধিতায় সোচ্চার হয়েছি। আমাদের দল দৃঢ়ভাবে সকলের জন্য জবাবদিহিতা এবং ন্যায়বিচারের নীতিতে বিশ্বাস করে এবং যেখানেই অন্যায় ও নিপীড়ন ঘটুক না কেন আমরা তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে নিবেদিত রয়েছি। অন্যায়ভাবে মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে এবং কলঙ্কিত করে করা প্রতিরোধ কর্মসূচি লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছে। আমরা লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা চরমপন্থা ও মৌলবাদকে মোকাবেলার গুরুত্ব স্বীকার করি কিন্তু প্রতিরোধই সমাধান নয়। তার পরিবর্তে, আমরা একটি আরও কার্যকর এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি সমর্থন করি যা সমস্ত ব্যক্তির অধিকার এবং মর্যাদাকে সমুন্নত রাখে। লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা ন্যায়বিচার, সমতা এবং মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। আমরা একটি ন্যায্য এবং আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ে তোলার জন্য নিবেদিত রয়েছি, যেখানে প্রত্যেকেরই উন্নতি করার এবং ভালো করার সুযোগ রয়েছে।
মুহা. শরীফুজ্জামান: একজন এমপি প্রার্থী হিসেবে রুশনারা আলী থেকে আপনি নিজেকে কোন দিক দিয়ে এগিয়ে রাখেন? কেনো মানুষ আপনাকে ভোট দিবেন?
রাবিনা খান: বিপদাপদে মানুষ আমাকে পাশে পান, আমাকে সহজে পাওয়া যায়। আমি সবসময় আমার বারার বাসিন্দাদের পক্ষে কথা বলতে, ওকালতিতে অবিচল ছিলাম। কাউন্সিলর হিসেবে আমার নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দারা সবসময় আমাকে তাদের প্রয়োজনে পাশে পেতেন। আমি সবসময় জনগণের পাশে থেকেছি এবং কাউন্সিলর হিসেবে সর্বোচ্চ সংখ্যক কেসওয়ার্ক উত্থাপন করেছি। আমি বাড়িওয়ালা, ভাড়াটিয়া ও লিজ হোল্ডারদের অধিকারের পক্ষে কথা বলেছি, ওকালতি করেছি। নাইফ ক্রাইমের বিরুদ্ধে আমি প্রচারণা চালিয়েছি এবং শিক্ষা পরিষেবাগুলি অ্যাক্সেস করার জন্য তরুণদের এবং তাদের পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করেছি। আমি রিজেনারেশন প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়েছি এবং কমিউনিটির মানুষের উপর জীবনযাত্রার ব্যয়ের প্রভাব নিয়ে লিখেছি।
বেথনাল গ্রীন এবং স্টেপনীতে আমি শহরের ঐশ্বর্য থেকে স্থানীয় সংগ্রাম সবকিছু দেখেছি। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাগুলি আমাকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রেরণা দেয়। একজন মা হিসাবে, আমি বুঝতে পারি আমাদের শিশু এবং যুবকদের চ্যালেঞ্জগুলি, বিশেষত কোভিডের পরে। আমি আমাদের তরুণদের জন্য আরও ভালো সুযোগ তৈরী করার জন্য চেষ্টা করবো, চাকরি থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রস্তুতি পর্যন্ত। আমাদের কমিউনিটির পক্ষে যেকোন পদক্ষেপ নিতে আমি ভয় পাবো না। শুধুমাত্র গাজার ব্যাপারেই নয়, বরং সকল ধরনের জটিল রাজনৈতিক সমস্যার ব্যাপারেই আমি কথা বলবো, সোচ্চার থাকবো।
বেথনালগ্রীন ও স্টেপনী এলাকায় মানুষ খুব কষ্টে আছেন। জনগণ পরিবর্তনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। আমি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে বেথনালগ্রীন ও স্টেপনী এলাকার মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে ও জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করতে চাই। বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়, উচ্চ ইউটিলিটি বিল, হাউজিং ও লিজহোল্ড সংক্রান্ত সকল সমস্যাসহ আবাসন সংক্রান্ত সকল সমস্যার সমাধান করতে চাই। আমি এলাকার সকল সম্প্রদায়ের মানুষের দুয়ারে সকল সরকারি সুবিধা পৌছাতে চাই। আমি এলাকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী করে দিতে চাই। জলবায়ু পরিবর্তনকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এজেন্ডা করার পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবসার জন্য এবং একটি নিরাপদ নির্বাচনী এলাকার জন্য আমি জনগণের পক্ষে লড়াই করতে চাই। আমি শুধু পার্লামেন্টের না, আমি জনগণের এমপি হতে চাই।
মুহা. শরীফুজ্জামান: নির্বাচিত হলে আপনি নতুন সংসদ সদস্য হিসেবে রুটিন কাজের বাইরে কী কী কাজ করবেন, যা দৃষ্টান্ত হতে পারে?
রাবিনা খান: নির্বাচিত হলে একজন এমপি হিসেবে প্রথমে আমি আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবো। রুটিন কাজতো করবোই, এর বাইরে আমি সক্রিয়ভাবে আমাদের কমিউনিটির সকল কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকবো। কমিউনিটির মানুষের চাহিদার কথা মাথায় রেখে কাজ করবো। সকল সম্প্রদায়ের মাঝে সম্প্রীতি গড়ে তোলার চেষ্টা করবো। মানুষের জীবনমানে অর্থপূর্ণ পরিবর্তন আনার চেষ্টা করবো। সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে অবদান রাখার জন্য আমি আমার নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সবাইকে অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করবো।
মুহা. শরীফুজ্জামান: আপনি তরুণ প্রজন্মের একজন নেতা। এলাকার তরুণদের জন্য আপনার বিশেষ কোনো চিন্তা আছে কী?
রাবিনা খান: টাওয়ার হ্যামলেটসে, আমরা শিশু দারিদ্র্যের উচ্চ হার থেকে আর্থ-সামাজিক বৈষম্য এবং আবাসন ঘাটতি পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সকল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বারার ধনী এবং দরিদ্রতম বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যবধান খুবই উদ্বেগজনক, এবং এই সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজন৷
শহরের ঐশ্বর্য থেকে স্থানীয় সংগ্রাম বেথনাল গ্রীন এবং স্টেপনীর বৈচিত্র্যময় ল্যান্ডস্কেপ প্রত্যক্ষ করার পর, আমি অসমতা এবং অবিচারের গভীর প্রভাব বুঝতে পারি। কোভিড-১৯ মহামারীটি বিদ্যমান বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, আমাদের যুবকদের বৈষম্য কাটিয়ে উঠতে নতুন বাধা যোগ করেছে।
আমাদের তরুণরা যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, একজন মা হিসাবে, একজন স্থানীয় বাসিন্দা এবং কমিউনিটির সদস্য হিসাবে, আমি তাদের প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করি। মানসম্পন্ন শিক্ষা, চাকরির সুযোগ এবং ভবিষ্যত প্রযুক্তিগত অগ্রগতির জন্য প্রস্তুতিসহ তাদের জন্য আরও ভালো সুযোগ তৈরি করতে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আমি এমন একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে বিশ্বাস করি, যেখানে প্রতিটি তরুণের উন্নতির সুযোগ থাকবে, যুব পরিষেবা অ্যাক্সেসযোগ্য হবে, বিনোদনমূলক সুবিধা, এবং তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনের সাথে উপযোগী করে কমিউনিটি প্রোগ্রামগুলি করা হবে। নির্বাচিত হলে তরুণদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য কাজ করব, যেখানে বেথনাল গ্রীন এবং স্টেপনীর প্রতিটি তরুণের সফল হওয়ার এবং আমাদের কমিউনিটির জন্য অর্থপূর্ণ অবদান রাখার সুযোগ থাকবে।
মুহা. শরীফুজ্জামান: গাজা ইস্যুতে লেবার পার্টি ও ক্ষমতাসীন দল কনর্জাভেটিভের অবস্থানকে আপনি কিভাবে দেখেন?
রাবিনা খান: গাজায় গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের তদন্তকে সমর্থন করে এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বানকে সমর্থন করে আমাদের দল লিবারেল ডেমোক্র্যাট যুক্তরাজ্যের অন্যতম প্রধান দুটি দল, লেবার এবং কনর্জাভেটিব পার্টির বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে। ২০০৩ সালে আমাদের দল লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রয়াত নেতা চার্লস কেনেডি ইরাক যুদ্ধের বিরুদ্ধে নীতিগত অবস্থান নিয়েছিলেন। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতেও লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রায় বহাল রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। আমি গাজায় যুদ্ধ বিরতির জন্য বেথনাল গ্রীন ও স্টেপনীর জনগণের আহ্বানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে এবং ৭৬% এরও বেশি ব্রিটিশ জনগণের অনুভূতির প্রতিধ্বনি করে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের জন্য বিশ্বমঞ্চে আমাদের কণ্ঠস্বরকে প্রসারিত করতে চাই। আমি ফিলিস্তিনে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের দখলদারিত্ব ও সহিংসতার অবসান এবং জিম্মিদের মুক্তির পক্ষে ওকালতি করতে চাই। আমার দল লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টির সকল এমপিরা যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তির পক্ষে ভোট দিয়েছেন। জাতিগত সমতার জন্য লিবারেল ডেমোক্র্যাটস ক্যাম্পেইনের একজন সদস্য হিসাবে আমি গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য ভোট দেওয়াসহ বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে লিবারেল ডেমোক্র্যাট এমপিদের সাথে কাজ করেছি। লিবডেম এমপিরা একটি দ্বিপাক্ষিক যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব এবং সমস্ত জিম্মিদের অবিলম্বে মুক্তির জন্য প্রস্তাব করেছেন। লিবডেম পার্টির বিট্রিশ ফিলিস্তিনি এমপি লায়লা মোরান বিভাজন বিরোধী অ্যান্টি-বয়কট বিল বাতিল করার জন্য যথাযথ যুক্তি দিয়েছেন। লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা ইসরায়েলের বিরুদ্বে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রায় বহাল রাখার আহ্বান জানিয়েছে। আমরা যুক্তরাজ্য সরকারকে ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছি।
আমাদের দল শান্তির পক্ষে। আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে গেছে, অনেকে শক্তিহীন বোধ করছে। একজন সাংসদ হিসেবে আমি এটিকে পুনর্গঠন ও শক্তিশালী করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করব। এক শতাব্দী ধরে, লিবডেম ন্যায্য ভোট, সমান ক্ষমতা এবং জবাবদিহিতার জন্য লড়াই করেছে। আমরা লড়াই করে যাবো।
মুহা. শরীফুজ্জামান: কাউন্সিলর হিসেবে সাফল্য ও এমপি নির্বাচনে অংশগ্রহণের পেছনে বিশেষ কারও অবদান আছে?
রাবিনা খান: আমার কাউন্সিলর হিসেবে সাফল্যর পেছনেও কমিউনিটির মানুষের অবদান আছে। এমপি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পেছনেও কমিউনিটির মানুষের অবদান, সমর্থন আছে। কমিউনিটির মানুষের কাছে আমি বিশেষভাবে ঋণী। সুযোগ পেলে আমি আমার ঋণশোধ করতে চাই। নির্বাচিত হলে বেথনাল গ্রীন ও স্টেপনীর বাসিন্দাদের সকল নাগরিক সেবা প্রাপ্তি সহজীকরণ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানসহ তাদের নাগরিক সুবিধা ও সেবার প্রশ্নে আমি কখনো আপস করব না। এই আসনের জনগণের সঙ্গে কখনো বিশ্বাস ভঙ্গ করব না। তাদের সেবা দিতে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মুহা. শরীফুজ্জামান: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
রাবিনা খান: আপনাকেও ধন্যবাদ। আমি আমার দল লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টির পক্ষ থেকে সুরমাকে শ্রদ্ধা জানাই। যুক্তরাজ্যের বাঙালি সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপ গঠনে সুরমা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সুরমা অবাধ তথ্যের একটি অত্যাবশ্যকীয় উৎস এবং প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে সংলাপের একটি ফোরাম হিসেবে কাজ করেছে, যা আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি ও সংহতির অনুভূতি বাড়াচ্ছে। এটি দিন দিন আমাদের বাঙালি সম্প্রদায়ের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে ও ব্রিটিশ সমাজে বাঙালিদের অবদান তুলে ধরছে এবং একইসাথে অভিবাসন, সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ এবং একীকরণের মতো কমিউনিটির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিরও সমাধান করেছে। একটি অগ্রগামী বাংলা সংবাদপত্র হিসাবে আমরা সব সময় সুরমা’র ভূয়সী প্রশংসা করি।