সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে পোস্ট ও মিছিল করেও

সিলেটে বিমান শ্রমিক লীগ নেতা শিশির বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছেন



মিজানুর রহমান শিশির। ছবি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে পোস্ট, মিছিল করেও বহাল তবিয়তে বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল-নানকের ঘনিষ্ঠজন বিমান শ্রমিকলীগ নেতা মিজানুর রহমান শিশির। তার নামে অভিযোগের শেষ নেই। মানব পাচার, ব্যাগেজ পাচার, শিশু হত্যা ধামাচাপা, স্ত্রীর নামে অবৈধ ট্রাভেল ব্যবসাসহ সরকারি ফোন ব্যবহার করার মত গুরুতর অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। এমনকি সিলেট থেকে আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজ ও  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেয়া নেতা-কর্মীদের সিলেট ওসমানি এয়ারপোর্ট দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ক্ষেএে সবচেয়ে বেশী সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ আছে শিশিরের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ নিয়ে ইতোমধ্যে অনলাইন পত্রিকা একুশে বার্তাসহ একাধিক পত্রিকা রিপোর্ট করেছে।

অভিযোগকারীরা বলছেন, বিমানবন্দর দিয়ে মানব পাচার করার সাথে শ্রমিকলীগ নেতা শিশির সরাসরি জড়িত। সিলেটে তার স্ত্রীর নামে অবৈধভাবে আবরার টেলিকম নামে অবৈধ ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তিনি। যেখানে তার ভাগিনা এবং ছেলে বসে ব্যবসা করে। তিনি অফিসের সরকারি ফোন ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন যা অফিস আইনের বহির্ভূত।

তার নামে দুদকে মামলা রয়েছে বলেও জানা যায়। তিনি এইচএসসি পাশ করে বিমানের কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করেন। পরবর্তীকালে প্রাইভেটে ডিগ্রী পাস করে বিমানের ট্রাফিক শাখায় ডিপার্টমেন্ট পরিবর্তন করে জয়েন করেন।

ডিপার্টমেন্ট পরিবর্তন করার তার মূল উদ্দেশ্য ছিল এয়ারপোর্টে কাজ করে বিভিন্নরকম অনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে ভাগ্য পরিবর্তন করা। তার সিলেটে পোস্টিং হয় ২০০৪ সালের দিকে। পরবর্তীকালে ২০০৯ সালের দিকে তিনি ঢাকা বিমানবন্দরে বদলি হন। সেখানে তিনি ২০১৯ সাল পযর্ন্ত ছিলেন।

ঢাকায় তিনি  শ্রমিকলীগ নেতা হিসেবে সহকর্মীদের অন্যায়ভাবে বদলি, মানব পাচার , বিমানের রেভিনিউ চুরি , সোনা চোরাকারবারি থেকে এহেন কাজ নেই যা করেননি । অফিস ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ এর অঙ্গসংগঠন শ্রমিক লীগে নেতা হিসেবে সর্বোচ্চ অনৈতিক সুবিধা ভোগ করতেন তিনি।

জাহাঙ্গীর কবির নানকের সাথে শিশির। ছবি: সংগৃহীত

২০১৯ সালে বিমান কর্তৃপক্ষ তাকে তার অন্যায় কাজের শাস্তি স্বরূপ সৈয়দপুর এয়ারপোর্ট- এ পোষ্টিং (বদলি) দিলে সেই সময়ের আওয়ামী লীগ- এর প্রভাবশালী নেতা নানক এবং তোফায়েল আহমেদের তদবিরে আবার সিলেটে পোষ্টিং হয়। সিলেট আসার পর থেকেই তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেন।

সিলেটের যাএীদের নানাভাবে হয়রানী করা এবং কেউ তার সাথে কন্ট্রাক্ট না করলে বৈধভাবে পাওয়া ভিজিট ভিসা থেকে শুরু করে যে কোন ভিসায় বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে চরমভাবে অসহযোগিতা এবং অন্যায় আচরণ করে সম্মানিত যাত্রীদের সাথে খারাপ আচরণ করতেন বলেও অভিযোগ ওঠে।

তার আওয়ামী পরিচয়ে সিলেটের অনেক আওয়ামী লীগ নেতা-নেত্রীদের আত্মীয় স্বজনদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে বিমানকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন যা তদন্ত করলেই বের হয়ে আসবে।

তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে নিয়ে তিনি তার ফেসবুকে চরম তুচ্ছতাচ্ছিল্যমূলক পোস্ট দেন। তিনি আন্দোলনকে নিয়ে বেশ বাজে কথাবার্তা ও লেখেন। তবে যেই মুহূর্তে শেখ হাসিনার পতন ঘটে সাথে সাথে শিশির তার ফেসবুকের ওয়াল থেকে পোস্টগুলো ডিলিট করে দেন। কিন্তু মুহূর্তে সেগুলো ছড়িয়ে পড়ায় বিভিন্ন লোকজন তা সংরক্ষণ করে রাখেন।

মিজানুর রহমান শিশির বিমানের জুনিয়র গ্রাউন্ড সার্ভিস অফিসার হলেও তার এই সকল কাজের সহযোগী ছিলেন তৎকালীন বিমান শ্রমিকলীগ প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমানে বিমানের কানাডার ষ্টেশন ম্যানেজার মশিকুর রহমান, জুনিয়র গ্রাউন্ড সার্ভিস অফিসার জি এম জাকির, জুনিয়র গ্রাউন্ড সার্ভিস অফিসার সাখাওয়াত হোসেন যিনি বর্তমান শ্রমিক লীগ তথা বিমান সিবিএর সাধারণ সম্পাদক, গ্রাউন্ড সার্ভিস অ্যাসিস্ট্যান্ট আজিজুর রহমান বর্তমানে ঢাকা এয়ারপোর্টের বিমানের ডমেস্টিক সেকশনে কর্মরত আছেন। তার আরো অন্যতম সহযোগী ছিলেন সিলেটের তৎকালীন ষ্টেশন ম্যানেজার এবং বর্তমানে বিমানের জেদ্দার ষ্টেশন ম্যানেজার আবদুস সাওার। উল্লেখ্য, এই আব্দুস সাত্তার হচ্ছেন পুলিশের ডিআইজি আব্দুল বাতেনের বড় ভাই।

উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগকারীদের জোর দাবি সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে এদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিতসহ অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা।

 

 

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!