শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৯ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিদ্যুৎ বিভ্রাট ।। ফারদীন আরিয়ান শায়ান খান



আমরা প্রায় সবাই গরম সহ্য করতে পারিনা। গরমকালে অফিস, স্কুল, কলেজ বা বাইরে গেলে অনেক সময় দেখা যায় জ্যাম রাস্তায় বসে থাকতে থাকতে আমরা ঘেমে যাই। বাসায় বিদ্যুৎ না থাকলে, এসি, ফ্যান না থাকলে আমরা গরমে ঘেমে যাই। বলতে গেলে গরম কালে কেউ গরম সহ্য করতে পারে না। আজ আমি সত্য ঘটনার আড়ালে এমনই একটি কাহিনী আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।

গতকাল আমার পরীক্ষা ছিল। বেশ ভালোভাবেই পরীক্ষা দিয়েছিলাম। পরীক্ষা শেষ করে বাসায় এসেছিলাম। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে একটু পড়তে বসেছিলাম। পড়া শেষ করে খাওয়া – দাওয়া করে বিশ্রাম নিয়েছিলাম। বিশ্রাম শেষ করে টিভি দেখছিলাম। ভালোই লাগছিলো টিভি দেখতে।

আমি টিভি দেখছি, এমন সময় হঠাৎ করে বাসার পাশের একটা কারেন্টের পিলার ব্রাস্ট হলো। আমি মনে করলাম কিছুক্ষণ পর ঠিক হয়ে যাবে। জলদি কারেন্ট এসে পড়বে। কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিলো। বেশ কিছুক্ষণ কারেন্ট আসার কোনে নাম নিশানা দেখতে পাওয়া গেল না। ঘন্টা খানেক পর আমি দেখতে পেলাম কারেন্টের পিলার মেরামতের জন্য কারেন্টের লোক আসছে। ব্রাস্ট হওয়া কারেন্টের পিলার কিভাবে মেরামত করা হবে তা আামি বেশ কৌতুহল নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম।

দেখতে দেখতে প্রায় ছয় ঘন্টা পেরিয়ে গেল। কিন্তু কারেন্ট আসার কোন লক্ষণ দেখা গেলো না। উপায় খুঁজে না পেয়ে আমি আমাদের বিল্ডিং এর ম্যানেজার সাহেবকে ফোন দিলাম। ম্যানেজার সাহেব বললেন, কারেন্টের পিলার ঠিক হয় নাই। ওরা ঠিক করতেছে। সময় লাগবে। আমি ভাবলাম হায় খোদা! এখনই গরমে বাঁচতেছিনা, আর এদিকে কারেন্ট আসতে সময় লাগবে! হায়রে আমার কপাল! পরে ভাবলাম কী আর করা, কারেন্ট তো আর আমার হাতে না। আমি অপেক্ষা করছি, অপেক্ষা করছি। কারেন্ট তো আর আসেই না। এদিকে গরমে বাচিঁনা। ওদিকে মোবাইলে একটুও চার্জ না থাকায় ম্যানেজার সাহেবকে কল করে জিজ্ঞাসাও করতে পারি না। উপায় না পেয়ে আমি পাখা দিয়ে নিজেকে বাতাস করতে লাগলাম।

একটু পর খবর পেলাম কারেন্ট নাকি আজ আসবে না। এতো পদে পদে বিপদ! রাত এগারোটা বাজে, গরম আর মশার যন্ত্রণায় কিছুতেই ঘুমাতে পারছিনা। যখনই একটু ঘুম আসে তখনই মশা ডিসটার্ব করে। এভাবে সারা রাত কেটে যায়, ঘুমাতেই পারছিনা। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। ফজরের আযান দিয়ে দিল। কারেন্ট আসার কোন লক্ষণ নেই। আমি মশারী টানালাম। কিন্তু কোন কাজেই আসলোনা। মশারীর ভিতরে থাকা মশা ডিসটার্ব করতে লাগলো। মশা থেকে বাঁচার জন্য আমি কাঁথা গায়ে দিলাম। একটু পর গরম লাগতে শুরু করলো। মহাযন্ত্রণা! কাঁথা গায়ে দিলে গরম লাগে, ফেলে দিলে মশা ধরে।

অনেক চেষ্টা করে কখন যেনো ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম থেকে উঠে দেখলাম সকাল এগারোটা বাজে। কিন্তু এখনও কারেন্ট আসে নেই। আমি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেতে বসলাম। নাস্তা খেতে খেতে দুপুর বারোটা বেজে গেল। কিছুক্ষণ পর যোহরের আযান দিল। পানির টেপে পানি নাই দেখে গোসল করতে পারলাম না। বাসায় অল্প একটু খাবার পানি ছিলো। ভাবছিলাম দুপুরে কি রান্না করবো, ভাবতে ভাবতে মনে হলে খিচুড়ি রান্না করি। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। অল্প পানিতে চাল-ডাল একসাথে মিশিয়ে রান্না করে ফেললাম খিচুড়ি। রান্না করতে একটু সময় লেগে গিয়েছিল। ঘড়িতে যখন প্রায় সাড়ে তিনটা বাজে তখনই কারেন্ট এসে পড়লো। আমি খুব খুশি হলাম! একটু পর খেতে বসলাম। খেয়েদেয়ে এসি অন করে আবার একটা ঘুম দিলাম।

(নীতিকথা: জীবনে বিভিন্ন ধরনের বিপদ বা সমস্যা আসতে পারে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই হতাশ হওয়া যাবে না। ধৈর্য ধরতে হবে। ধৈর্যের সাথে সব মোকাবেলা করতে হবে। সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে।)

ফারদীন আরিয়ান শায়ান খান, ৫ম শ্রেণী, দেশ আইডিয়াল স্কুল, ঢাকা।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!