এটা সত্য ঘটনা। ২০২২ এর ১৮ ডিসেম্বর জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় আমি আবৃত্তিতে বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম হয়েছিলাম। তখন আমি ছিলাম ক্লাস ফোর-এ। ২০২১ সালে করোনা ভাইরাসের জন্য প্রতিযোগিতা হয়নি। তাই ২০২১ সালের প্রতিযোগিতা হয়েছিল ২০২২ সালে। জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতার জন্য ঢাকায় যাব। তাই ট্রেনের টিকেট কাটা হলো। আমি থাকি মৌলভীবাজারে। বিকেল থেকে আমরা রেডি হওয়া শুরু করেছি। আমি, মা আর দিদি যাব। আমরা যাব আরও অনেক মানুষের সাথে। সেখানে আমার স্যারও আছেন। বিকেল পাঁচটায় সিএনজি-তে করে আমি, মা, দিদি, স্যার, স্যারের অন্য এক স্টুডেন্ট আর দাদু। দাদু আমাদের স্টেশনে ছাড়তে এসেছিলেন। আমরা রওয়ানা হলাম শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশে। কারণ, শ্রীমঙ্গলেই স্টেশন। ট্রেন ছিল ৬:০০ টায়। ট্রেন আসতেই সবাই দৌড়ে দৌড়ে উঠতে শুরু করলো।
আমরা সিলেটি। সিলেটের ভাষায় কথা বলি। সিলেটিরা ‘চ’-কে বলে ‘ছ’, ‘ঢ’-কে বলে ‘ড’। এবার আমাদের ট্রেনের বগির নম্বর ছিল ‘ড’ এবং তার পেছনের বগি ছিল ‘ঢ’। সবাই আমরা অনেক খুঁজে ‘ড’ বগি বের করে উঠলাম এবং নিজেদের সিটে বসলাম। আমরা শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে পারি, তাই সমস্যা হয়নি। কিন্তু অনেক সিলেটি শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে পারে না।
– হঠাৎ করে একজন লোক এসে বললেন, ‘এটা কুন বগি?’
– আমি বললাম, ‘এটা ‘ড’ বগি।’
– তিনি বললেন, ‘কিতা? কুন বগি? ‘ড’ না ‘ড’? (কী, কোন বগি? ‘ড’ না ‘ঢ’?)
– আমি বললাম, ‘এটা ‘ড’ বগি। আপনি কোন বগিতে উঠবেন?
– তিনি আবারও বললেন, ‘কিতা খও ইতা? ইগু ‘ড’ বগি নি? এ মনা ইগু ‘ড’ বগি নি?’ (কী বলো এসব? এটা কি ‘ঢ’ বগি? এ বাচ্চা, এটা কি ‘ঢ’ বগি?)
– এবার আমার স্যার বললেন, ‘আরে এটা ‘ড’ বগি। ‘ডাবের-ড’।’
– তিনি বললেন, ‘ও আইচ্ছা, ইগু ‘ডাবের-ড’ বগি।’
– আমি বললাম, ‘হ্যাঁ’।
তারপর আরও একজন এলো। আর আমাকে বলল, ‘এ মনা, ইগু কুন বগি?’ এবার আমি বুঝে গেছি, তাদেরকে কী বললে তারা বুঝবে। আমি বললাম, ‘এটা ‘ড’ বগি, ‘ডাবের-ড’।’ আবার একজন এসে আমার পেছনের এক আন্টিকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ও আফা! এটা কুন বগি?’ তখন তিনি আমার দেখাদেখি বললেন, ‘এটা ‘ড’ বগি, ‘ডাবের-ড’। এরপর থেকে যারা এই বগিতে বসেছিল তারা এই বগির নামই দিয়ে দিল ‘ডাবের-ড’ বগি। এরপর লোক আসতে লাগলো আর মানুষ বলতে লাগলো এটা ‘ডাবের-ড’ বগি। তখন হঠাৎ সেই প্রথম ব্যক্তিটি দৌড়ে আসলো। তারপর বললো, ‘এ আল্লা, আমি আমার বেগ অগু কুনানো ফালাইয়া গেছি মনো নাই। ইগু কুন বগি?’ (হে আল্লাহ, আমি আমার ব্যাগটা যে কোথায় ফেলেছি মনে নেই। এটা কোন বগি?) তিনি দৌড়ে তাড়াহুড়া করে এসেছিলেন। তাই বলতেই যাচ্ছিলাম এটা হচ্ছে ‘ডাবের-ড’ বগি। কিন্তু তার আগেই তিনি বলে দিলেন, ‘ইগু আপেলের-ড’ বগি নি?’ (এটা ‘আপেলের ড’ বগি?) তিনি ভুল করে ডাব বলতে গিয়ে আপেল বলে ফেলেছিলেন। তিনি তার কথা শুধরাতে যাবেন কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে। সবাই হাসতে শুরু করেছে। তখন তিনি লজ্জা পেয়ে সেখান থেকে দ্রুত চলে গেলেন।
উপমা চন্দ রাশি, ৬ষ্ঠ শ্রেণি, দি ফ্লাওয়ার্স কেজি এন্ড হাই স্কুল, মৌলভীবাজার।