ড. কামাল হোসেন বলেছেন, গণতন্ত্রকে কার্যকর করতে দেশের ১৬ কোটি মানুষ ঐক্যবদ্ধ আছে। দেশে কোনো অরাজকতা হলে তারা তা রুখে দাঁড়াবে। ১৫ সেপ্টেম্বর (শনিবার) বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে ড. কামাল বলেন, আপনাদের উপস্থিতি দেখে আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। আগামী নির্বাচনকে সফল করতে হলে আপনাদেরকেও পাহারা দিতে হবে। দেশের মানুষ যেন নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে। জনগণের স্বপ্ন যেন বাস্তবে রূপান্তরিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে দফা ও লক্ষ্য পাঠ করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
প্রথম দফায় বলা হয়, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।
দ্বিতীয়ত, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাকস্বাধীনতা, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সব রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা নিশচিত করতে হবে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।
তৃতীয়ত, কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ছাত্রছাত্রীসহ সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারসহ গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে। এখন থেকে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা যাবে না।
চতুর্থ দফায় বলা হয়েছে, নির্বাচনের এক মাস আগে থেকে নির্বাচনের পর ১০ দিন পর্যন্ত কোট ৪০ দিন প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত করতে হবে।
পঞ্চম দফায় উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা ও পরিকল্পনা বাদ দিতে হবে, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২’এর যুগোপযোগী সংশোধনের মাধ্যমে গণমুখী করতে হবে। পাশাপাশি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনের আগে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারের দিকে রওনা হন জোট নেতারা। তবে প্রেসক্লাব থেকে রওনা হলেও একটু সামনে যেতেই পুলিশি বাধার মুখে পড়েন তারা।
এর আগে, শুক্রবার তোপখানায় নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দিনভর বৈঠকে অভিন্ন এই রূপরেখা চূড়ান্ত করা হয়। এ সময় সব দলের অংশগ্রহণে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আদায়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার ওপর জোর দেয়া হয়। এ লক্ষ্যে অভিন্ন পাঁচ দফা ছাড়াও নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করলে দেশ পরিচালনায় নয় দফার আলাদা একটি রূপরেখা তৈরি করেন দুই জোটের নেতারা।