রাজধানীর ফকিরাপুলের অবৈধ ক্যাসিনো ইয়াংমেনস ক্লাবের মালিক যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বাসা থেকে অবৈধ অস্ত্রসহ মাদক, নগদ টাকা ও ডলার উদ্ধার করেছে র্যাব সদস্যরা।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গুলশানের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) খালেদকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হয়।
অভিযানকালে খালেদের বাড়ি থেকে ৪০০ পিস ইয়াবা, লকার থেকে ১০০০, ৫০০ ও ৫০ টাকার কয়েকটি বান্ডিল যাতে ১০ লাখ ৩৪ হাজার টাকা পাওয়া যায়। ডলারের যে বান্ডিল পাওয়া যায় তার মূল্যমান ৫-৬ লাখ টাকা। তার কাছ থেকে মোট ৩টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। যার একটি লাইসেন্সবিহীন, অপর দুটি লাইসেন্সের শর্তভঙ্গ করে রাখা হয়েছিল।
যুবলীগ নেতা খালেদের বিরুদ্ধে মতিঝিল-ফকিরাপুল ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনো থেকে শুরু করে অন্তত সাতটি সরকারি ভবনে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ ও সরকারি জমি দখলের মতো নানা অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে।
২০১২ সালের পর মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের ছত্রছায়ায় ঢাকার এক অংশের নিয়ন্ত্রণ আসে খালেদের হাতে। নিজের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে সর্বোচ্চ শক্তি ব্যবহার করেন তিনি। রিয়াজ মিল্কি ও তারেক হত্যার পর পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেন।
রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল এলাকায় কমপক্ষে ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করেন যুবলীগ নেতা খালেদ। এর মধ্যে ১৬টি ক্লাব নিজের লোকজন দিয়ে আর ফকিরাপুল ইয়াং ম্যানস নামের ক্লাবটি সরাসরি তিনিই পরিচালনা করেন। প্রতিটি ক্লাব থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে এক লাখ টাকা নেন। এসব ক্লাবে সকাল ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত ক্যাসিনো বসে।
এই নেতা বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই! রাজধানীর খিলগাঁও-শাহজাহানপুর হয়ে চলাচলকারী লেগুনা ও গণপরিবহন থেকে নিয়মিত টাকা দিতে হয় খালেদকে। প্রতি কোরবানির ঈদে শাহজাহানপুর কলোনি মাঠ, মেরাদিয়া ও কমলাপুর পশুর হাট নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। খিলগাঁও রেল ক্রসিংয়ে প্রতিদিন রাতে মাছের একটি হাট বসান এ নেতা। সেখান থেকে মাসে কমপক্ষে এক কোটি টাকা আদায় করেন। একইভাবে খিলগাঁও কাঁচাবাজারের সভাপতির পদটিও দীর্ঘদিন ধরে রেখেছেন। শাহজাহানপুরে রেলওয়ের জমি দখল করে দোকান ও ক্লাব নির্মাণ করেছেন।
টেন্ডার নিয়ন্ত্রণের সাথে ও যুবলীগ নেতা খালেদের নাম জড়িত। মতিঝিল, শাহজাহানপুর, রামপুরা, সবুজবাগ, খিলগাঁও, মুগদা এলাকায় থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো (রাজধানী উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ-রাজউক), রেলভবন, ক্রীড়া পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ভবন, কৃষি ভবন, ওয়াসার ফকিরাপুল জোনসহ বেশিরভাগ সংস্থার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন খালেদ। ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া নামের প্রতিষ্ঠানটি দিয়ে তার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ফকিরাপুল এলাকার খালেদের মালিকানাধীন অবৈধ ক্যাসিনো ‘ইয়াং ম্যান্স ক্লাবে’ অভিযান চালায় র্যাবের বিশেষ একটি টিম। পরে তাকে গুলশান-২ এর ৪৯ নম্বর রোডের ৪ নম্বর বাসা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়।
ভোরের কাগজ