শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

ফসলরক্ষা বাঁধ না থাকায় অরক্ষিত বালাগঞ্জের গোরাপুর হাওর!



মাত্র ৪০ ফুটের মতো একটি স্থায়ী ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের অভাবে সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার গোরাপুর হাওরটি অরক্ষিত রয়েছে। ফলে প্রায় বছরই অসময়ে উজান থেকে নেমে আসা পানিতে এই হাওর তলিয়ে কোটি কোটি টাকার ইরি-বোরো ফসল নষ্ট হয়। হাওরের ফসল রক্ষায় স্থানীয় কৃষকরা নিজেদের উদ্যোগে মাটি ও বালুর বস্তা ফেলে প্রতি বছরই অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করার বৃথা চেষ্টা করে থাকেন। কিন্তু কুশিয়ারা ও বড়ভাঙ্গায় পানি বাড়ার সাথে-সাথেই এই অস্থায়ী বাঁধ তলিয়ে কৃষকের স্বপ্নের সোনালী ফসল তাদের চোখের সামনেই পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে দেখা যায়।

বালাগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এই হাওরে অন্তত দেড় হাজার একর ফসলি জমি রয়েছে। গোরাপুরের এই হাওর শস্য উৎপাদনের মাধ্যমে জাতীয় কৃষি অর্থনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখলেও এখন পর্যন্ত সামগ্রিক উন্নয়নের বাইরে রয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া ও পর্যাপ্ত সহায়তা থাকলে দেশের অন্য যেকোনো হাওরাঞ্চল থেকে এই হাওরে একর প্রতি ধানের আবাদ ও উৎপাদন অধিক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বছরও স্থানীয় কৃষকেরা চাষ করেছেন। কিন্তু কালাজড়া নামের এই নালা দিয়ে অসময়ে বড়ভাঙ্গা নদী থেকে দ্রুত গতিতে পানি প্রবেশের ফলে বেশির ভাগ মৌসুমেই কৃষকরা তাঁদের জমিতে উৎপাদিত ধানের তৃতীয়াংশ ফসল গোলায় তুলতে পারেন না।

সম্ভাবনাময় এই হাওরটির উপজেলা সদরের শিরিয়া খেয়াঘাটের কালাজড়ায় প্রায় ৪০ ফুট প্রস্থের একটি স্লুইস গেইট অথবা বাঁধের অভাবে বছরের পর বছর ধরে অরক্ষিত হয়ে পড়ে রয়েছে।

স্থানীয় কৃষক ইউনুস আলী, লিয়াকত আলী, পনির মিয়া, গিয়াস উদ্দিন নোমান, সাবেক ইউপি সদস্য আশিক মিয়া, জানান, পানি বেশি হলে একদিকে যেমন হাওরের ফসল ভাসিয়ে নিয়ে যায়। অপরদিকে শুকনো মৌসুমে পানি পায় না কৃষকরা। অথচ হাওর অঞ্চলের উৎপাদিত ফসল থেকেই উপজেলার মোট আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অর্জিত হয়। হাওর উন্নয়নে এমপি ও রাজনৈতিক নেতারা একের পর এক প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়ন হয়নি।

বালাগঞ্জ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আহমদ আলী জানান, প্রতি বছরই চৈত্র মাসের শেষে বা বৈশাখ মাসের শুরুতে এলাকাবাসীরা মিলে স্বেচ্ছাশ্রমে অস্থায়ী বাঁধ তৈরি করে আসছে। বড়ভাঙ্গায় পানি বাড়লে ও বাঁধে ভাঙন দেখা দিলে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়া মাত্রই বাঁধ রক্ষায় এলাকাবাসী ঝাঁপিয়ে পড়ে। এমনও সময় গেছে একদল কৃষক দিনে ও একদল কৃষক রাত জেগে বাঁধ পাহারা দিতে হয়েছে।

এ ব্যাপারে বালাগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মুনিম জানান, দুঃখজনক হলেও সত্য হাওর অঞ্চলের জনগণ বছরের পর বছর ধরে একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি করলেও এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ফলে বোরো মৌসুমে এলাকার কৃষকদের জমিতে ধান পাকার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে দুশ্চিন্তাও।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট স্থানীয় এলাকাবাসীর জোর দাবী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে এই এলাকায় বড়ভাঙ্গা নদী খননের কাজ চলছে। খননকৃত মাটি নদীর পাড়ে জমা করা হচ্ছে, ফলে বৃষ্টির পানি ও পানি বাড়ার সাথে সাথে মাঠি গড়িয়ে আবার নদীতে পড়ে ভরাট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এলাকাবাসী জনস্বার্থে এই মাটিগুলো যত্রতত্র না রেখে উল্লেখিত স্থানে ফেলার অনুরোধ জানিয়েছেন।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!