বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১৩ হাজার ২০০ ফোন পেয়েও নিষ্ক্রিয় ছিল দিল্লি পুলিশ!



নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে। ছবি: পিটিআই।

দিল্লির সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সময় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল প্রথম থেকেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, পুলিশের সামনেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। এবার জানা গেছে, সহিংসতার চারদিনে সাধারণ মানুষ বারেবারে পুলিশের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে ফোন করেও কোনো সাড়া পাননি। এমনকি অভিযোগও নথিভুক্ত করা হয়নি।

দিল্লির শুধু ভজনপুরা থানায় ২৪-২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার ফোন এসেছিল। কিন্তু অভিযোগ পেয়েও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনো ব্যবস্থা নেয়া থেকে বিরত ছিল তারা। ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির খবরের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার জানায়, ভারতের রাজধানীতে পাঁচ দিনব্যাপী সংঘর্ষ চলাকালে দিল্লি পুলিশের কাছে ১৩ হাজার ২০০টি ফোন গিয়েছিল। কোথাও গুলি চলছে, কোথাও গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ এলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। এদিকে গত শুক্রবার ভুবনেশ্বরে সিএএর সমর্থনে এক জনসভায় দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, সিএএর ফলে মুসলিমরা ভারতের নাগরিকত্ব হারাবেন বলে বিরোধী দলগুলো মিথ্যা প্রচার করছে। ভারতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে রাজধানী দিল্লিতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরুর ছয়দিন পরে এই প্রথম মুখ খোলেন তিনি। নতুন করে সংঘর্ষ না দেখা দিলেও এখনো বেশ কিছু জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। জায়গায় জায়গায় মোতায়েন রয়েছে পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী।

পাঁচ দিনব্যাপী চলা তাণ্ডবে ভারতের রাজধানী দিল্লির চারদিকের পরিবেশ থমথমে। দুএকটা দোকানপাট খুললেও, রাস্তাঘাট বেশ ফাঁকা। প্রয়োজন ছাড়া এখনো বাড়ির বাইরে সেভাবে পা রাখার সাহস করছেন না সাধারণ মানুষ। তবে অফিস-কাছারি খুলে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই কাজ হচ্ছে সেখানে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এর বিরোধী ও সমর্থকদের মধ্যে গত পাঁচ দিনব্যাপী দফায় দফায় চলা সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠে রাজধানী দিল্লি। তাতে এখনো পর্যন্ত ৪২ জনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে। আহত হয়েছেন ২০০-এর বেশি মানুষ। পুলিশ-প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার জন্যই সহিংসতা এমন চরম আকার ধারণ করে বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের অভিযোগ, ফোনে বারবার অভিযোগ করা সত্তে¡ও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখতেই পুলিশ কন্ট্রোল রুমের কল লগ খতিয়ে দেখা হয়। তাতে দেখা যায়, গত ২৪ তারিখ, সোমবার বিক্ষোভের প্রথমদিন সন্ধ্যাতেই ৭০০ ফোন যায় পুলিশের কাছে। পরদিন ২৫ ফেব্রুয়ারি ৭ হাজার ৫০০ ফোন পায় পুলিশ। তারও পরদিন অর্থাৎ ২৬ ফেব্রুয়ারি ১ হাজার ৫০০ ফোন পায় পুলিশ।
শুধু যমুনা-বিহার থেকেই ভজনপুরা থানায় ২৪-২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার ফোন এসেছিল বলে জানায় ওই সংবাদমাধ্যম। ভজনপুরা থানার আট পাতার কল-রেজিস্টার খতিয়ে দেখে তারা জানায়, কোন নম্বর থেকে ফোন আসছে, কী অভিযোগ এবং তার প্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তার জন্য রেজিস্টারের পাতায় আলাদা আলাদা কলাম থাকলেও, শুধু কোথা থেকে ফোন এসেছিল, কী অভিযোগ তাই লেখা রয়েছে। এমনকি গুলি চলা এবং আগুন লাগানোর অভিযোগও লেখা রয়েছে তাতে। কিন্তু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তার উল্লেখ নেই সেভাবে। অর্থাৎ অভিযোগ পেয়েও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। শুধু সাধারণ মানুষই নন, পুলিশ ফোনই ধরেনি বলে অভিযোগ করেছেন যমুনা বিহারের বিজেপি কাউন্সিলর প্রমোদ গুপ্ত। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনি। পুলিশ যদি ব্যবস্থা নিত, পরিস্থিতি এতটা খারাপ দিকে মোড় নিত না।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!