শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আব্দুর রশীদ লুলু

চাষাবাদ বিষয়ক টুকিটাকি-৫



 প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘সি’ সমৃদ্ধ কামরাঙ্গা চাষের জন্য দেশের মাটি ও আবহাওয়া খুবই উপযোগী। গাছ, ফুল-ফল ও পাতা, দেখতে সুন্দর কামরাঙ্গার ফুলে প্রচুর পরিমাণ মধু থাকে। ফলে কামরাঙ্গা গাছে মৌমাছির আনাগোণা লক্ষণীয় পরিমাণে বিদ্যমান। উল্লেখ্য, এ হিসাবে কামরাঙ্গা বাগানকে ঘিরে মৌমাছি চাষ তথা লাভজনকভাবে মধু উৎপাদন সহজেই সম্ভব। অনেকটা সহজেই এক ঢিলে দু’পাখি মারা। অন্যান্য ফলের মতো পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত দোঁ-আশ মাটিতে কামরাঙ্গা ভালো হয়। তবে বেশী খরা কামরাঙ্গা গাছ সহ্য করতে পারে না। তখন পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। উল্লেখ্য, কিছু ছায়াযুক্ত স্থানেও পুষ্টিকর এ ফল চাষ করা হয়। গাছ বেশী বড় হয় না বিধায়, গ্রামাঞ্চলে স্বল্প জায়গায় চাষের পাশাপাশি শহরাঞ্চলে ছাদে হাফ ড্রামেও চাষ সম্ভব। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষাসহ প্রায় সারা বছরই কামরাঙ্গা ধরে। উপযুক্ত পরিচর্যায় বীজের গাছে ফল ধরতে ৩-৪ বছর লাগে এবং কলম করা গাছে রোপণের পরের বছর থেকে ফল ধরে। তবে বীজের গাছে প্রায়ই মাতৃগুণ বজায় থাকে না।

 জনসংখ্যার ভাবে নুয়ে পড়া দেশে চাষাবাদের ক্ষেত্রে প্রতি ইঞ্চি জমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে বহুস্তরি বাগান স্থাপন করা যায়। এতে কৃষক/কৃষাণীর উৎপাদন ব্যয় কম হবে এবং উৎপাদন তথা লাভ বেশী হবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, আম বা নারিকেল বাগানে কলা/আনারস/আদা/হলুদ/কচু ইত্যাদি সমন্বিত ভাবে কম খরচে সহজেই চাষাবাদ করা যায়।

 বেশ পুষ্টিমান সমৃদ্ধ রাম্বুটান একটি বিদেশী ফল হলেও কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমাদের দেশের মাটি ও আবহাওয়া চাষের জন্য উপযোগী। কাঁদাময় দোঁআশ মাটি রাম্বুটানের জন্য উত্তম। মাতৃগুণ বজায় রাখার জন্য কলম ও কুঁড়ি সংযোজন প্রক্রিয়ায় চাষাবাদ করা ভালো। রাম্বুটান দেখতে অনেকটা লিচুর মতো। ফলের গায়ে লম্বা লম্বা খয়েরী লোম থাকে। প্রতিটি ফলের ওজন ১৫-৫০ গ্রামের মতো। রাম্বুটান বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ লাভজনক বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

 সময় মতো গাছপালা ছাঁটাই করা প্রয়োজন। এক সময় আমাদের দেশে চাষাবাদের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাবে এ বিষয়টা অনেকটা উপেক্ষিত ছিল। আশার কথা ক্রমান্বয়ে অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। চাষাবাদের সাথে সংশ্লিষ্টরা উন্নত ও ভালো মানের ফল-মুল ও ফসল উৎপাদনের জন্য জ্ঞান লাভের চেষ্টা করছেন। বৈজ্ঞানিক ভাবে চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। যা হোক, ভাদ্র মাসে আম, কাঁঠাল ও লিচু গাছ ছাঁটাই করে দিতে হয়। যাতে গাছে মরা ও দূর্বল ডালপালা, ফলের বোঁটা এবং রোগাক্রান্ত অংশ না থাকে। এতে গাছ সজীব হবে। পর্যাপ্ত আলো-বাতাস খেলে যাবে এবং পরবর্তী মৌসুমে ফলন ভালো হবে।

 শাক-সবজি চাষাবাদে প্রায়ই কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। অনেকে যথেচ্ছা ব্যবহার করেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কীটনাশক ব্যবহার/প্রয়োগ করা শাক-সবজি দীর্ঘদিন ধরে খেলে পেটের পীড়া, আলসার, শারীরিক বৈকল্য, কিডনীর জটিলতা এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে। এ ছাড়া, যারা শাক-সবজি (এবং অন্যান্য ফল-ফসলে) কীটনাশক স্প্রে/প্রয়োগ করেন, তারাও শারীরিক ক্ষতির শিকার হন। যদিও চাষাবাদে ক্ষতিকর পোকা-মাকড় ও রোগ বালাই দমণ করাও প্রয়োজন। অতএব চাষাবাদের ক্ষেত্রে জীবন ও পরিবেশের স্বার্থে যতদূর সম্ভব ক্ষতিকর কীটনাশক পরিহার করে ভেষজ ও বিকল্প পদ্ধতি (যেমন ছাই ছিটানো, হাতে পোকা-মাকড় দমণ, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগাক্রান্ত গাছ, ডাল-পালা অপসারণ ইত্যাদি) অনুসরণ/প্রয়োগ করা উচিৎ।

 এক সময় দেশে বাঁধাকপি সীমিত পর্যায়ে (বড় বড় শহরের আশে-পাশে) চাষাবাদ হলেও পুষ্টিকর এ সবজির চাষাবাদ এখন অনেক বিস্তৃত হয়েছে। গ্রামাঞ্চলসহ সারা দেশে এর চাষাবাদ হচ্ছে। বাঁধাকপি শীতকালীন সবজি হলেও এখন প্রায় সারা বছরই চাষাবাদ হচ্ছে। যদিও শীতকালীন বাঁধাকপির স্বাদই আলাদা। যা হোক, বাঁধা কপি কষ্ট সহিষ্ণু সবজি। অত্যধিক বেলে মাটি ব্যতিত সুনিষ্কাশিত যে কোনো মাটিতেই এর চাষাবাদ সম্ভব। বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য হেক্টর প্রতি ১৫০-১৮০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন। এটি মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণ খাদ্য শোষণ করে। এই অর্থে বাঁধা কপিকে কেউ কেউ রাক্ষুসে ফসলও বলে থাকেন। এ জন্য বাঁধা কপি চাষে বিশেষ যত্ন ও পর্যাপ্ত সার প্রয়োগ করতে হয়। এ ছাড়া ভালো ফলনের জন্য ক্ষেতে যাতে সারা দিন সূর্যের আলো পড়ে এ বিষয়টাও নিশ্চিত করতে হবে।

 এক সময় সোনালী আঁশ খ্যাত পাটের চাষাবাদ দেশে প্রচুর হলেও বছর কয়েক ধরে তা কৃষকের গলার ফাঁস বলে অনেকেই অভিহিত করছেন। উপযুক্ত বাজার মূল্যের অভাবে পাট চাষে কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় এমন মন্তব্য শুনা যাচ্ছে। আশার কথা আমাদের বিজ্ঞানী কর্তৃক পাটের জীবন রহস্য উন্মোচিত হওয়ায় মনে করা হচ্ছে, পাট আবার তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে। যা হোক, পাটের বীজ বোনার উপযুক্ত সময় ফাল্গুনের মাঝামাঝি থেকে চৈত্রের শেষ পর্যন্ত। পাটের জন্য উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি নির্বাচন করা ভালো। সারিতে বুনলে হেক্টর প্রতি ৪-৫ কেজি এবং ছিটিয়ে বুনলে ৬.৫-৭.৫ কেজি বীজ লাগে। সারিতে বুনলে সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৩০ সে.মি. এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ৭-১০ সে.মি। উল্লেখ্য, পাট শাক স্বাস্থ্যের জন্যও উপযোগী। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, এ্যালকালয়েড এবং আঁশ বিদ্যমান। এ ছাড়া কোনো কোনো গবেষক মনে করেন, পাট শাকে (পাতায়) টিউমার (ক্যান্সার) প্রতিরোধক উপাদানও বিদ্যমান।

লেখক: সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা), সিলেট।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!