শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

আবদুল হালীম খাঁ

আনোয়ারা ফাউন্ডেশন মানব এবং প্রকৃতি কল্যাণের জন্য প্রতিষ্ঠিত এক প্রতিষ্ঠান



আনোয়ারা বেগম বড় ভাগ্যবতী পুণ্যাত্মা এবং মহত এক মায়ের নাম। এমন মা পৃথিবীতে খুব কমই জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মহত ছিলেন বলেই তাঁর পুত্র আবদুর রশীদ লুলুও মহত কাজ করে সমাজে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত হচ্ছেন। তিনি স্থাপন করেছেন মানব ও প্রকৃতি কল্যাণধর্মী ‘আনোয়ারা ফাউন্ডেশন’। আমি এই মরহুমা আনোয়ারা বেগম এর বিদেহী আত্মার কল্যাণ কামনা করছি। দয়াময় আল্লাহ আনোয়ারা বেগমকে জান্নাতুল
ফেরদাউসের সর্বোচ্চ স্থান দান করুন। আমীন।

মা আনোয়রা বেগম ছয় মাস বয়সের পুত্র লুলুকে রেখে চলে যান। লুলু বড় হয়ে তাঁর মায়ের মুখের চেহারাটি কেমন ছিল তা মনে রাখতে পারেননি। মাকে দেখে একটি ‘মা’ ডাকও দিতে পারেননি। মায়ের হাতের আদর সোহাগ ভালোবাসা জীবনে পাননি। কিন্তু কথা কি এখানেই শেষ? মা কি তাঁর আদরের পুত্র, হৃদয়ের টুকুরো লুলুকে কিছুই দিয়ে যাননি? শিশু লুলু তখন বুঝেনি। আবদুর রশীদ লুলু এখন বুঝতে পেরেছেন। আমরা যারা এখন তাঁর কাছে ও দূরে রয়েছি সবাই বুঝতে পারছি। আগামী দিনের হৃদয়বান মানুষ বুঝতে পারবেন আনোয়ারা বেগম দুনিয়া থেকে চলে যাবার সময় তাঁর শিশুপুত্র লুলুকে কী দিয়েছিলেন।

মায়ের হাত অফুরন্ত সম্পদে ভর্তি থাকে। সেই সম্পদ যে শিশু পায়, তার জীবনে কোনো অভাব থাকে না, সে ধন সম্পদের কাংগাল হয়ে মানুষের দুয়ারে হাত পাতে না। তার মন এতো উঁচু হয়, তাঁর হাত দান ছড়িয়ে দিতে এতো লম্বা হয় যে, সে-ই তখন যার যা প্রয়োজন মানুষের অভাব পূরণে, তা চারদিকে ছড়িয়ে দিতে থাকেন। মানব কল্যাণে প্রকৃতি কল্যাণে সকল দিকেই তিনি দান করতে থাকেন- দান করার মতো শক্তি ও হিম্মত তিনি পান। মায়ের হাতের সেই অদৃশ্য সম্পদ যারা পান তারা সত্যি বড় ভাগ্যবান।

মায়ের হাতের সেই অদৃশ্য সম্পদ হলে হৃদয় বিগলিত চোখের জলে ভেজা দোয়া। আমার মনে হয় আনোয়ারা  বেগম দুনিয়া থেকে চলে যাবার সময় শিশুপুত্র লুলুর দিকে চেয়ে তার বুকে হাত রেখে বুকে জড়িয়ে ধরে দোয়া করে গিয়েছেন। সেই দোয়ার বরকতে আবদুর রশীদ লুলু এমন ধনী হয়েছেন তাঁর ঘর সোনা হীরে মণি মুক্তায় ভর্তি না থাকলেও কিছুর অভাব মনে করছেন না। কারো কাছে হাত পাতছেন না। বরং নিজের যা আছে তাই দিকেদিকে মানব ও প্রকৃতি কল্যাণে দান করে যাচ্ছেন। কথায় বলে- মনের ধনীই প্রকৃত ধনী, ধনের ধনী ধনী নয়।

প্রায়ই দেখা যায়, যার যত সম্পদ আছে, সে আরো অর্জনের জন্য মানুষের কাছে হাত পাতে, পরের হক মেরে লুটপাট করে সম্পদ অর্জন করছে। তাদের মতো নিঃস্ব ভিখারী আর নেই। আবদুর রশীদ লুলু একজন প্রকৃত হৃদয়বান ধনী। মাতৃ ভক্তিতে আকাশ ছোঁয়া হৃদয় আবদুর রশীদ লুলুর। মায়ের ‘আনোয়ারা’ প্রিয় নামটি মানুষের কাছে স্মরণীয় ও বরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যে তিনি কতই না চিন্তা-ভাবনা চেষ্টা সাধনা চালিয়ে যাচ্ছেন। সময়, শ্রম ও
অর্থ সব ব্যয় করে যাচ্ছেন অকাতরে।

আবদুর রশীদ লুলু স্থাপন করেছেন আনোয়ারা ফাউন্ডেশন। এছাড়া মায়ের নামে তিনি গড়ে তুলেছেন আনোয়ারা হোমিও হল। এরপর শত সংখ্যা প্রকাশের প্রত্যয় নিয়ে ২০০৪ সাল থেকে প্রকাশ করে যাচ্ছেন ‘আনোয়ারা’ নামে শিকড় সন্ধানী এক সাহিত্য মাসিক। ‘আনোয়ারা’ কেমন করে যেনো আমার হাতে এসেছিল। আমিও এ পত্রিকায় লিখেছি। আনোয়ারার প্রথম পৃষ্ঠা থেকে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত আমি খুটে খুটে পড়েছি- আমার খুব ভালো লাগতো। অনেক নবীন প্রবীণেরা কবিতা, ছড়া, গল্প, প্রবন্ধ-নিবন্ধ আলোচনা ও কৃষি বিষয়ক লেখা লিখেছেন। আবদুর রশীদ লুলু সাহেবের সুযোগ্য পুত্র আনিসুল আলম নাহিদ ‘চাষাবাদ’ নামে চমৎকার পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন দেখেছি এবং লিখেছি। দুটি পত্রিকার মূল উদ্দেশ্য ছিল গণমানুষের কল্যাণ। আনোয়ারা ফাউন্ডেশন এর জন্ম ১ জানুয়ারি ২০১৪ ইছায়ী সনে। দীর্ঘ আট বছর যাবত মানব ও প্রকৃতি কল্যাণে নিজস্ব শক্তি সামর্থে অনেক কাজ করে যাচ্ছেন এবং আরো অনেক কাজের পরিকল্পনা নিয়েছেন। আবদুর রশীদ লুলু সাহেবের মায়ের প্রতি অসীম ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার বিষয়টি জানতে পেরে আমি সত্যি  অবাক হয়ে যাচ্ছি। মাতৃভক্তির গল্প আমি অনেক শুনেছি। ভালোবাসা ভক্তি-শ্রদ্ধা পাওয়ার বড় হকদার প্রথমত মা, অন্য কেউ নন। এক সাহাবীর প্রশ্নের জবাবে রাসূল (সা.) তিনবার বলেছেন মায়ের কথা, তারপর বলেছেন বাবার কথা।

মহান সাধক বায়েজীদ বোস্তামীর মাতৃভক্তির গল্প অনেকেই জানেন। আমাদের দেশে অনেক মাতৃভক্ত লোক আছেন। তাদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জানাই। আমাদের এ সময়ে এবং নিকট অতীতে মায়ের স্মৃতি ও মায়ের নাম স্মরণীয় করে রাখার জন্য অনেকে যা কিছু করেছেন তা নিজের অর্থে নয়, নিজের শরীরের ঘাম ও রক্ত ঝরিয়ে নয়, প্রায়ই পরের অর্থে ও হাতে ক্ষমতা পেয়ে। জনাব রশীদ সাহেবকে কেউ তাঁর মহত কাজের জন্য ধন্যবাদ না দিলেও আমি তাঁর মাতৃভক্তির জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। হৃদয়বান মানুষ যে ধর্ম বর্ণ ও গোষ্ঠীর লোক হোক না কেন তাকে ধন্যবাদ জানাতে হয়। আর সবচেয়ে বড় কথা এবং সত্যি কথা হলো আবদুর রশীদ লুলু কারো ধন্যবাদ বা প্রশংসা পাওয়ার জন্য আনোয়ারা ফাউন্ডেশন স্থাপন করেননি। মায়ের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা-ভক্তি ভালোবাসার কারণে মানব ও প্রকৃতি কল্যাণে এতো সব ব্যয়বহুল কাজ করে যাচ্ছেন।

কেউ কেউ প্রেমিকার স্মৃতি অমর করে রাখার জন্য উপন্যাস রচনা করেন। আমাদের এখানে রেফাজউদ্দীন মল্লিক নামে এক ভদ্রলোক তাঁর স্ত্রীকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ‘তুমি ফিরে এসো’ নামে একটি উপন্যাস লিখেছেন। আমি তাঁর উপন্যাস পড়ে স্ত্রীর প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসা জেনে দীর্ঘ এক চিঠি লিখে বলেছিলাম, ভাই সাহেব, এই উপন্যাসটি আপনার ‘প্রেমের তাজমহল’। সেই ভাইটি চিঠি পড়ে, এতোই খুশি হয়েছিলেন যে, তৎক্ষণাতই বইটি দ্বিতীয় মুদ্রণ করে আমার চিঠিটি ছেপেছেন বইটি প্রসঙ্গে অভিমত হিসাবে। আমার চিঠি বইটির সঙ্গে ছাপার বড় কারণ হলো স্ত্রীর প্রতি তার ভালোবাসা।

শ্রদ্ধা-ভক্তি ভালোবাসা মানুষের সবচেয়ে বড় গুণ। এই গুণটি মানুষকে কর্মে প্রেরণা ও উৎসাহ দেয়। এটি মানুষের চালিকাশক্তি। ব্যক্তি ও সমাজ কল্যাণে ধর্মীয় কাজে ত্যাগ ও সকল রকম সাধনায় থাকতে হয় প্রেম ও ভালোবাসা। আবদুর রশীদ লুলুকে তাঁর মায়ের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা মানব ও প্রকৃতি কল্যাণে কাজ করতে উৎসাহিত করছে, তাকে একদিক থেকে আরেক দিকে তাড়াচ্ছে, তাকে এক স্থানে সীমিত সীমার মধ্যে স্থির থাকতে দিচ্ছে
না। মহত কর্মীদের এটি এক বড় বৈশিষ্ট্য।

সহজ সরল পথে থেকে ভালো কাজ করাটা অতো সহজ নয়। পদে পদে কাজে বাঁধা দেবার কিছু হিংসুক কুচক্রি লোক আছে সমাজে। তারা নানা রকম মিথ্যা কথা ছড়িয়ে কাজে বাধা দেবার জন্য মরিয়া হয়ে লেগে থাকে। তারা কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করে। কিন্তু হাতি কি কুকুরের ঘেউ ঘেউ শুনে পথ ছেড়ে দেয়? সাহসী মহত ব্যক্তিগণ তাদের গন্তব্যে হাঁটতেই থাকে। হিংসুক মানুষের হিংসা ও নিন্দা একেবারে খারাপ মনে করবেন না রশীদ সাহেব। ঐ যে একটা গান আছে না-
‘নিন্দার কাদা যদি না লাগিল গায়
প্রেমের কি স্বাদ আছে বলো—-’
এখানেই ভালো কাজে জনসেবার স্বাদ।
সত্য মিথ্যা ও ভালোমন্দের মাপকাঠি সমাজের কোনো মানুষ নয়। মাপকাঠি একমাত্র আল্লাহর রাসূল (সা.)। তাঁর মতো ভালো মানুষ দুনিয়ায় কি আছে? তাঁকে কি সবাই প্রশংসা করেছেন, আজো কি সবাই প্রশংসা করছেন? আপনি একমাত্র রাসূল (সা.)কে অনুসরণ করুন। তাঁর অনুসরণের মধ্যে রয়েছে আমাদের ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ। আমাদের পিতামাতার জান্নাত।

মহান আল্লাহ বলেছেন ঃ ‘তোমাদের জন্য (সকল কাজে) সর্বোত্তম আদর্শ আল্লাহর রাসূল।’

আপনার মা মরহুমা আনোয়ারা বেগমের জন্য আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করছি- আল্লাহ তাঁকে জান্নাতের সর্বউচ্চ
স্থান দান করুন। আর আল্লাহ আপনার হায়াত বৃদ্ধি করুন ও সকল কাজে সহায় হোন। আমীন।

লেখক: কবি, বহুগ্রন্থ প্রণেতা।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!