সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আব্দুর রশীদ লুলু

চাষাবাদ বিষয়ক টুকিটাকি – ৩৭



 লেটুস শাক গ্রাম অঞ্চলের পাশাপাশি শহরের সীমিত জায়গায় বা বাসা-বাড়ীর ছাদে বা বারান্দায় চাষাবাদ করা যায়। শীত প্রধান দেশে সারা বছর চাষাবাদ সম্ভব হলেও দেশে সাধারণত রবি মৌসুমে (অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত) কয়েক দফায় বীজ বোনা এবং চারা রোপণ করা যেতে পারে। লেটুসের অনেকগুলো জাত রয়েছে। বীজ সরাসরি মূল জমিতে বপণ করা যায়। আবার বীজতলায় চারা উৎপাদন করে মাস খানেক পরে উত্তোলন করে পরিকল্পিতভাবে মূল জমি/নির্দিষ্ট জায়গা/ড্রাম-টবে রোপণ করা যায়। বাণিজ্যিকভাবে জমিতে লেটুস চাষাবাদে লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ১২ ইঞ্চি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৮ ইঞ্চি হলে ভালো হয়। লেটুসের বীজ খুব ছোট হওয়ায় বপণের সময় বীজের সাথে মাটির কণা বা ছাই মেশানো ভালো। চারা লাগানোর এক মাস পর লেটুস পাতা খাওয়ার উপযোগি হয়। উল্লেখ্য, শাক ছাড়াও লেটুস পাতা সালাদ হিসেবে টমেটো, পেঁয়াজ, মরিচ এসবের সাথে ব্যবহৃত হয়।

 ঔষধি গুণ সম্পন্ন আমলকী চাষাবাদের জন্য মার্চ-এপ্রিল মাস বীজ বপণের উপযুক্ত সময়। সংশ্লিষ্টরা বলেন, বীজ বপণের পুর্বে ৫-৬ ঘন্টা হাল্কা গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখা ভালো। আমলকীর বীজ অঙ্কুরোদগমে কমপক্ষে ২-৩ সপ্তাহ সময়ের প্রয়োজন হয়। চারার বয়স দেড় থেকে দুই বছর হলে পূর্ব প্রস্তুতকৃত নির্দিষ্ট জায়গায় রোপণ করতে হয়। বীজ ছাড়াও বংশবিস্তারের জন্য ডালের কাটিং এবং গুটি কলমও ব্যবহার করা যেতে পারে। উল্লেখ্য, আমলকী মাঝারি আকারের পাতা ঝরা উদ্ভিদ। উচ্চতায় এটি ২০-৩০ ফুটের মতো হয়।

 দ্রুত বর্ধনশীল ঘাস ‘সুইট জাম্বো’ এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হচ্ছে, বিশেষ করে চরাঞ্চলে। গবাদি পশুর খুব প্রিয় ও উপকারি এ ঘাস একটু সচেষ্ট হলে দেশের যে কোনো অঞ্চলে সহজেই চাষাবাদ করা সম্ভব। বীজ বপণের ৫০ দিনের মাথায় এ ঘাস কাটার উপযোগি হয়। কাটা ঘাসের মুড়া থেকে বার বার নতুন ঘাস জন্মায়। কিছুদিন পর পর এ ঘাস কাটা যায়। প্রচুর চাহিদা সম্পন্ন এ ঘাস চাষাবাদ নি:সন্দেহে লাভজনক।

 বিদেশী ফল স্ট্রবেরি এখন দেশে চাষাবাদ হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, এর চাষাবাদ সহজ। এ গাছে রোগ-বালাই তেমন হয় না। তবে কখনো স্ট্রবেরির চাষাবাদে পোকা-মাকড় দেখা গেলে অন্যান্য ফল চাষাবাদের ন্যায় প্রতিকার ব্যবস্থা নিলেই চলে। কার্তিক মাসের শুরুতেই জমিতে চারা লাগানো শুরু করা যায়। সাধারণত স্ট্রবেরি গাছের লতা কেটে চারা হিসেবে লাগানো হয়। এ ছাড়া শেকড় থেকেও চারা তৈরি করা যায়। উপযুক্ত পরিচর্যায় চারা লাগানোর এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে স্ট্রবেরির ফুল ফুটতে এবং ফল ধরতে শুরু করে।

 অত্যন্ত পুষ্টিকর ও সুস্বাদু সবজি কচু চাহিদার প্রেক্ষিতে বাণিজ্যিক চাষাবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, কচু চাষে সময় ও ব্যয় কম হয়। পক্ষান্তরে লাভ বেশি হয়। দেশের চরাঞ্চলসহ নীচু জায়গায় এর চাষাবাদ ভালো হয়। কচু চাষাবাদে সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। সাধারণ পরিচর্যায়ই কচু ভালো হয়।

 অনেকেই (গ্রামে এবং শহরে) আগ্রহের সাথে পেঁপে চাষাবাদ করেন। কিন্তু অনেক সময় ভালো ফলন পাওয়া যায় না। অভিজ্ঞরা বলেন, এর অন্যতম একটা কারণ পরাগায়ণের অভাব। অনেকেই বাগানে পুরুষ গাছ রাখতে চান না। পুরুষ গাছ বুঝতে পারলেই নির্বিচারে সাথে সাথে তা কেটে ফেলেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটা ঠিক না। ভালো ফলন পেতে অর্থাৎ পরাগায়ণের সুবিধার্থে পেঁপে বাগানে ১০% পুরুষ গাছ রাখতে হবে। পেঁপে চাষাবাদে এ দিকে তাই সবার সযত্নে দৃষ্টি রাখা দরকার।

 ঔষধি গুণ সম্পন্ন হরিতকি চাষাবাদের জন্য বীজ বপণের উপযুক্ত সময় জুন-জুলাই মাস। বীজ বপণের পূর্বে একটানা ৪৮ ঘন্টা পানিতে তা ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর বীজ রোদে শুকিয়ে পুনরায় ভিজিয়ে বীজতলায় লাগাতে হয়। হরিতকির বীজ অঙ্কুরোদগমে ১৫-২০ দিনের মতো সময় লাগে। চারার বয়স ৪-৫ মাস হলে পূর্ব প্রস্তুতকৃত মূল/নির্বাচিত জায়গায় রোপণ করতে হয়। উল্লেখ্য, হরিতকি মাঝারি থেকে বৃহদাকৃতির পাতাঝরা বৃক্ষবিশেষ। উচ্চতায় একটি সাধারণত: ২৫-৩০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

 ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এবং চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত স্টেভিয়ার চাষাবাদের জন্য দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগি। এর চাষাবাদে পানি জমে না এমন জমি নির্বাচন করতে হয়। ৪-৫টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে ও সমান করে নিতে হয়। স্টেভিয়ার বীজ ৭-৮ দিন গ্রিন হাউসে রেখে গজিয়ে তারপর রোপণ করতে হয়। টিস্যু কালচার চারা দিয়ে ও এর চাষাবাদ করা যায়। এ ছাড়া গাছের কাটিং বা শাখা কলমের মাধ্যমেও চাষাবাদ সম্ভব। বৈজ্ঞানিকভাবে চাষাবাদে সাধারণত প্রতি শতকে প্রায় পাঁচশত চারার প্রয়োজন হয়। চারা থেকে চারার দূরত্ব ৬-৭ ইঞ্চি এবং লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ১৮-২০ ইঞ্চি হলে ভালো হয়। উল্লেখ্য, স্টেভিয়ার চাষাবাদ লাভজনক। কেননা, দেশে-বিদেশে ক্রমেই এর চাহিদা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, উপযুক্ত পরিচর্যায় ও বৈজ্ঞানিক ভাবে চাষাবাদে একর প্রতি বছরে ৪-৫ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।

লেখক: সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা)।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!