ওয়ানডে সিরিজ শেষে আজ শুক্রবার (১৪ জুলাই) টি-টোয়েন্টি সিরিজে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ-আফগানিস্তান। শামীম পাটোয়ারী ও তাওহিদ হৃদয়ের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের সুবাদে আজকের ম্যাচে ২ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। ফলে দুই ম্যাচ সিরিজে টাইগাররা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল। শামীম পাটোয়ারি ২৫ বলে ৩৩ রান করে সাজঘরে ফিরলে ব্যাট করতে নামেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ১৯.৫ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫৭ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। হৃদয় ৩২ বলে ৪৭ রানে এবং শরিফুল ১ বলে ৪ রানে অপরাজিত থাকেন।
এর আগে টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫৪ রান তোল আফগানরা। রান তাড়ায় ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে টপাটপ ৪ উইকেট হারায় টাইগাররা। পঞ্চম উইকেট জুটিতে তাওহিদ হৃদয় ও শামীম হোসেন দলের হাল ধরেন। তাদের রক্ষণাত্মক-আক্রমণাত্মক ভঙ্গির ব্যাটিংয়ে ১৩ ওভারে ১০০ রানে পা রাখে বাংলাদেশ।
আফগানদের দেয়া লক্ষ্য বাংলাদেশের জন্য ততোটা কঠিন না হলেও শুরুতেই খাওয়া হোঁচটে প্রায় কোণঠাসা টাইগাররা। ইনিংসের প্রথম বাউন্ডারি হাঁকানোর পরই ফজল হক ফারুকির বলে বোল্ড হয়ে আউট হন রনি। তার আউটে কিছুটা হলেও চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সেই চাপ সামলে দলের হাল ধরে লিটন-শান্ত জুটি। মুজিবুর রহমানের করা ষষ্ঠ ওভারে রানের গতি বাড়াতে গিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আউট হন ১২ বলে ১৪ রান করা শান্তও। এর পরপরই ফিরে যান লিটন। টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে হারিয়ে পাওয়ার প্লেতেই চাপের মুখে বাংলাদেশ। শুরুর ধাক্কাটা সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন সাকিব ও হৃদয় জুটি। একপর্যায়ে অবস্থান শক্ত করে নির্ভয়ে ব্যাট চালাতে শুরু করেন সাকিব। এটাই কাল হয়ে দাড়ায় টাইগারদের জন্য। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ফরিদ আহমেদের বলে করিম জানাতের হাতে ধরা পড়ে বিদায় নেন এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। সাজঘরে ফেরার আগে তিনি তিনটি বাউন্ডারিতে সাজানো ১৯ রানের ইনিংস খেলেন। এরপর হৃদয়কে সঙ্গ দেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলে তার বিশ্বকাপজয়ী সতীর্থ শামীম হোসেন। দুই ব্যাটার অবস্থান শক্ত করে বাউন্ডারি হাঁকাতে শুরু করেন।
এর আগে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে শুরু থেকেই আফগান ব্যাটারদের চাপে রাখে টাইগার বোলাররা। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই প্রথম উইকেট হারাতে পারতো আফগানিস্তান। তবে তাসকিন আহমেদের বলে আফগান ব্যাটারের তুলে মারা বল দৌঁড়ে গিয়ে ধরলেও খেই হারিয়ে মাটিতে স্পর্শ করান রনি তালুকদার। এরপরের ওভারেই প্রথম উইকেট হারায় সফরকারীরা। নাসুম আহমেদের বলে তাওহিদ হৃদয়ের হাতে ধরা পড়ে সাজঘরের পথ ধরেন হজরতউল্লাহ জাজাই। এই ওপেনাররের ব্যাট থেকে আসে ৮ রান। কিছুটা মারমুখী হলেও আরেক ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ ১৬ রানে ফেরেন তাসকিন আহমেদের বলে। ওয়ানডাউনে নামা ইব্রাহিম জাদরান ৮ রানে উইকেটরক্ষক লিটন দাসকে ক্যাচ দেন শরিফুল ইসলামের বলে। করিম জানাতকে ৩ রানে ফেরান সাকিব।
ধারাবাহিকভাবে উইকেট হারানোর পর আজমতউল্লাহ উমরজাইকে সঙ্গে নিয়ে দলের হাল ধরেন মোহাম্মদ নবী। জাদরান ২৩ রানে ফিরলেও হাফ সেঞ্চুরি করেন নবী। এই ব্যাটারের ব্যাট থেকে আসে অপরাজিত সর্বোচ্চ ৪০ বলে ৫৪ রান। এটি তার টি- টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের পঞ্চম ফিফটি। ১৮ বলে ৩৩ রানের মারমুখী ইনিংস খেলে সাকিবের বলে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন আজমতউল্লাহ ওমরযাই। শেষ দিকে রশিদ খান করেন ৩ রান। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫৪ রান তুলতে পারে আফগানরা। টাইগারদের পক্ষে ৪ ওভারে ২৭ রান খরচায় সর্বোচ্চ দুটি উইকেট নেন সাকিব। একটি করে উইকেটের দেখা পান নাসুম, তাসকিন, মোস্তাফিজ,শরিফুল, মিরাজ। জিততে হলে টাইগারদের করতে হবে ১৫৫ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৫৪/৭ (জাজাই ৮, গুরবাজ ১৬, ইব্রাহিম ৮, করিম ৩, নবি ৫৪*, নাজিবউল্লাহ ২৩, ওমারজাই ৩৩, রশিদ ৩, মুজিব ০*; নাসুম ৩-০-২০-১, তাসকিন ৪-০-২৯-১, শরিফুল ৩-০-৩০-১, সাকিব ৪-০-২৭-২, মুস্তাফিজুর ৪-০-৩১-১, মিরাজ ২-০-১৩-১)
বাংলাদেশ: ১৯.৫ ওভারে ১৫৭/৮ (লিটন ১৮, রনি ৪, শান্ত ১৪, সাকিব ১৯, হৃদয় ৪৭*, শামীম ৩৩, মিরাজ ৮, তাসকিন ০, নাসুম ০, শরিফুল ৪*; ফারুকি ৪-০-৩৬-১, মুজিব ৪-০-২২-১, ওমরজাই ৩-০-৩৪-১, রশিদ ৪-০-২৪-১, ফরিদ ২-০-১৭-১, নবি ১-০-৮-০, করিম ১.৫-০-১৫-৩)।
ফল: বাংলাদেশ ২ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ২ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: তাওহিদ হৃদয়।