পানি নিষ্কাশনের সুবিধা সম্বলিত দেশের যে কোনো মাটিতেই খেজুর চাষাবাদ সম্ভব বলে সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করেন। তবে বেলে ও বেলে দোআঁশ মাটিতে খেজুরের চাষাবাদ ভালো হয়। এর চাষাবাদের জন্য বীজ ২৪-৪৮ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে মাটির আধা ইঞ্চি গর্তে বপণ করতে হয়। তারপর ২-৩ সপ্তাহ অল্প অল্প করে পানি দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে পানি দেয়ার ফলে যাতে কাদা না হয়। এরূপ করার পর সাধারণত: খেজুরের চারা গজাতে ৩-৪ সপ্তাহ সময় লাগে। দিনে ৫-৮ ঘন্টা রোদ লাগে এমন জায়গা খেজুর চাষাবাদের জন্য নির্বাচন উচিৎ। একটি গাছ থেকে আরেকটি গাছের দূরত্ব হবে ১৫-২০ ফুট। তবে একর প্রতি ১০০-১২১টির বেশি গাছ না লাগানো ভালো। উল্লেখ্য, খেজুর গাছ অনুর্বর এমনকি লবণাক্ত মাটিতেও হয়ে থাকে। উপযুক্ত পরিচর্যায় লাগানোর ৪-৫ বছরে খেজুর ফলন দিতে শুরু করে এবং এক নাগাড়ে ১৫০ বছর পর্যন্ত ফলন দিয়ে থাকে। বলা বাহুল্য, দেশে সৌদি খেজুরের চাষাবাদের সাফল্যের খবর ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আসতে শুরু করেছে।
দেশের জনপ্রিয় একটি সবজি হলো কাঁকরোল। এর চাষাবাদের জন্য সাধারণত মোথা রোপণ করতে হয়। দুই মিটার দূরত্বে সারিতে রোপণ করে খড়কুটো দিয়ে ঢেকে দেয়া ভালো। কাঁকরোলের মোথা রোপণের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে অন্তত: ৫% যেন পুরুষ গাছের মোথা হয়, কেননা কাঁকরোলের পুরুষ ও স্ত্রীফুল আলাদা আলাদা গাছে জন্মে। বলা বাহুল্য, পরাগায়নের সুবিধার্থে স্ত্রী ও পুরুষ ফুল জরুরী। কাঁকরোলের অনেকগুলো জাতের মধ্যে আসামী একটি উন্নত জাত। এ জাতের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, ফল গুলো সুস্বাদু, গোলাকার ও বেঁটে আকৃতির।
ছোট এবং লতানো বীরুৎ প্রকৃতির উদ্ভিদ থানকুনি চাষাবাদ তথা বংশবিস্তারের জন্য বীজ এবং অঙ্গজ প্রজনন পদ্ধতিই প্রধান মাধ্যম। বর্ষাকাল থানকুনি চাষাবাদের উপযুক্ত সময়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দ্রুত বংশ বিস্তারের জন্য অঙ্গজ অংশ বিশেষত স্টোলন গুরুত্বপূর্ণ। থানকুনি সাধারণত স্যাঁতস্যাতে ও ছায়াময় পরিবেশে ভালো হয়। উল্লেখ্য, থানকুনি একটি ভেষজ উদ্ভিদ। গ্রামাঞ্চলে সহজলভ্য এ ভেষজ উদ্ভিদ পেটের পীড়ায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।
ফুলকপির একটি হাইব্রিড জাত হলো স্নেহা। এর উল্লেখযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট্য হলো- আকর্ষণীয় ও উজ্জ্বল সাদা বর্ণের, ফুলকপির বাঁধন শক্ত (টাইট) ও ডোম আকৃতির, প্রতিটির ওজন ১-১.৫ কেজি পর্যন্ত হয়, খেতে সুস্বাদু, ভরা মৌসুমে চাষাবাদ উপযোগী, উপযুক্ত পরিচর্যায় চারা রোপণের ৫৫-৬০ দিনের মধ্যে ফসল উত্তোলন করা যায় এবং একর প্রতি ফলন ১২-১৫ টন পর্যন্ত হয়ে থাকে। উল্লেখ্য এ জাতের ফুলকপির বীজ বপণের উপযুক্ত সময় সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস। সাধারণত একর প্রতি ২০০ গ্রাম এবং শতক প্রতি ২ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।
ছোট আকৃতির এবং পাতাঝরা গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ নিসিন্দা সহজেই সারা দেশে চাষাবাদ সম্ভব। চাষাবাদের জন্য এর পরিপক্ক ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে বীজতলায় বপণ করতে হয়। সাধারণত ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে বীজের অঙ্কুরোদগম হয়ে থাকে। চারার বয়স ৪-৬ মাস হলে পূর্ব পরিকল্পিত/প্রস্তুতকৃত জমিতে রোপণ করতে হয়। কাটিং এর মাধ্যমেও নিসিন্দার বংশ বিস্তার করা হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, নিসিন্দা একটি বহুমুখী ভেষজ উদ্ভিদ। বিশেষ করে দীর্ঘদিন শস্য সংরক্ষণে এর পাতার ব্যবহার হয়ে থাকে। এর পাতা দূর্গন্ধযুক্ত হওয়ায় পোকা-মাকড় এর থেকে দূরে থাকে।
উফশী জাতের একটি ভালো মুলা হলো বারি মুলা-২ (পিংকী)। এ মুলার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো- পাতার শং কম (ফলে এর পাতা শাক হিসেবে খাওয়ার উপযোগী), মুলা লালচে রংয়ের নলাকৃতির, মুলার ভেতর সহজে ফাঁপা হয় না এবং সাধারণত মুলায় শাখা গজায় না। বপণের ৪৫-৫০ দিন পর খাওয়ার উপযোগী হয় এবং ৭৫ দিন পর্যন্ত অনায়াসে খাওয়া যায়, উপযুক্ত পরিচর্যায় সাধারণত: প্রতিটি মুলা ৮০০-৯০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। এছাড়া এ মুলা খেতে সুস্বাদু এবং ঝাঁঝালো প্রকৃতির। উল্লেখ্য, বিশেষজ্ঞরা বলেন, পানি নিষ্কাশনের সুবিধা সম্বলিত দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি মুলা চাষাবাদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। আশ্বিন-কার্তিক মাস মুলার বীজ বপণের উপযুক্ত সময়। হেক্টর প্রতি সাধারণত: ২.৫-৩ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।
পেঁয়াজের চাষাবাদে একটি অন্যতম সমস্যা হলো ব্লাইট রোগ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটি ছত্রাক জনিত কারণে হয়ে থাকে। এ রোগের লক্ষণ হলো- প্রথমে পাতায় পানি ভেজা বাদামী দাগ দেখা যায়। পরে রোগাক্রান্ত পাতা উপরের দিকে ক্রমেই মরতে থাকে। এর প্রতিকারে রোগ সনাক্ত হওয়ার সাথে সাথে আক্রান্ত পাতা তুলে ক্ষেত থেকে দূরে নিয়ে নষ্ট বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এরপরও এ রোগ ব্যাপক আকারে দেখা দিলে কৃষিবিদ এবং অভিজ্ঞ চাষীর পরামর্শ নিতে হবে।
বীরুৎ বা ছোট গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ তুলসি সহজেই সারা দেশে চাষাবাদ সম্ভব। ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত তুলসী চাষাবাদের জন্য পরিপক্ক ফল থেকে বীজ সংগ্রহের পর তা রোদে ভালো করে শুকাতে হয়। বীজ বপণের পূর্বে ৫৬ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে অঙ্কুরোদগম সহজ হয়। সাধারণত বপণের ৫-১০ দিনের মধ্যে তুলসীর অঙ্কুরোদগম হয়ে থাকে। চারার বয়স ৬-৮ সপ্তাহ হলে তা মূল জায়গায় রোপণের উপযুক্ত হয়। উল্লেখ্য, সর্দি-কাশি, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা, পেটের পীড়া, বাত, দাদ প্রভৃতি ক্ষেত্রে এর ব্যবহার গ্রামাঞ্চলে বহুল প্রচলিত।
লেখক: সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী অনিয়মিত প্রকাশনা)।