“অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলন”(The United Bengal Movement) এর আহবায়ক ও “United Bengal News” এর সম্পাদক হাসনাত আরিয়ান খানের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত “PALASHI TO WESTMINSTER” গণসমাবেশের সাথে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হকের দৌহিত্র শিক্ষাবিদ সৈয়দ মামনুন মোর্শেদ, সাবেক রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব ও সাপ্তাহিক সুরমা সম্পাদক শামসুল আলম লিটন, কবি আহমেদ ময়েজ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট বদরুজ্জামান বাবুল, সাংবাদিক হাসান আল জাবেদ ও অ্যাক্টিভিস্ট মাহতাব উদ্দিন।
বাংলা ভাগ ও পলাশী দিবসের ইতিহাস তুলে ধরে অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি শিক্ষাবিদ সৈয়দ মামনুন মোর্শেদ বলেন, ‘পলাশী থেকে শিক্ষা নেবার অনেক কিছু আছে। এক নম্বর হলো ষড়যন্ত্র। ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রে সেদিন ওরা জয়ী হয়েছিলো। আজও নানান ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমরা যে আমাদের দু’টা পোর্ট দিলাম ভারতকে, কিসের বিনিময়ে? তারা কত ভাড়া দিবে? রেলপথ যেটা করছে ওরা, ওখান থেকে আমরা কি ভাড়া পাবো? জায়গাটা তো আমাদের? ওখান থেকে আমরা কিছুই পাবো না? যাত্রীদের ভাড়াটাও তো আমাদের পাওয়ার কথা। মংলায় যদি মালামাল নিয়ে ভারতের একটা জাহাজ ভিড়ে, আমাদেরকে ভাড়া দিবে না? ট্রেডের টাকা না দিয়ে, কেমন করে তারা সেটা ওখানে নিয়ে যাবে? ওদের দেশে একটা ভিসার জন্য গেলেও তো তিন মাসের আগে পাওয়া যায় না। সত্যি কথা বলতে গেলে আমরা হচ্ছি ভেড়ার পাল। সাহস বলতে কিছু নাই। আমাদের ‘ইউনাইটেড বেঙ্গল’ এর কাঙ্খিত লক্ষে পৌছতে হলে সবাইকে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। এখানে আমরা এক মিলিয়ন বাঙালি আছি। শুধু বিলেতের বাঙালিরা না, পৃথিবীতে যত বাঙালি প্রবাসী আছি, আমাদের সবার ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। ইনশাআল্লাহ এমন একদিন আসবে যেদিন আমরা আমাদের কাঙ্খিত লক্ষে পৌছবো। আমরা কমিউনাল ডিভিশনে বিশ্বাস করি না। আমাদের কেউ বিভক্ত করে বেশিদিন রাখতে পারবে না। শুধু দুই বাংলাই না, ঐতিহাসিকভাবে বিহার, উড়িষ্যা, আরাকানও বাংলার প্রভিন্স। এটা ঐতিহাসিক সত্য, এটা ঐতিহাসিক বাস্তবতা। কেনো তারা আমাদের বিভক্ত করে রাখবে!’ তিনি আরো বলেন, ‘ভবিষ্যতে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাংলার স্বাধীনতা নির্ভর করছে ইউনাইটেড বেঙ্গলের উপর, বৃহত্তর বাংলার উপর। এটাই বাস্তবতা। অখন্ড বাংলা নিয়ে আমাদের নিয়মিত প্রোগ্রাম করা উচিত, প্রতিমাসে করা উচিত।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ বক্তা কবি আহমেদ ময়েজ বলেন, ‘আমরা অখন্ড বাংলায় বিশ্বাস করি। আমার তিতুমিরের বাংলা, হাজি শরীয়তের বাংলা, এই বাংলাকে যারা দখল করেছে, আমরা তার অধিকার চাই। আমরা কাউকে দখল করতে চাই না। আমাদেরকে অবশ্যই প্রজন্মের কাছে জবাবদিহি করতে হবে, কেনো বাংলা খন্ডিত হলো? এর দায় আমাদের। এই দায় মেটানোর জন্যই আমরা আজ দদাঁড়িয়েছি। আমরা অখন্ড বাংলা চাই। বাংলা আছে, পূর্ব এবং পশ্চিম নাম নিয়ে। পশ্চিমদের পূর্ব নাই আবার পশ্চিম হয় কী করে? এটা আমার বুঝে আসে না। পূর্ণ বাঙালি হতে হলে আপনাকে পূর্ণ বাংলার দাবি জানাতে হবে। না হলে আপনি পূর্ণ বাঙালি হতে পারবেন না। অখন্ড বাংলা নিয়ে আপনি অখন্ড বাঙালি হয়ে থাকবেন। এই মতের সাথে যারা একমত পোষণ করবেন তাঁরাই পূর্ণ বাঙালির মর্যাদা তুলে ধরতে পারবেন। তাঁরাই পূর্ণবহাল করতে পারবেন সেই হারানো গৌরবকে। আজকে এই পলাশীর দিনে আমরা এই দাবিটি তুলে ধরতে চাই সবার কাছে। পূর্ব বাংলা, পশ্চিম বাংলা বলে কিছু নেই। অখন্ড বাংলাই আমাদের আসল বাংলা। আসুন ফিরিয়ে নেই সেই পুরনো দিনকে।’
জেষ্ঠ সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট বদরুজ্জামান বাবুল বলেন, ‘আমরা ব্রিটিশ সরকারকে বলতে চাই, আমরা যুক্ত বাংলায় ফিরে যেতে চাই। আমরা আসাম, বিহার, উড়িষ্যাসহ বাংলার সব অংশ ফিরে পেতে চাই। আমরা বাংলাদেশি। পুরো ইংল্যান্ড আমাদের রেভিনিউয়ে গড়ে ওঠেছে। আমাদের দেশের অর্থনীতিতে মন্দা চলছে। আমি ব্রিটিশ সরকারকে অনুরোধ করি, আপনারা আমাদেরকে সহযোগিতা করুন। আপনারা আমাদের ইউনাইটেড বেঙ্গল আন্দোলনকে সমর্থন দিন।’
সাংবাদিক হাসান আল জাবেদ বলেন, ‘এখনকার সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তখন মীর জাফর ও ঘসেটি বেগমদের ষড়যন্ত্রে আমরা বাংলা হারিয়েছি। এখন ঘসেটি বেগমের কারণে আমরা ক্ষুদ্র বাংলাদেশটাও হারাতে বসেছি। তখন তারা দেশটাকে বিট্রিশের লুটেরা ভূখন্ডে পরিণত করেছে। এখন এরা ভারতের লুটেরা ভূখন্ডে পরিণত করেছে। আজকে বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র কোন কিছু নাই। তখনকার ব্রিটিশ আর এখনকার ব্রিটিশদের মধ্যে রাত-দিন পার্থক্য। এখন এরা সভ্য জাতি-মানবাধীকার, গণতন্ত্র সবকিছু সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট। আমরা আশা করবো, ব্রিটিশরা এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং অখন্ড বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করবে। ব্রিটিশরা আমাদের সহযোগিতা করলে আমরা সেই বাংলা আবার ফিরে পাবো।’
অ্যাক্টিভিস্ট মাহতাব উদ্দিন বলেন, ‘পলাশীর যে ঘটনা সেটা আমরা সবাই জানি। এই ঘটনা আমি রিপিট করতে চাচ্ছি না। আজকে বাংলা বলতে আমরা শুধু বাংলাদেশ বুঝি। আসলে বাংলা বলতে শুধু বাংলাদেশ না। বাংলা বলতে বর্তমান বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরাসহ এদিকে আরাকান। এখানকার বাংলা ভাষাভাষী যে জনগণ, তাদের মধ্যে যে সাংস্কৃতিক বন্ধন, বৃহত্তর বাংলার মানুষ আমরা যেনো একইভাষায় একইসুরে কথা বলতে পারি সেই রিইউনিফিকেশন আমরা চাচ্ছি। সেজন্যই আজকে আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি। এবং আমরা ভয়েস রেইজ করছি। বাংলা ভাষাভাষী জনগণকে আমরা একই ছাতার নিচে চাচ্ছি।’
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক নৌশিন মোস্তারী মিয়া বলেন, ‘আজকে ২৩শে জুন পলাশী দিবস উপলক্ষে আমরা এখানে জড়ো হয়েছি। এই দিবসটা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমাদের ভূখন্ড বাংলা, আসাম, ত্রিপুরা, আরাকানসহ যে ভূখন্ড রয়েছে এটা আমাদের বাংলাদেশেরই অংশ। আমরা চাই আমাদের ভূখন্ডকে ফিরে পেতে। এমনকি আমাদের উপরে ভারতীয় যে দখলদারিত্ব রয়েছে এটা যাতে বন্ধ হয়। বর্ডার কিলিং যেনো বন্ধ হয়। আমরা পলাশী দিবসে মানুষকে উজ্জীবিত করতে এবং ভারতীয় আধিপত্য বন্ধে সোচ্চার হওয়ার উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।’
“পলাশী টু ওয়েস্টমিনস্টার” গণসমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- অ্যাক্টিভিস্ট মো: মনিরুজ্জামান, অ্যাক্টিভিস্ট নজরুল ইসলাম খোকন ও অ্যাক্টিভিস্ট মাহবুবুর রহমান শামীম। এসময় সাংবাদিক খালেদ মাসুদ রনি, মানবাধীকার কর্মী আশরাফুল আলম, তাহমিনা আক্তার, সাংবাদিক মাহমুদুল হৃদয়, মানবাধীকার কর্মী উমর ফারুক, গোলাম রব্বানী, ডালিয়া লাকুরিয়া ও জেষ্ঠ সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে “পলাশী টু ওয়েস্টমিনস্টার” গণসমাবেশে দলে দলে সবাইকে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে “অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলন”(The United Bengal Movement) এর আহবায়ক হাসনাত আরিয়ান খান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলা ও বাঙালির দুর্দিন চলছে। সামনে মহাবিপদ। আশির দশকে বার্মায় জেনারেল ‘নে উইন’ যেভাবে আদমশুমারির নামে রোহিঙ্গাদের একটা অংশকে বিদেশি ঘোষণা করে নিপীড়ন করে বাংলাদেশে পুশ ইন করেছিলো এবং সর্বশেষ বার্মার শাসকরা যেভাবে রোহিঙ্গাদের বড় একটা অংশকে বাঙালি বলে মেরেকেটে বাংলাদেশে পুশ ইন করেছে বা পালিয়ে আসতে বাধ্য করছে; ঠিক সেভাবে ভারতের দখলে থাকা বাঙালি অধ্যুষিত প্রদেশগুলো থেকে বাঙালিদের তাড়াতে নরেন্দ্র মোদি সরকার জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এনআরসি) প্রণয়নের ঘোষণা দিয়েছে। মোদি সরকারও একই রকম কৌশল অবলম্বন করে নাগরিকপঞ্জির আড়ালে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী মানুষের নাগরিকত্ব বাতিল করার চক্রান্ত করছে। ইতোমধ্যে আসামে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করে নতুন করে নাগরিকপঞ্জি তৈরী করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সেখানে ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন বাঙালিকে নাগরিকত্বহীন করা হয়েছে। তাঁদের পাসপোর্ট, আধার কার্ড, রেশন কার্ড, জমানো টাকা, বাড়ি-ঘর, জমির দলিল সবই কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এই ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন নাগরিকত্বহীন মানুষ বর্তমানে ডিটেনশন ক্যাম্পে খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছে।
বাংলার বিরাট ভূখণ্ডের ভূমিপুত্ররা নিজ ভূখণ্ডে একাধিকবার গণহত্যার শিকার হয়েছে, এথনিক ক্লিনজিংয়ের শিকার হয়েছে আর এখন এনআরসি’র জাঁতাকলে মরছে। আসাম থেকে ৪০ লাখ বাঙালিকে তারা বের করার পরিকল্পনা করছে। আন্তঃরাষ্ট্রীয় হিন্দু পরিষদ ও রাষ্ট্রীয় বজরং দল বাংলাদেশি মুক্ত ভারতের কথা উল্লেখ করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উড়িষ্যা ও আন্দামানেও এই বিল আনার তোড়জোড় চলছে। এমনকি বাংলাদেশের স্বাধীন অংশটাকেও টুকরো করার অবিরাম ষড়যন্ত্র চলছে। দেশের পার্বত্য অঞ্চলকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা তারা করছে। পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি বাহিনী তারাই তৈরী করেছে। কেএনএফকে তারাই অস্ত্র ও সামরিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। কুকি-চিন, গারো ও চাকমাদের তারা বাঙালিদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত উস্কে দিচ্ছে। তাদের স্পষ্ট লক্ষ্য এবং শিকার যে বাঙালি জনগোষ্ঠী তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
ভারতে রীতিমতো ‘বাঙালি’ এবং ‘বাংলাদেশি’ শব্দ দুটো প্রায় ভয়ংকর অপমানজনক শব্দে পরিণত হয়েছে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা কর্ণাটকের বেলগাঁওয়ে এক নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে বলেছেন,‘বাংলাদেশ থেকে মানুষ আসামে আসেন। এটা আসামের সভ্যতা ও সংস্কৃতির জন্য একটি হুমকি।’ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলাদেশিদের উইপোকার সাথে তুলনা করে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ থেকে এক কোটি লোক আসামে গিয়ে অবৈধভাবে বাস করছে’।
কী আজব ব্যাপার! ভারতে কাজ নাই দেখে যেখানে বাংলাদেশে প্রায় ২৬ লাখ ভারতীয় অবৈধভাবে কাজ করছে, সেখানে বাংলাদেশের মানুষ কিভাবে আসামে গিয়ে কাজ করবে? আর আসামে গিয়ে বাস বা কাজ করলেই বা কী? বাঙালিরা এ অঞ্চলের ভূমিপুত্র। সমগ্র বাংলা বলয়ের মাটি বাঙালি/বাংলাদেশিদের পূর্বপুরুষদের মাটি। বাঙালিদের রয়েছে এখানে থাকার নিঃশর্ত অধিকার। কেন্দ্রীয় বাংলা বলতে আজ বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ বোঝালেও প্রান্তিক বাংলা—ত্রিপুরা, আসাম, আন্দামান, আরাকান, বিহার, থেকে উড়িষ্যা পর্যন্ত বিস্তৃত। পরবর্তীতে বিহার ভেঙ্গে ঝাড়খন্ড প্রদেশ ও উড়িষ্যা ভেঙ্গে ছত্তিসগড় প্রদেশ এবং আসাম ভেঙ্গে মেঘালয়, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড আর অরুণাচল প্রদেশ তৈরি করা হলেও এই পুরো অঞ্চলেই বাঙালি এবং তাদের কাছাকাছি নৃ-গোষ্ঠীর লোকেরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাস করেন। এ আমাদের নবাবি বাংলা, শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ’র বাংলা, সিরাজ-উদ-দৌলা’র বাংলা। এ আমাদের সুবা বাংলা, শাহ বাংলা, সেন বাংলা, পাল বাংলা, বাংলা সালতানাতের ভূমি। বাঙালির দেশ।
নৃ-বিজ্ঞান এবং জেনেটিক সায়েন্সের তথ্য-প্রমাণ মতে বাঙালি সনাতন, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ এবং ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা আমরা একই জনগোষ্ঠীর লোক, একই রক্তের একই পূর্বপুরুষের বংশধর। অনিবার্যভাবেই এ অঞ্চল আমাদের ঠিকানা। বস্তুত বাঙালি এবং বাংলা বলয় চেতনে-অবচেতনে তাদের কাছে আতঙ্কজনক এক প্রতিপক্ষ। কাজেই ভারত জুড়ে বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত, শতধা ছিন্নভিন্ন এই বাঙালিকে হীন করতে, কোণঠাসা করতে তারা মরিয়া। তারা চায় বাংলা বলয়ের ভূমির দখল, তারা চায় বাংলা বলয়ের মেরুদণ্ড বাঙালিদের উৎখাত করতে, তারা চায় বাংলা বলয়ের সংস্কৃতি এবং ইতিহাসকে নিশ্চিহ্ন করতে। তারা চায় বাংলাদেশকে বৃত্তবন্দী করতে। ফলে জরুরি হয়ে উঠেছে বাঙালি খেদানো। যে বাঙালির বাংলা বা বাংলা বলয়, সেখান থেকে বাঙালি খেদানোর চিন্তা করাও এক ঘোরতর নৈতিক অপরাধ।
ভারত রাষ্ট্রটির জন্ম ১৯৪৭ সালে। কিন্তু এই ভূমি তো ১৯৪৭ সালে রচিত হয়নি! এই মানুষ, মানুষের পূর্বপুরুষ, ভূমিপুত্ররা তো ১৯৪৭ সালেই এ অঞ্চলের বাসিন্দা হয়নি! বাঙালিরা যুগ যুগ ধরে আছে নিজভূমে, বাঙালিদেরই এলাকায়। একটি বিরাট জনগোষ্ঠীকে তার নিজভূমে পরবাসী বানানোর সিদ্ধান্ত ন্যায়ত কোনো আইন হতে পারে না। আসুন, আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করি। আমরা এর প্রতিবাদে বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, আরাকান, আন্দামান, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল, বিহার, ঝাড়খন্ড, উড়িষ্যা ও ছত্তিসগড় নিয়ে একটি বৃহত্তর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দাবি করি। আমরা আমাদের বাংলা বলয়ের সকল বাংলাভাষীর জন্য একটি অখন্ড বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দাবি করি। এখনই না করলে বার্মার মত ভারতও যদি বাঙালিদের বিদেশি বলে বাংলাদেশে পুশ ইন করে তখন পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব হবে?
স্বাধীন বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন ১৮ কোটি। কিছুদিন পর ৩০ কোটি হবে, ৪০ কোটি হবে। জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে আগামী ৫০ বছর পর বাংলাদেশের অর্ধেক জমি সমুদ্রের নিচে তলিয়ে যাবে। এরপর আবার ভারত যদি বাঙালিদের বাংলাদেশে পুশ ইন করে, তখন এই মানুষগুলো কোথায় থাকবে? কী খাবে? আসুন, আমরা সমস্বরে আওয়াজ তুলি। ঢাকা এ ব্যাপারে নীরব কেনো, শেখ হাসিনা সরকারকে প্রশ্ন করি। বাংলা ও বাঙালি জাতির একটি গৌরবময় অতীত ছিল। বাঙালি জাতির দূরদৃষ্টি, তীক্ষ্ণ মেধা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, অধ্যবসায়, দেশাত্মবোধ ইত্যাদি দেখে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক গোপালকৃষ্ণ গোখলে বলেছিলেন, ‘What Bengal Thinks Today India Thinks Tomorrow’। আসুন আমরা আমাদের সেই গৌরবময় অতীত ফিরিয়ে আনি। আসুন, আমরা ‘অখন্ড বাংলা’র প্রথম স্বাধীন নবাব শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ ও শেষ নবাব মির্জা মুহাম্মদ সিরাজ-উদ-দৌলা’র বাংলা ফিরিয়ে আনি।
আমরা বাঙালিরা একই ভাষায় কথা বলি, আমাদের সংস্কৃতি এক। আমাদের সাহিত্যে, আমাদের ভালোবাসায়, ভালো লাগায় কোন ফারাক নেই। আমাদের আকাশটাও সেই আগের মতোই আছে। চেষ্টা করলে আবার কেন মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারব না? অখন্ড বাংলাদেশ বা ঐক্যবদ্ধ বাংলা হওয়া উচিত প্রত্যেক বাঙালির স্বপ্ন। বাঙালির নিশ্চিত প্রতিরক্ষার জন্যই এই বিপ্লবটা আজ বড় বেশি প্রয়োজন। আসুন সমগ্র বাংলা অঞ্চলকে বাংলাদেশের সাথে অন্তর্ভূক্ত করে ‘অখন্ড বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে আন্দোলনে নামি। নিজে দেশের পাশাপাশি বিদেশেও জনমত গড়ে তুলি। আসুন, ওয়েস্টমিনস্টার এ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে আমরা সমস্বরে আওয়াজ তুলি। আসুন আমরা আবার দিল্লীর শাসকদের বিরুদ্ধে একসাথে লড়ি।