শনিবার, ১১ মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

ইবনে সিনায় ডাক্তার দেখাতে গিয়ে হয়রানির শিকার, অভিজ্ঞতার বর্ণনা



ডাক্তার দেখাতে সিলেটের ইবনে সিনায় সৈয়দ মুহিবুর রহমান মিছলু

অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। আর সঠিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ডাক্তারদের প্রাইভেট চেম্বার আর সরকারি হাসপাতেলর পাশাপাশি প্রাইভেট হাসপাতাল এবং ক্লিনিক গুলোর সৃষ্টি এমনটাই ভাবা ও স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবে এমনটা হলে ভালো হতো। আমাদের দেশে বিশেষ করে প্রধান কয়েকটি শহরে যে হারে ডাক্তারের চেম্বার আর নিত্যনতুন প্রাইভেট হাসপাতাল গড়ে উঠছে সেখানে আমাদের দেশের মানুষের বাহিরে চিকিৎসা সেবার জন্য যাবার কথা না। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশের মানুষকে অনেক স্বাভাবিক রোগ নিরাময়ের জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত তথা অন্যান্য দেশে যেতে হয়। কারণ সেখানের চিকিৎসা সেবা ভালো। অযথা রোগীকে হয়রানি করা হয় না। রোগীদের প্রতি তাদের দায়িত্ববোধ ও ব্যবহার বেশ ভালো। আর আমাদের দেশে চিকিৎসা সেবা পেতে গিয়ে রোগীদের হয়ারিন শিকার আর ডাক্তারদের টেস্ট বাণিজ্যের খবরাখবর তো আজকাল নিত্যই পত্রপত্রিকার শিরোনাম। এসব খবরে ভুক্তভোগী রোগীদের শত অভিযোগ নিত্য উঠে আসছে।

সম্প্রতি সিলেটের ইবনে সিনা হাসাপাতালে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে এমনই হয়রানির শিকার হয়েছেন সিলেট নগরীর উপশহরের বাসিন্দা সৈয়দ মুহিবুর রহমান মিছলু। ডাক্তার দেখাতে দিয়ে তাঁর এ তিক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা বালাগঞ্জ প্রতিদিনের সাথে শেয়ার করেন। নিচে ইবনে সিনা হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে তাঁর তিক্ত অভিজ্ঞতার সে বর্ণনা বালাগঞ্জ প্রতিদিনের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো। সৈয়দ মুহিবুর রহমান মিছলু তাঁর এ তিক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা এভাবে তুলে ধরেন –

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি অসুস্থ হয়ে ডাক্তার দেখাতে সিলেটের সোবহানীঘাটস্থ ইবনে সিনা হাসপাতালে ডাঃ মোঃ সাইফুল ইসলামের কাছে যাই, যথারীতি তাঁকে দেখাই। ডাক্তার কয়েকটি পরিক্ষা করতে দেন এবং শুধু আল্ট্রাসনোগ্রাম বাদে বাকি পরীক্ষাগুলো করাই। তখন আমাকে বলা হয় আল্ট্রাসনোগ্রাম আজ হবে না আগামী কাল বিকেলে আসবেন, কথামতো আমিও চলে যাই। পরদিন ২৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরের খাবার একটু দেরিতে খাওয়ায় টেস্ট করানো বাধাগ্রস্ত হয় তাই ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে ইবনে সিনা হাসপাতালের নির্দিষ্ট নাম্বারে যোগাযোগ করলে আল্ট্রাসনোগ্রাম এখন হবে মর্মে উনারা জানান।

তখন কোন কিছু না খেয়ে খালিপেটে হাসপাতালে আবার যাই। যাওয়ার পর ইবনে সিনার নীচতলা হতে আমাকে দ্বিতীয় তলায় পাঠানো হয়। দ্বিতীয় তলার রিসিপশনে যাওয়ার পর আমার প্রেস্কিপশন ফাইল হাতে নিয়ে টেষ্টের মানি রিসিটের ওপরে লিখে দিয়ে বলেন যান রাত ঠিক ০৮:০০ ঘটিকায় আসবেন এবং টেবিলে ফাইল উঁচিয়ে লেখা দেখিয়ে বলেন ‘দেখছেন এখানে কি লেখা? আল্ট্রাসনোগ্রামকারী ডাক্তারের নাম আর সময়’। ঠিক ঐ টাইমে খালিপেটে আসবেন। আমি বললাম ভাই ফোনে কথা হলো, হাসপাতাল থেকে জানানো হলো আসেন, আর এখন বলছেন রাতে আসতে! যদি আমাকে না আসতে বলা হতো তাহলে তো আমি কষ্ট করাতে আসতাম না! অতঃপর নিরুপায় হয়ে চলে যাই।

দিনে আহার না করে সন্ধ্যায় আবার ইবনে সিনা হাসপাতালে যাই রাত ০৮:০০ ঘটিকায়। দ্বিতীয় তলার রিসিপশন থেকে আল্ট্রাসনোগ্রামের ২০২নং রুমে পাঠানো হলো ফাইল জমা দিয়ে টেষ্ট করানোর জন্য। সেখানে  বলা হলো এখন হবে না ডাক্তার নাই। এখানে যে দুইজনের নাম লেখা তাঁরা একজন ছুটিতে আর একজন আসবেন কিনা ঠিক নাই।

আবার রিসিপশনে ফেরত গিয়ে জিজ্ঞেস করলে দায়িত্বরত ব্যক্তি বললেন ডাক্তার হসপিটালে আছেন তবে এখানে আসতে ১০:০০টা বাজতে পারে। তার পর গেলাম কাস্টমার সার্ভিস রুমে। সেখানে ডিউটিরত নুরুল হক নামের এক ব্যক্তিকে বিস্তারিত জানানোর পর উনি নিয়ে গেলেন নীচতলায়। সামছুল হক নামের এক লোকের হাতে ফাইল দিয়ে বললেন উনি অনেক হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন বিষয়টি একটু দেখেন তো কি করা যায়। আমি উনার পরিচয় জানতে চাইলে উনি পরিচয় দিলেন আমি ম্যানেজার। তারপর উনি বিস্তারিত শুনে নিয়ে গেলেন দ্বিতীয় তলায় আল্ট্রাসনোগ্রাম রুমে। রিসিপশনিষ্ট কে ফাইল দিয়ে বললেন উনাকে সাহায্য করিও ডাক্তার আসলে তাড়াতাড়ি দিও। তারপর তিনি চলে গেলেন।

অবশেষে আল্ট্রাসনোগ্রাম সম্পন্ন হলো। এবার রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে হাজির হলাম, কিন্তু চেম্বারে ডাক্তার নেই চলে গেছেন! আবার গেলাম নীচতলায় কাষ্টমার কেয়ারে। অনেকক্ষণ বসার পর দায়িত্বরত লোক (নুরুল হক) আসলেন। বললাম ডাঃ মোঃ সাইফুল ইসলাম চেম্বারে নেই রিপোর্ট দেখাতে পারিনি। তখন নুরুল হক ডাক্তারকে ফোন দিলেন। ফোনে ডাক্তারের সাথে নুরুল হকের কথোপকথনে অপরপ্রান্তে ডাক্তারের কথা না শুনা গেলেও নুরুল হক ডাক্তারকে যা বললেন তা এমনটা – স্যার উনি চলে যাচ্ছেন, স্যার কোথায় মিলবে? রিপোর্ট দিয়ে রুগী বাসায় পাঠাবো? তাহলে কালকে? বিকালে? পরশু শুক্রবারে?…শনিবারে! এমন কিছু কথা।

ফোন রেখে নুরুল হক বললেন  ডাঃ ঢাকায় যাবেন তাই আপনি আগামী শনিবারে (১ মার্চ) সন্ধ্যা পরে আসবেন। তখন রিপোর্ট দেখিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারবেন। তবে রিপোর্টে জটিল কোন রোগ ধরা পড়ছে কি না তার জন্য এখানে কর্তব্যরত একজনকে দেখিয়ে বললেন উনাকে দেখান। উনি দেখে বললেন আপনার কোন সমস্যা নেই। ডাক্তার আসলে দেখা করে উপযুক্ত পরামর্শ নিয়ে নিবেন।

কি আর করা, ডাক্তারে গিয়ে কোন অপরাধ করলাম কি না ভেবে পেলাম না। ডাক্তারের কাছে আসছিলাম রোগ সারাতে। এখন ঔষধ পাওয়ার আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ঝক্কি-ঝামেলায় আরো রোগী হয়ে ফিরলাম বাসায়।

সৈয়দ মুহিবুর রহমান মিছলু এক পর্যায়ে বলেন, ডাক্তার দেখাতে এসে ইবনে সিনায় এমন নিরব নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগীর সংখ্যা কম নয়। তাই তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সুদৃষ্টি কামনা করেন রোগীদের সঠিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ইবনে সিনায় যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!