যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশীদের মধ্যে মিউজিক, আর্টস এবং মিডিয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাঁদের মেধা, যোগ্যতা ও কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাঁদের কাজের স্বীকৃতি ও সম্মাননা জানাতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘ইস্টউড অ্যাওয়ার্ড’। এটাকে অনেকে প্রবাসে বাঙালীদের অস্কার হিসাবেও আখ্যায়িত করে থাকেন। গত ২৪ জুন অনুষ্ঠিত হয় এর দ্বিতীয় অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠান। এতে বিশেষ ক্যাটাগরীতে অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন প্রবীণ সাংবাদিক ও দর্পণ সম্পাদক মোঃ রহমত আলী। তিনি সাংবাদিকতার পাশাপাশি একজন কলাম লেখক হিসাবেও বেশ সুখ্যাতি অর্জন করেছেন।
জনাব রহমত আলী দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ ইংরেজী থেকে সাংবাদিকতার সাথে জড়িত। সিলেটের প্রাচীনতম তৎকালীন সাপ্তাহিক যুগভেরী পত্রিকায় বিশ্বনাথ প্রতিনিধি হিসাবে লেখালেখি শুরু করেন। এরপর সিলেটের বিভিন্ন পত্রিকায় খন্ডকালীন কাজ করেন। একসময় তিনি বিশ্বনাথ থেকে ‘বিশ্বনাথ দর্পণ’ মাসিক হিসাবে প্রকাশ করেন। এটি ছিল বিশ্বনাথের প্রথম সাময়িকী। ১৯৮৩ সালে বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৪ সালে তিনি যুক্তরাজ্যে চলে আসার পর বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক সুরমা পত্রিকার নিউজ এডিটর হিসাবে প্রায় ছয় বছর দায়িত্ব পালন করেন। এরপর আবার ফিরে যান আপন ভুবনে। প্রকাশ করেন নিজস্ব সম্পাদনায় প্রথমে পাক্ষিক ও পরে মাসিক ‘দর্পণ’ ম্যাগাজিন, যা এখনও অব্যাহত আছে।
১৯৯৬ সালে যুক্তরাজ্যের সাংবাদিকদের নিয়ে ‘বাংলাদেশ জার্নালিস্টস’ এসোসিয়েশন গঠিত হলে তিনি এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি পরপর দুইবার এর সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।
তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা’ নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ‘ সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা’ ও কানাডা থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক দেশে বিদেশে’ এর যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করেন।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি একজন কলাম লেখক হিসাবেও পাঠক মহলে বিশেষভাব পরিচিত। তিনি বিলেতের বিভিন্ন পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে সমসাময়িক বিষয়ের উপর কলাম লিখে থাকেন। তার কলামগুলির নাম হচ্ছে, ‘গ্রাম বাংলায় লন্ডন’, সমাজ দর্পণ, সমাজ চিন্তা প্রভৃতি। আর যে সমস্ত পত্রিকায় তা প্রকাশিত হয় সেগুলি হচ্ছে, সাপ্তাহিক সুরমা, সাপ্তাহিক জনমত, সাপ্তাহিক বাংলা পোস্ট, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ, সাপ্তাহিক ইউরোবাংলা, সাপ্তাহিক বাংলা টাইমস ও সাপ্তাহিক দেশ প্রভৃতি। তিনি তার নিজস্ব সম্পাদনায় দু’টি বইও রচনা করেছেন। এগুলি হচ্ছে, বহির্বিশ্বে আলোকিত বাংলাদেশী ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা।
এদিকে দেশে সাংবাদিক পরিবারের নিঃস্ব, অসহায় ও এতিম সন্তানদের সহযোগিতার লক্ষ্যে তিনি গঠন করেছেন চ্যারেটি সংগঠন ‘আর এ ফাউন্ডেশন’। এর মাধ্যমে ইতোমধ্যেই সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত সাগর-রুনীর এতিম সন্তান মাহির সরওয়ার মেঘ, সিলেটের অকাল প্রয়াত সাংবাদিক আব্দুর রহমান, ফতেহ ওসমানী ও হারিছ মোহাম্মদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে।
এবার অন্যান্য যারা ইস্টউড অ্যাওয়ার্ডস লাভ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন, প্রিন্ট মিডিয়ার বেস্ট জার্নালিস্ট হিসেবে সাপ্তাহিক দেশ সম্পাদক তাইসির মাহমুদ, বেস্ট টিভি রিপোর্টার ক্যাটাগরিতে এওয়ার্ড পান চ্যানেল এস’র চীফ রিপোর্টার ও লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের জেনারেল সেক্রেটারী মুহাম্মদ জুবায়ের। বেস্ট ফিমেইল নিউজ প্রেজেন্টার ক্যাটাগরিতে অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন চ্যানেল এসে’র নিউজ প্রেজেন্টার ডাক্তার নাহিদ অদিতি এবং ওন-লাইন ক্যাটাগরিতে এওয়ার্ড লাভ করেন। সানরাইজ টুডের উপস্থাপক এনাম চৌধুরী
এবার টিভি এডভার্টে মডেলিংয়ের জন্যে মিরাজ খান রাজ ও জেরিন স্মৃতি একাধিক ক্যাটাগরিতে এওয়ার্ড লাভ করেন। এছাড়া প্রবীন সঙ্গীত শিল্পী হিমাংশু গোস্বামি ও প্রবীন কৌতুক অভিনেতা তসলিম আহমদসহ শিশু শিল্পীরাও অভিনয় ও সঙ্গীতের জন্য অ্যাওয়ার্ড পান।
অনুষ্ঠানে শিল্পী প্রপা আনোয়ার মিউজিক কম্পোজিশন এবং চ্যানেল এস’র সিনিয়র নিউজ প্রেজেন্টার ডাক্তার জাকি রেজোয়ানা আনোয়ার গীতিকার হিসা বে ও চ্যানেল এস এর আমার গাও এর উপস্থাপক শায়েক সওদাগর অ্যাওয়ার্ড পান।