শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

বিদেশিরা যে শর্তে পাবেন সৌদি আরবের নাগরিকত্ব



সৌদি পাসপোর্ট। ছবি: ইন্টারনেট।

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব বিদেশিদের নাগরিকত্ব দিতে যাচ্ছে। সৌদি গণমাধ্যমে সৌদি গেজেটের খবরে বলা হয়েছে, আইন, চিকিৎসা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি, খেলাধুলা ও প্রযুক্তিবিদ্যায় বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন ও মেধাবীদের নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় সৌদি আরবের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। গত বৃহস্পতিবার (১১ই নভেম্বর) এক রাজকীয় ফরমানে এই অনুমোদন দেন বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ।

এদিকে নাগরিকত্ব লাভের এই সুযোগ আসার প্রথম দিনেই নাগরিকত্ব লাভ করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মুখতার আলম শিকদার। তিনি মক্কায় কাবাঘরের গিলাফ প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠানে দুই দশক ধরে প্রধান ক্যালিগ্রাফার হিসেবে কাজ করছেন। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন থেকে তা জানা গেছে। বিবিসি বাংলার এই প্রতিবেদনে সৌদি নাগরিকত্ব পাবার নিয়ম ও শর্ত ও তুলে ধরা হয়েছে। বালাগঞ্জ প্রতিদিনের পাঠকদরে জন্য তা হুবহু তুলে ধরা হলো:

নিয়ম ও শর্ত:

আবেদনকারী বা তার আইনি প্রতিনিধি সৌদি আরবের সিভিল অ্যাফেয়ার্স বিভাগ বা দেশটির প্রতিনিধির কাছে আবেদন করতে পারবেন।

আবেদনগুলো গ্রহণ করা, পর্যালোচনা করা এবং নিবন্ধন করার সব দায়িত্ব পালন করে দেশটির সিভিল অ্যাফেয়ার্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এজেন্সি৷

তিন সদস্যের একটি কমিটি যেসব তথ্য যাচাই করবে:

  • আবেদনকারীকে অবশ্যই বৈধ উপায়ে দেশটিতে প্রবেশ করতে হবে এবং একটি বৈধ পাসপোর্ট ধারণ করতে হবে যার মাধ্যমে তিনি কোন বিধিনিষেধ বা শর্ত ছাড়াই তার নিজ দেশে ফিরতে পারবেন।
  • নিজ খরচে দেশটির বসবাসের অনুমতি বা রেসিডেন্সি পারমিটের আওতায় অন্তত ১০ বছর সৌদি আরবে থাকতে হবে।
  • দেশের প্রয়োজনীয় একটি পেশায় কাজ করতে হবে।

আবেদনকারীর তথ্য দেয়ার পর কমিটি তিনটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে আবেদনটি মূল্যায়ন করবেন। এখানে মোট ৩৩ পয়েন্ট ভাগ করা আছে।

আবেদনকারী অন্তত দশ বছর সৌদিতে অবস্থান করলে ১০ পয়েন্ট স্কোর হবে।

আবেদনকারী যদি দেশটির প্রয়োজন সাপেক্ষে বিজ্ঞানের কোন শাখায় পারদর্শী হন তাহলে তিনি এখান থেকে সবোর্চ্চ ১৩ পয়েন্ট পেতে পারেন। (শুধুমাত্র একটা বেছে নিতে হবে।)

  • মেডিসিন বা ইঞ্জিনিয়ারিং পেশায় ডক্টরেট ডিগ্রি থাকলে স্কোর হবে ১৩ পয়েন্ট।
  • বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায় ডক্টরেট ডিগ্রি- দশ পয়েন্ট।
  • মাস্টার্স ডিগ্রি- আট পয়েন্ট।
  • ব্যাচেলর ডিগ্রি- পাঁচ পয়েন্ট।

পারিবারিক বন্ধন, অর্থাৎ আবেদনকারীর সৌদিতে কোন আত্মীয় রয়েছেন কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোচ্চ ১০ পয়েন্ট পাওয়া যাবে।

  • বাবা সৌদি নাগরিক হলে তিন পয়েন্ট।
  • বাবা মা দুজনেই সৌদি নাগরিক হলে তিন পয়েন্ট।
  • শুধু মা সৌদি নাগরিক হলে দুই পয়েন্ট।
  • যদি স্ত্রী এবং শ্বশুর সৌদি নাগরিক হয়, তাহলে তিন পয়েন্ট।
  • যদি শুধু স্ত্রী সৌদি নাগরিক হন তাহলে এক পয়েন্ট।
  • আবেদনকারী যদি দুইজনের বেশি সৌদি সন্তান ও ভাই থাকলে তাহলে দুই পয়েন্ট বরাদ্দ হয়। তবে দুইয়ের বেশি না থাকলে এক পয়েন্ট বরাদ্দ হয়।

যদি আবেদনকারী ন্যূনতম স্কোর হিসাবে ২৩ পয়েন্ট পান, কমিটি আবেদনটি আরও পর্যালোচনার সুপারিশ করে।

এর মধ্যে আবেদন জমা দেয়ার বাকি প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করা হয় এবং চূড়ান্ত সুপারিশ জারি করার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়া হয়।

এরপর প্রয়োজনীয় সনদ, স্বাস্থ্য রিপোর্ট, সম্পদের হিসাব, ধর্ম/রাজনৈতিক মতাদর্শের ব্যাখ্যাসহ এই আবেদনপত্র জমা দিতে হবে।

বৈবাহিক ও জন্মসূত্রে

কোন ব্যক্তি সৌদি নাগরিকত্ব পাওয়ার পর, এক বছরের মধ্যে তার স্ত্রীকেও সৌদি নাগরিকত্ব নিতে হবে। এর পরে আবেদন গ্রহণ করা হবে না।

তবে ওই ব্যক্তি চাইলে স্ত্রীর নাগরিকত্বের জন্য পরে আলাদা দরখাস্ত করতে পারবেন।

এক্ষেত্রে তাদের সন্তান যদি সৌদি আরবে বসবাস করেন তাহলে ওই সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার এক বছরের মধ্যেই তাকে নাগরিকত্বের আবেদন জানাতে হবে। তার আগ পর্যন্ত তিনি সৌদি আরবে থাকার সুযোগ পাবেন।

তবে কোন বিদেশি নারী যদি সৌদি পুরুষকে বিয়ে করেন তাহলে তিনি তার স্বামীর দেশের নাগরিকত্ব গ্রহন করতে পারবেন।

অন্যদিকে সৌদি নারী কোন ভিনদেশি পুরুষকে বিয়ে করলে তিনি চাইলে তার সৌদি নাগরিকত্ব নিয়েই থাকতে পারবেন।

তিনি যদি তার স্বামীর দেশের নাগরিকত্ব গ্রহন করেন তাহলে স্বামীর মৃত্যুর পর বা বিচ্ছেদের পর তিনি চাইলে তার সৌদি নাগরিকত্ব ফিরে পেতে পারেন।

এই প্রক্রিয়ায় কেউ যদি ভুয়া কাগজপত্র বা মিথ্যা তথ্যের আশ্রয় নেয় তাহলে তাদের সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড ও ১০০০ সৌদি রিয়াল জরিমানা করার বিধান রয়েছে।

একজন সৌদি পুরুষের সাথে যদি বিদেশি নারীর বিয়ে সম্পন্ন হয়। এবং সেই নারী যদি স্বেচ্ছায় সৌদি নাগরিকত্ব নিতে চান তবে ওই নারীকে কয়েকটি শর্তসাপেক্ষে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়।

  • যদি তাদের বিয়ের নথিপত্র থাকে।
  • যদি তিনি তার প্রকৃত জাতীয়তা ত্যাগের ঘোষণা দেন।
  • বিদেশি নাগরিককে বিয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা মানা।
  • আবেদনকারীর কোন অপরাধমূলক কাজের রেকর্ড না থাকা।
  • আবেদনকারীকে অবশ্যই দেশটিতে বসবাস করতে হবে।
  • বিয়ে অন্তত পাঁচ বছর স্থায়ী হতে হবে।

যদি বিয়ের পর চার বছর অতিবাহিত হয়ে যায় এবং কোন সন্তান না হয়, তাহলে নীচের পয়েন্টগুলো থেকে স্কোর করা যেতে পারে।

  • যদি তার কোনও ভাই বা বোন সৌদি নাগরিক হন।
  • যদি তিনি সৌদি আরবেই জন্মগ্রহণ করেন।
  • তার স্বামী যদি আত্মীয়দের একজন হয়।
  • স্বামী যদি একজন পেশাদার যেমন ডাক্তার বা প্রকৌশলী হন।
  • যদি তার এবং তার স্বামীর মধ্যে বয়সের পার্থক্য পাঁচ বছরের বেশি না হয়।

নাগরিকত্ব পাওয়ার আগেই যদি বিদেশি নারী বিধবা হয়ে যান, তারপরও তার নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ থাকবে বলা হচ্ছে নতুন সৌদি নাগরিকত্ব আইনে।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!