শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আব্দুর রশীদ লুলু

মাছ কেনার আগে লক্ষ্য করা



মাছ ভোজন বিলাসী বাঙালীর প্রিয় খাদ্য হলেও অনেক ক্ষেত্রেই এখন তা স্বাস্থ্যের জন্য হুমকী স্বরূপ। সে জন্যই এখন আর আগের মতো হাট-বাজার থেকে চোখ বুজে হুট করে মাছ কেনা ঠিক না। বরং গাঁটের পয়সা খরচ করে চড়া দামে মাছ কেনার আগে এখন দরকার চার চোখের অনুসন্ধিৎসা। কষ্টার্জিত পয়সাও যাবে, স্বাস্থ্যও যাবে এটা তো মেনে নেয়া যায় না।

কি লক্ষ্য করবেনঃ
কষ্টার্জিত পয়সায় কেনা মাছ যাতে নিজের এবং পরিবারের অন্যান্যদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর না হয় সেজন্য লক্ষ্য করতে হবে মাছে ফরমালিন দেয়া কিনা। ফরমালিন দেয়া মাছে কোনো অবস্থাতেই মাছি বসে না। যদিও মাছের পানি ও আঁশটে পচা গন্ধ মাছিদের খুবই প্রিয়। কিন্তু বেচারা মাছিরা ফরমালিনের গন্ধে প্রাণ নিয়ে পালায়। কেননা, তাদের ঘ্রাণ শক্তি অত্যন্ত প্রখর। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ফরমালিনযুক্ত মাছ চেনার প্রাথমিক লক্ষণ সম্পর্কে যে ধারণা দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে-
০১. ফরমালিন দেয়া মাছের চোখ ভেতরের দিকে ঢোকানো থাকবে এবং চোখ থাকবে ফ্যাকাসে;
০২. মাছের শরীরের আঁশের স্বাভাবিক উজ্জ্বল থাকবে না;
০৩. ফুলকা হবে কালচে বর্ণের; এবং
০৪. মাছের শরীর অপেক্ষাকৃত শুষ্ক অবস্থায় থাকবে অর্থাৎ মাছের শরীর আঁশটে ও পিচ্ছিল থাকবে না।
উল্লেখ্য, ফরমালিন গলাধ:করণ মানুষ (এবং অন্যান্য প্রাণী) এর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। মানুষের লাশ এবং বিশেষ প্রয়োজনে অন্যান্য প্রাণীর দেহ সংরক্ষণের জন্য সাধারণত: ফরমালিন ব্যবহার করা হয়। ফরমালিনযুক্ত মাছ খাওয়ার ফলে কিডনী বিকল, পাকস্থলী, ফুসফুস ও শ্বাসনালীর ক্যান্সারসহ বহুবিধ অসুখ-বিসুখের আশঙ্কা রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। অতএব সু-স্বাস্থ্যের জন্য বাজার থেকে মাছ কেনার আগে উপরে উল্লেখিত বিষয় গুলো লক্ষ্য করুন।

বাজার থেকে কখন মাছ কিনবেন
নিম্নোক্ত বিষয়গুলো লক্ষ্য করার পর সামর্থ্য অনুযায়ী বাজার থেকে মাছ কেনা যায়-
০১. মাছের বাজারে মাছির আনাগোনা বিদ্যমান;
০২. মাছের চোখ স্বাভাবিক ও লালচে বর্ণের;
০৩. মাছের ফুলকা লালচে বর্ণের; এবং
০৪. মাছের শরীর দেখতে উজ্জ্বল এবং ভেজা-আঠালো।
উপরে বর্ণিত অবস্থাগুলো বাজারের মাছে বিদ্যমান থাকলে আশা করা যায়, মাছ ফরমালিনমুক্ত।

পাদটীকাঃ
এক সময় ফরমালিন ও ফরমালিনযুক্ত মাছ সম্পর্কে ধারণা না থাকায় বাজার থেকে মাছ কিনে আমি নিজে একাধিক বার ভূগেছি। আমি একজন বয়স্ক পুরুষ মানুষ হয়ে যখন ভূগান্তির শিকার হয়েছি, তখন একবার নারী ও শিশুদের কথা ভাবুন তো। সর্বোপরি, গর্ভবর্তী নারী হলে তো অবস্থা আরো ভয়াবহ হওয়ারই কথা। নেড়া যাতে বার বার বেল তলায় না যায়, সে জন্য ব্যস্ত সময়ে আমার এই লেখা। বলা বাহুল্য, অনেকেই বলেন, মাছ যাতে না পচে এবং ধীরে-সুস্থে চড়া দামে বিক্রি করা যায়, সেজন্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা মাছে ফরমালিন মেশান। ব্যবসায়ীদের অনেকেই হয়তো জানেন না, এর দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতিকর দিকটা। তাদের নিয়ে স্থানে স্থানে একটা সচেতনতামূলক সভা করলে হয় না! কত ভাবেই তো দেশের টাকা গচ্চা যায়।

লেখক: সম্পাদক- আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা) এবং প্রতিষ্ঠাতা: আনোয়ারা ফাউন্ডেশন, সিলেট।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!