গভীর দোআঁশ/বেলে দোআঁশ মাটি কুল চাষাবাদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। কুল সারা বছরই লাগানো যায়। তবে বর্ষা মৌসুম কুল গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়। কুলের চাষাবাদের জন্য জমি ভালোভাবে চাষ দেয়া প্রয়োজন। চারা ৪ মিটার দূরে দূরে লাগাতে হয়। শুষ্ক ও উষ্ণ জলবায়ু কুল চাষাবাদের জন্য উপযোগী। বাণিজ্যিকভাবে এর চাষাবাদের জন্য উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি নির্বাচন করা উচিৎ। এ ছাড়া বাড়ির আশে-পাশে, পুকুর পাড়ে গর্ত করে কুলের চাষাবাদ করা যেতে পারে। উল্লেখ্য, স্বাদ ও পুষ্টিমানে কুল একটি উৎকৃষ্ট ফল। সে প্রেক্ষিতে কুলের বিশেষ করে বাউকুলের চাহিদা দেশে-বিদেশে প্রচুর।
গোল আলু চাষাবাদের জন্য ১৫-২০০ সে. তাপমাত্রা সবচেয়ে ভালো। বিশেষজ্ঞরা বলেন ২০০ সে. এর ওপর তাপমাত্রা যত বাড়তে থাকে আলু ফলন তত কমতে থাকে। ৫-৬.৫ অম্লমানযুক্ত বেলে দোআঁশ ও দোআঁশ মাটি আলু চাষাবাদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। আলু চাষাবাদের জমি ভালো করে ৪/৫টি চাষ ও মই দিতে হয়। আলুর বীজ লাগানোর উপযুক্ত সময় মধ্য কার্তিক-মধ্য অগ্রহায়ণ পর্যন্ত। উল্লেখ্য, উপযুক্ত পরিচর্যায় জাতভেদে আলু হেক্টর প্রতি ৩০-৪০ টন পর্যন্ত হয়ে থাকে। যা অবশ্যই লাভজনক।
দেশের একটি জনপ্রিয় সবজি বেগুন। এ সবজি প্রায় সব ধরণের মাটিতে জন্মে। তবে দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটিতে বেগুনের চাষাবাদ ভালো। দেশের রবি মৌসুমের আবহাওয়া বেগুনের জন্য খুবই উপযোগী। খরিফ মৌসুমে শিংনাথ বেগুন মোটামুটি ভালো জন্মে। শীতকালীন চাষাবাদের জন্য বীজ মধ্য শ্রাবণ-আশ্বিন মাস পর্যন্ত এবং বর্ষাকালীন চাষাবাদের জন্য মধ্য পৌষ-মধ্য চৈত্র পর্যন্ত বীজ বপণ করা যায়। সাধারণত হেক্টর প্রতি ১০০-১৫০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। বেগুনের ভালো ফলনের জন্য জমি গভীরভাবে চাষ দেয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চারার বয়স ৩৫ দিন হলে কিংবা প্রতিটি চারার ৫/৬টি পাতা গজালে মূল জমিতে/পরিকল্পিত স্থানে রোপণ উপযোগী হয়। বীজতলা থেকে চারা কাঠি কিংবা অন্য কিছু দিয়ে এমনভাবে তুলতে হবে যাতে চারার শিকড় ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
দেশে চাষাবাদের উপযোগী টমেটোর অনেকগুলো জাত রয়েছে। যেমন – বারি টমেটো-১ (মানিক), বারি টমেটো-২ (রতন), বারি টমেটো-৩, বারি টমেটো-৪, বারি টমেটো-৫, বিনা টমেটো-২, বিনা টমেটো-৩, বিনা টমেটো-৪, বিনা টমেটো-৫, রুমা, অমর বাংলা প্রভৃতি। হাইব্রিড জাতের মধ্যে আছে হীরা-১০১, হীরা-১০৪, হীরা-১০৫, হীরা-১০৬, হীরা-১০৭, বারি হাইব্রিড টমেটো-৫, বারি হাইব্রিড টমেটো-৬, স্বর্ণা-১, স্বর্ণা-২, স্বর্ণা-৩, নিউ উদয়ন, টিপু সুলতান, সোনালী লতা, ম্যারাডোনা, রূপসী, জিনিয়াস, সুন্দরী, মার্টিনা, সেরেস, এস্ট্রা, নোভা, জ্যোতি, মহুয়া, নয়নতারা প্রভৃতি।
দেশের আবহাওয়া সারা বছরই ঢেঁড়স চাষাবাদের উপযোগী। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে খরিফ মৌসুমে ঢেড়সের চাষাবাদ ব্যাপক আকারে হয়ে থাকে। ফাল্গুন-বৈশাখ মাস ঢেড়সের বীজ বপণের উপযুক্ত সময়। সাধারণত হেক্টর প্রতি ৪-৫ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়। ঢেঁড়সের চাষাবাদের জন্য ৪/৫ বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ভালোভাবে ঝুরঝুরে করে নিতে হয়। একই সাথে লক্ষ্য রাখতে হয়, জমি যেন গভীরভাবে চাষ দেয়া হয়। ভালো ফলন ও পরিচর্যার সুবিধার্থে ঢেঁড়সের বীজ সারিতে বুনতে হয়। এ ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৫০ সেমি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব হবে ৪০ সেমি। বপণের পূর্বে বীজ ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে অংকুরোদগম সহজ হয়। এ ছাড়া প্রতি গর্তে দুইটি করে বীজ দেয়া ভালো। দুইটিই গজালে ৪/৫ পাতা অবস্থায় সুস্থ-সবল চারা রেখে অন্যটি তুলে ফেলে দিতে হবে। উল্লেখ্য, গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য ঢেঁড়স (এবং অন্যান্য শাক-সবজি) এর জমিকে অবশ্যই সব সময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
দেশে চাষাবাদ উপযোগী পেঁয়াজের অনেকগুলো জাত রয়েছে। যেমন- তাহেরপুরী, বারি পেঁয়াজ-১, বারি পেঁয়াজ-২, বারি পেঁয়াজ-৩, বারি পেঁয়াজ-৪, বারি পেঁয়াজ-৫, ফরিদপুরী, ঝিটকা, সালতা, গোল্ডেন বল, ডায়মন্ড ইত্যাদি। হ্ডাব্রিড জাতের মধ্যে আছে- হোয়াইট অনিয়ন, বিএসবিডি-৭০২, রুচি ইত্যাদি। উল্লেখ্য, বারি পেঁয়াজ-২ এবং বারি পেঁয়াজ-৩ খরিফ মৌসুমে চাষাবাদ উপযোগী। বারি পেঁয়াজ-১ এর কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো, গাছ উচ্চতায় ৫০-৬০ সেমি হয়। জাতটির কন্দের আকার চেপ্টা ও গোলাকার প্রকৃতির, অধিক ঝাঝযুক্ত, প্রতি গাছে ১০/১২টি পাতা হয় এবং প্রতিটি কন্দের ওজন প্রায় ৩০-৪০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। উপযুক্ত পরিচর্যায় এ পেঁয়াজের হেক্টর প্রতি ফলন ১২-১৬ টন পর্যন্ত হয়।
করলার চাষাবাদের জন্য উষ্ণ ও আদ্র জলবায়ু ভালো। উপযুক্ত জাত নির্বাচন করে লাগাতে পারলে প্রায় সারা বছর করলার চাষাবাদ করা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের আবহাওয়া করলা চাষাবাদের জন্য খুবই উপযোগী। তবে জলাবদ্ধতা করলার চাষাবাদের জন্য ক্ষতিকর। এ ছাড়া অত্যধিক বৃষ্টি এর ফল ধরা বিঘ্নিত করে। করলার বীজ লাগানোর উপযুক্ত সময় মধ্য মাঘ-মধ্য চৈত্র পর্যন্ত। সাধারণত হেক্টর প্রতি ৩-৪ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। উল্লেখ্য, করলার বীজের ত্বক শক্ত ও পুরু। বীজ অংকুরোদগমের সুবিধার্থে বপণের পূর্বে বীজ ৪৮ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে নিতে হয়। তারপর পানি ফেলে দিয়ে ভেজা কাপড় দিয়ে বীজের আবরণ না ফাটা পর্যন্ত বীজ ঢেকে রাখা ভালো। আবরণ ফাটার পর বীজ মাদায়/নির্দিষ্ট জায়গায় রোপণ করলে সহজেই চারা গজিয়ে থাকে। সারা দেশে সহজেই করলার চাষাবাদ সম্ভব।
লেখক: সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী অনিয়মিত প্রকাশনা)।